ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

টাইগারদের কিলাত ক্লাবকে মনে রাখেনি মালয়েশিয়া

জাকারিয়া মন্ডল, সিনিয়র আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩১ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৬
টাইগারদের কিলাত ক্লাবকে মনে রাখেনি মালয়েশিয়া ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়ালালামপুর থেকে: টাইগারদের আইসিসি ট্রফি জয়ের গৌরবগাঁখা সেই কিলাত ক্লাব মাঠ এখন পরিত্যক্ত প্রায়। নিয়মিত বৃষ্টির দেশ মালয়েশিয়ায় ধারাবাহিক অযত্নে বড়-বড় ঘাস গজিয়েছে মাঠটির বিভিন্ন অংশে।

অনেক স্থানেই স্যাঁতস্যাঁতে মাটিতে কিঞ্চি‍ৎ হলেও পা দেবে যাওয়ার দশা। তার চেয়েও বড় কথা, যে কিলাত ক্লাবের নামে এই মাঠটিকে চিনতো বাংলাদেশের মানুষ, সেই ক্লাবটিই আর খেলে না এই মাঠে| এমনকি পাল্টে গেছে তাদের নামও। মালয়েশিয়ার সবচেয়ে সফল এই হকি ক্লাবটি তেনাগা ন্যাশনাল বারহাত নাম নিয়ে অনুশীলন করে তাদের নতুন হোমগ্রাউন্ড তুন আব্দুর রাজাক স্টেডিয়ামে| 

মাঠের পূর্ব দিকে উঠেছে পেটালিং জায়া ক্লাবের নতুন ভবন। তার নিচ দিয়ে গড়া পাকা নর্দমায় উত্তর থেকে দক্ষিণে বইছে ময়লা পানি। বিশাল মাঠটিতে ক্রিকেট পিচের চিহ্নও নেই কোথাও। উত্তর-পশ্চিম কোণায় শেষ বেলায় ফুটবল খেলছে এক দল চায়নিজ। তাদেরই এক জনের সঙ্গে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জয়ের গল্প বলে আলাপ জমানোর চেষ্টা করতেই পাল্টা প্রশ্ন, ‘তুমি কি তখন এই মাঠে খেলেছো?’

এমন বেমক্কা প্রশ্নে আলাপ এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। আইসিসি ট্রফির সেই ঐতিহাসিক বাংলাদেশ-কেনিয়া ফাইনালের কথা মনে রাখেনি এরা। মনে রাখেনি কিলাব ক্লাবকেও। মালয়েশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিরাও খুব একটা চেনে না কিলাত ক্লাব মাঠকে।

দেড় যুগ আগের সেই ফাইনাল ম্যাচে শেষ বলের খেলায় কেনিয়াকে হারিয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। তারপর থেকে তো বাংলাদেশ ক্রিকেটের শুধু এগিয়ে যাওয়ারই গল্প। ওই মাঠে সেবার সেমিফাইনাল জিতেই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার টিকিট পায় টাইগাররা। এরপর পর‌্যায়ক্রমে আসে ওয়ানডে আর টেস্ট স্ট্যাটাস।

বুলবুল, আকরাম, পাইলট, শান্তদের বিজয় চিহ্ন আঁকা সেই মাঠটির চারিদিকে নগরায়নের থাবা পড়েছে গত দেড় যুগে। দক্ষিণ দিকে ঝকঝক করছে কুয়ালালামপুর-ক্ল্যাং মহাসড়ক। তারওপরে এলআরটি (লাইট র‌্যাপিড ট্রানজিট) রুট ধরে একটু পূর্বে এগুলেই তামান জায়া স্টেশন। ওই স্টেশন আর মাঠের মাঝখানে মালয়েশিয়ার প্রথম ফাস্টফুড শপ এডব্লিউ।

পূর্ব দিক দিয়ে বেরিয়ে মাঠটিকে ঘিরে একটা বাইপাস সার্কুলার রোড তামান জায়া স্টেশনের ওপাশে ফের মিশেছে কুয়ালালামপুর-ক্ল্যাং রোড়ে। চারিদিকে বহুতল ভবন। তবে দেড় যুগেও কোনো বাউন্ডারি ওঠেনি কিলাত ক্লাব মাঠে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন বলতে কেবল মাঠের পূর্বদিকে কয়েক সারির দর্শক গ্যালারি। এখনো এই মাঠে বড় কোনো খেলা আয়োজন করলে আগের মতোই তাঁবু বসিয়ে দর্শক ধারণের ব্যবস্থা করতে হবে।  

ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) হিসেবে, এই্ মাঠ এখন পরিচালিত হয় তেনাগা ন্যাশনাল স্পোর্টস কমপ্লেক্সের আওতায়। তবে তেমন কোনো আয়োজন চোখে পড়লো না মাঠ ঘুরে। যদিও কাগজে-কলমে কিলাত ক্লাবের এই মাঠ এখন মালয়েশিয়া জাতীয় ক্রিকেট টিমের অনুশীলন ভেন্যু।

