ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফিরছে মালয়েশিয়ায় পাচার হওয়‍া মানুষ

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৪ ঘণ্টা, জুন ৩, ২০১৬
মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফিরছে মালয়েশিয়ায় পাচার হওয়‍া মানুষ সাগরপথে মানবপাচার করে থাকে অসাধু চক্র

ঢাকা: নারায়ণগঞ্জ থেকে ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে মালয়েশিয়া যায় ১৫ বছরের কিশোর রহিম (ছদ্মনাম)। পাচারকারীদের হাতে এক লাখ টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ার পথে রওনা করে সে।

যাত্রাপথ কক্সবাজার থেকে নৌকায় থাইল্যান্ড, সেখান থেকে মালয়েশিয়া।

তবে উন্নত জীবিকার আশায় ঝুঁকি নিয়ে মানবপাচারকারীদের মাধ্যমে দেশটিতে গেলেও মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছে সে। যাত্রাপথের বর্বরতা-নির্মমতা মানসিকভাবে অসুস্থ করে দিয়েছে তাকে। অসুস্থ রহিম শুক্রবার (৩ জুন) সন্ধ্যায় দেশে ফিরছে। বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তেনেগানিতা ও মাইগ্রেন্ট ৮৮ এর উদ্যোগে সন্ধ্যা ৭টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকায় নামবে সে।

মালয়েশিয়ার সংস্থা তেনেগানিতা বলছে, ২০১৪ সালে সাগরে দুই মাসে ভয়ঙ্কর যাত্রায় রহিম মানসিক ভারসাম্য হারায়। তার চোখের সামনে না খেয়ে মৃত্যু হয় অনেক মানুষের। সামান্য একটু খাবারের জন্য এক যাত্রী আরেক যাত্রীকে হত্যা করে বর্বর কায়দায়। পান থেকে চুন খসলেই বন্দুকের গুলিতে মেরে সাগরে ভাসিয়ে দেয় পাচারকারীরা।

তেনেগানিতা জানায়, যাত্রাপথে সাগর পাড়ি দিয়ে রহিমের স্থান হয় থাইল্যান্ডের জঙ্গলে। সেখানে তাকে আটকে রেখে বাড়িতে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ চাওয়া হয়। রহিমের দরিদ্র পরিবার ঋণ করে আরও এক লাখ টাকা পাঠায় পাচারকারীদের কাছে। কিন্তু এরপরও তাকে ছাড়া হয়নি। বরং কিডনি বিক্রির জন্য রহিমকে বাছাই করা হয়। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিডনি বিক্রি করতে বাছাইকৃত লোকের তালিকা থেকে তাকে রেহাই দেওয়া হয়। পরে রহিমকে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দেওয়া হয়। সেখানকার পাচারকারীরা তাকে বিক্রি করে দেয় দেশটির পেনাংয়ে।

রহিমের বরাত দিয়ে বেসরকারি স্বেচ্ছ‍াসেবী সংস্থাটি জানায়, পেনাংয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ ছাড়াও পুরুষ যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিশোরটি। পরে পেনাং থেকে পালিয়ে একসময় কুয়ালালামপুরের আমপাংয়ে চলে যায় রহিম। এখানে একটি কোম্পানিতে নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কিছুদিন কাজ করে। এসময়টাতেই ধীরে ধীরে মানসিক অসুস্থতা দেখা যায় রহিমের মধ্যে। কিশোরটি রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকতো, ডাস্টবিনে খাবার খেয়ে জীবন কাটাতে থাকলো।

পরে স্থানীয় এক নারী তেনেগানিতায় ফোন দিয়ে রহিমের অবস্থা জানান। এরপর থেকে রহিমের ভার নেয় সংস্থাটি। তাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে সেবা দেওয়া হয়।

তেনেগানিতার জ্যেষ্ঠ স্বেচ্ছাসেবক আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এক ভয়াবহ যাত্রার মধ্য দিয়ে পার হতে হতে কিছুটা মানসিক বৈষম্য হারিয়েছে রহিম।

অপর স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাইগ্রেন্ট ৮৮ এর বাংলাদেশ শাখার আহ্বায়ক খন্দকার হাসিবুজ্জামান বলেন, আমরা কমিউনিটি ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে রহিমকে ফেরত আনার জন্য টিকিটের ব্যবস্থা করেছি। তাকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছি। এছাড়াও তাকে ভবিষ্যতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া এবং আইনি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪১ ঘণ্টা, জুন ০৩, ২০১৬
এমএন/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।