ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

অস্ট্রেলিয়া

সিডনিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫০ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
সিডনিতে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: অস্ট্রেলিয়ার সিডনি শহরে মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করা হয়েছে। রোববার (১৯ জুন) সন্ধ্যায় সিডনির লাকেম্বা লাইব্রেরি হলে ‘মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে বক্তরা এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

আল-নোমান শামীমের সঞ্চালনায় গোলটেবিলে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিশিষ্টজন ড. শাখাওয়াৎ নয়ন। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী লেখক ড. তরুণ চক্রবর্তী।

‘মাসিক মুক্তমঞ্চ’ এর সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এবং ‘পেন অ্যান্ড পেপার’ এর সহযোগিতায় গোলটেবিল আলোচানার আয়োজন করা হয়।

মূল প্রবন্ধে ড. শাখাওয়াৎ নয়ন মূলত সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে সংঘঠিত ‘টার্গেটেড কিলিং’ এর ওপর আলোচনা করেন। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ‘টার্গেটেড কিলিং’ এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাসসহ সাম্প্রদায়িক সমস্যার ভয়াবহতা এবং সমাধানের উপায় তুলে ধরেন।

প্রধান আলোচক ড. তরুণ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ইশ্বরকে সামনে রেখে মানুষকে পিছনে রাখে। সেটা মসজিদেই হোক আর মন্দিরেই হোক, ঘটনা একই। যতদিন পর্যন্ত মানুষকে সামনে রাখা যাবে না, ততদিন পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান হবে না।

তিনি বলেন, আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সংগঠন গড়ে তুলতে হবে, সংগঠন ছাড়া কিছুই করা যাবে না। আমরা যে যেখানে আছি, যে যা পারি, তা করেই প্রতিবাদ করতে হবে।

সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশে বিভিন্ন হামলার ঘটনা প্রসঙ্গে লেখক, প্রাবন্ধিক ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ রনৈশ মৈত্র বলেন, বর্তমান সরকারের কাজ-কর্ম দেখে মনে হচ্ছে, যেন এদেশে হিন্দুরা থাকলে ভোট পাবে, চলে গেলে জমি-জমা সম্পত্তি পাবে, দুই দিকেই লাভ। তাই সরকার প্রধানসহ সরকারের সব পর্যায়ে এক ধরনের রহস্যজনক নিরবতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

কলামিস্ট, ছড়াকার ও কবি অজয় দাশ গুপ্ত জোরালোভাবে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ কোনোভাবেই তুলনা করা যাবে না, যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিলো, তা এখন শুধুই অতীত।

কেউ স্বীকার করুক আর না-ই করুক, বাংলাদেশ এখন একটি পরিপূর্ণ সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়া শাখার সভাপতি ব্যারিস্টার সিরাজুল হক মূল প্রবন্ধের সঙ্গে অনেকখানি দ্বিমত পোষণ করে বলেন, বাংলাদেশের হিন্দুরা বলে তারা ভালো নেই, রানা দাশগুপ্তের মতো একজন প্রভাবশালী আইনজীবী ভারতের কাছে সাহায্য চাচ্ছেন। অন্যদিকে, বিএনপি জামায়াতের লোকেরা বলে দেশ নাকি হিন্দুরা চালাচ্ছে। প্রশাসনে নাকি হিন্দুতে ভরে গেছে, তাহলে আওয়ামী লীগ এখন কোন দিকে যাবে?

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এখনও মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করে এবং তার চর্চা করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়ান লেবার পার্টির নেতা, প্যারাম্যাটা সিটি কাউন্সিলের সাবেক কাউন্সিলর প্রবীর মৈত্র বলেন, পৃথিবীতে এখন দুই ধরনের রাষ্ট্র আছে। এক সেক্যুলার রাষ্ট্র এবং দুই ইসলামি রাষ্ট্র। এখন আর সমাজতন্ত্র-মন্ত্র কিছু নাই।

অস্ট্রেলিয়ার বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলের সভাপতি শেখ শামীমুল হক বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতিবিদরা যে খেলা শুরু করেছেন, তার পরিনতি হবে ভয়ংকর।

বর্তমান সরকারের তথ্যমন্ত্রী, সংস্কৃতিমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর বক্তব্য ও বিবৃতির বিষয়ে বিস্ময়ও প্রকাশ করেছেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. সোমা দে বলেন, একটা সময় ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করতেন। এখন ক্লাসে পড়ানোর সময়ও সচেতনভাবে কথা বলতে হয়, না জানি কারও কোনো অনুভূতিতে আঘাত লেগে যায়।

সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠক সুরজিৎ রায় বলেন, এক সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বন্ধুটিকে মোহসীন হল থেকে জগন্নাথ হলে নিয়মিত খেতে আসতো, সেই বন্ধুটি এখন হালাল-হারাম নিয়ে ঘণ্টার পর ঘন্টা তর্ক করে, হালাল ছাড়া খায় না। গত বিশ বছরে বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটেছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা পলাশ বসাক বলেন, ২০১৩ সালে শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেই তুলে ধরেছিলো। দেশের মানুষের মনে আশা জাগিয়েছিলো। কিন্তু সেই ইতিবাচক শক্তিকে কাজে না লাগিয়ে বরং নানা কায়দায় ধবংস করা হয়েছে।

লেখক ও সংগঠক সালেহ জামী বলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আমাদের দেশে ধর্ম কীভাবে এলো? এবং কীভাবে এদেশের মানুষকে নানা কায়দায় পরিবর্তন করে ফেললো? তা জানতে হবে। বাংলাদেশ এরকম ছিল না। আমাদের পরিবার ব্যবস্থাসহ, সামাজিক কাঠামোকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। সমাজের প্রতিরোধ শক্তি বলে আর কিছু নেই। যার খেসারত এখন আমরা দিচ্ছি।

গোলটেবিল আলোচনায় অন্যদের মধ্যে আরও অংশ নেন ফয়সাল খান অনিক, মোহসীনা পারভীন সুবর্না, অনীলা পারভীন, দিদারুল ইসলাম প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪৫ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬/আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা
টিআই   

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।