১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মাঠে ১৯৯৬ সালে ইন্টারন্যাশনাল সুপার ৮ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে যেবার বাংলাদেশ আইসিসি চ্যাম্পিয়ন হয়, সে বছরই এ মাঠের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় তেনাগা স্পোর্টস গ্রাউন্ড। নাম পরিবর্তনের পরও আইসিসি ওয়ানডে ক্রিকেট আয়োজন করছে এ মাঠে।  

পরিসংখ্যানের বিচারে, এই মাঠটিতে সর্বোচ্চ রান শ্রীলংকার। ১৯৯৮/৯৯ মৌসুমে ওই ম্যাচে জিম্বাবুয়ে ৭ উইকেটে ২৬৫ রান করলে শ্রীলংকা ৯ উইকেটে ২৬৬ রান করে ম্যাচ জিতে যায়। একই মৌসুমে এ মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মাত্র ৫৮ রানে অল আউট হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

তার আগে ১৯৯৭ সালের ১২ এপ্রিল আইসিসি ট্রপির ফাইনাল ম্যাচে টসে জিতে কেনিয়াকে ফিল্ডিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৭ উইকেট হারিয়ে কেনিয়া করে ২৪১ রান। কিন্তু বৃষ্টির কারণে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। পরদিন মাঠে নামে বাংলাদেশ। নতুন টার্গেট দেওয়া হয় ২৫ ওভারে ১৬৬ রানের।

ইনিংস সর্বোচ্চ ৩৭ রান করেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সঙ্গে মোহাম্মদ রফিকের ২৬, মিনহাজুল আবেদিন নান্নুর ২৬ ও আকরাম খানের ২২ রানে ভর করে জয়ের সম্ভাবনা জিইযে রাখে বাংলাদেশ।

শেষ ওভারে প্রয়োজন হয় ১১ রান। উইকেট হাতে মাত্র দু’টি। প্রথম বলে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে ছয় হাঁকান খালেদ মাসুদ পাইলট। দ্বিতীয় বল ডট হয়। তৃতীয় বল ওয়াইড হলে আসে এক রান। পরের বলে এক রান নিয়ে পাইলট চলে যান নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে। স্ট্রাইকিং প্রান্তে গিয়ে হাসিবুল হোসেন শান্ত চতুর্থ বল ডট দিলে শেষ ২ বলে দরকার হয় ৩ রান। পঞ্চম বলে ২ রান নেন শান্ত। শেষ বলে প্রয়োজনীয় এক রান তুলে নেন অন্ধের মতো দৌড়ে।

কেনিয়ার স্টিভ টিকোলো ১৪৭ রান করে ম্যান অব দ্য মাচ হলেও ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ২ উইকেটে জয় পায় বাংলাদেশ। এর আগে ৮ ও ৯ এপ্রিল এ মাঠেই সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ। যে মাঠে খেলে তারা বিশ্বক্রিকেটে দাপটের সঙ্গে প্রবেশ করে সেই কিলাত ক্লাবের কিলাত শব্দের অর্থ বিজলী বা বজ্র। ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ১৯৯০, ৯১-৯২, ২০০০-০১, ২০০২ ও ২০০৩ সালে মালয়েশিয়া হকি লীগ চ্যাম্পিয়ন হয় তারা।
 

** মালয়েশিয়ার রাতের হাটে বাংলা স্টাইলে বিকিকিনি
***মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জন্য আরো কিছু ব্যবসা
***ইসলামী জাদুঘরে মুসলিম মালাক্কা
***এক টিলাতেই এক ডজন জাদুঘর!
***পাহাড়ের পেটে নেমে গেছে ৫শ’ বছরের প্রাচীন সিঁড়ি
***লাল মালাক্কায় মালয়েশিয়ার প্রথম মসজিদ
** মাহাথিরের মানস সন্তান পুত্রাজায়ায়
**দেশে ফিরলেই বেকার, বিদেশের অভিজ্ঞতা বিফলে
*** দূষণে কালো হয়ে আছে কুয়ালালামপুরের জননী
***মালয়েশিয়ায় জেঁকে বসতে পারে বাংলাদেশ
***টিনঘেরা চৌহদ্দিতে ক্রীতদাস জীবন!
***লজ্জা নয় ওরা অহংকার
***মেডিকেল ট্যুরিজমের পালে হাওয়া মালয়েশিয়ায়
*** বাংলাদেশি পরিচয়েই যতো লজ্জা!
***এক ঋতুর দেশে
**বাংলাদেশি আবহে জাঁকিয়ে বসেছে হোটেল মার্ক
**অন টাইমে রিজেন্টে উড়ে মালয় দ্বীপে
**মালয়েশিয়া থেকে খবর দিচ্ছেন বাংলানিউজের জাকারিয়া মণ্ডল

বাংলাদেশ সময়: ০৮২৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৬

জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।