ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

স্পেন

৪৬৩ বাংলাদেশি

কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন কেউ জানে না

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
কবে বাড়ি ফিরতে পারবেন কেউ জানে না ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংকক(থাইল্যান্ড) থেকে: মানবপাচারের শিকার সাড়ে চারশতাধিক বাংলাদেশি এখনো আটকে আছেন থাইল্যান্ডে। কবে তাদের দেশে ফেরা হবে? প্রিয়জনের মুখটি দেখতে দেশে অধীর অপেক্ষায় থাকা স্বজনদের প্রতীক্ষার প্রহরই বা কবে শেষ হবে তা নিয়ে এখন পর্যন্ত নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি কেউ।



হতভাগ্য এসব মানুষ আর তাদের স্বজনরা তাকিয়ে আছেন সরকারের দিকে। আর আটকেপড়াদের পরিবহন খরচ যোগানে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের উদ্যোগের অপেক্ষায় আছে সরকার।
এই দো’টানায় বন্দিদশায় প্রবাসে নিষ্ঠুর আর মানবেতর জীবনযাপন করছেন আটকেপড়া হতভাগ্য এসব মানুষ।

আটকেপড়া এসব বাংলাদেশির অবস্থা নিয়ে দেশে পরিবারের সদস্যরা যেমন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় আছেন, তেমনি প্রাণে রক্ষা পেলেও রোগে শোকে জীর্ণ অবস্থায় ভিনদেশেও তাদের প্রতিটি প্রহর কাটছে অভিশপ্ত জীবনের মতোই।

সূত্র জানায়, এই মূহৃর্তে দেশে ফেরার অপেক্ষায় থাইল্যান্ডে রয়েছেন ৪শ’৬৩ জন বাংলাদেশি। তারা আটকে রয়েছেন দেশটির ইমিগ্রেশন সেন্টার বা সেফহোমে।

তাদের মধ্যে দেশ থেকে ১’শ ১৬ জনের পরিচয় ‘সঠিক’ সংক্রান্ত প্রতিবেদন এলেও অবশিষ্ট ৩শ’ ৪৭ জনের জন্যে এখন পর্যন্ত নেই কোনো সুখবর। কবে মাঠ পর্যায়ের তদন্ত শেষ হবে, কবে প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে, সেখান থেকে কূটনৈতিক চ্যানেলে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাসে পৌঁছাবে তাও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

তবে অসহায় এসব মানুষকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে তুলনামূলক স্বল্প ভাড়ায় পরিবহন সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ বিমান।

ব্যাংককে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সাইদা মুনা তাসনিমের। তিনি বলেছেন, যাদের ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হয়েছে তাদের মধ্যে ২৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আমরা অপেক্ষায় রয়েছি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের। তাদের সহযোগিতা পেলে আটকেপড়াদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমকে অনুরোধ জানানো হয়েছে এসব আটক অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে। আশা করছি, তারা শিগগিরই সাড়া দেবে।

সরকারি উদ্যোগে কিছু লোককে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে এভাবে পাঠানো হলে তো অনেকেই এ পথে আসার ব্যাপারে আগ্রহী হবেন। আমরা এটা নিরু‍ ৎসাহিত করতে চাই। তারা ভেবে নেবেন, যদি অবৈধ পথেই যেতে পারি তো গেলাম। আর যদি আটকে যাই তাহলে বাংলাদেশ সরকারই তো দেশে ফেরত পাঠাবে। এ ভাবনাটাই মারাত্মক। সে কারণে এ সুযোগে কেউ যাতে ঝুঁকিপূর্ণ এ পথ পাড়ি দিয়ে যাতে দেশটিতে কেউ না ঢোকেন, সে ব্যাপারে আমি সকলকে সর্তক থাকার অনুরোধ করছি- যোগ করেন রাষ্ট্রদূত।

তিনি জানান, বাংলাদেশের জলসীমায় নয়, মানবপাচারের এসব ঘটনা ঘটেছে মায়ানমারের জলসীমায়। আর অবৈধপথে পাড়ি দিয়ে যারা আটক হয়েছেন, তাদেরকে স্থানীয় আইন-কানুন মেনে তবেই দেশে ফিরতে হবে।

যদিও থাইল্যান্ড সরকার সাগর পাড়ি দিয়ে আসা আটকেপড়াদের ব্যাপারে সংবেদনশীল। দেশটির অভিবাসন আইন অনুযায়ী অবৈধভাবে দেশটিতে প্রবেশের শাস্তি দুই বছরের কারাদণ্ড। তবে এ পথে আসা আটককৃতদের ৬০ দিনের কারাদণ্ড দিয়ে পরে সামাজিক উন্নয়ন ও মানব নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখা হয় প্রটেকশন সেন্টারে।
এ কারণে সাজা খাটার পরও সেখানে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় এক ধরনের অবরুদ্ধ জীবনযাপনই করতে হচ্ছে এসব মানুষকে।

যদি আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সাড়া না আসে তখন কি হবে?- এ প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বাংলানিউজকে বলেন, আমরা তখন আটকেপড়াদের পরিবারের প্রতি আহবান জানাবো তাদের ফিরিয়ে নেবার। আমি মনে করি ফেরত পাঠাতে খরচের এই অর্থ তাদেরই দেওয়া উচিৎ। অবৈধভাবে এদেশে আসার জন্যে জরিমানা হিসেবেও তাদের এই যাতায়াত ভাড়া দেওয়া উচিৎ।  

এদিকে দেশ থেকে প্রতিবেদন আসা ১’শ ১৫ জন কবে বাংলাদেশগামী বিমানে আরোহন করতে পারবেন তা এখনো নির্ধারিত হয়নি বলেও জানিয়েছে বিমানের একটি সূত্র। সূত্রমতে, চূড়ান্ত হলেই আটকেপড়াদের ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি রয়েছে বিমানের।

সূত্র মতে, এর আগে ১শ’৩১ জনকে সরকারি খরচে আর ৫৫ জনকে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএমের সহযোগিতায় দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে ট্রলার বা নৌকাযোগে স্বপ্নের দেশ মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেবার পথে বিভিন্ন সময়ে আন্দামান সাগরে তাদের আটক করেন থাই উপকূল রক্ষীরা।

২০১৩ সালের জুন থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ‘বাংলাদেশি পরিচয়ে’ আটকে পড়া ১ হাজার ৫’শ ৪৬ জনের সাক্ষাতকার গ্রহণ করে বাংলাদেশ দূতাবাস। তাদের মধ্যে পরে ৫৭ জন নিজেদের মায়ানমারের রোহিঙ্গা হিসেবে দাবি করেন। পরে অবশিষ্টদের মধ্যে আরো দু’জনকে মায়ানমারের নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে এশিয়ার অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যারাম এশিয়ার আঞ্চলিক সমন্বয়কারী হারুন অর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, আটকেপড়া মানুষগুলো বাংলাদেশের নাগরিক। তাদের রাষ্ট্র আছে। সুতরাং তাদের দায়িত্ব সরকারেরই নিতে হবে। তারা মানবপাচারের শিকার। সরকারের উচিৎ, দ্রুত এসব মানুষকে তাদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া।
 
** বাণিজ্য ঘাটতির ঊর্ধ্বগতিতে থাই-বাংলাদেশ সম্পর্ক

বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৫, ২০১৫
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।