ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বাহরাইন

৯ বছর পর পাসপোর্ট ফেরত পেলেন বাদল

মোসাদ্দেক হোসেন সাইফুল, বাহরাইন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৪
৯ বছর পর পাসপোর্ট ফেরত পেলেন বাদল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাহরাইন: আকস্মিক খবরটা শোনার পর যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না। যে পাসপোর্ট উদ্ধার করতে দীর্ঘ নয় বছর ঘুরেছেন বিভিন্নভাবে নানা জনের কাছে!

কিন্তু অল্প সময়েই পাসপোর্ট হাতে পাওয়ায় খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন বাহরাইন প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিক বাদল।

বহু প্রতিক্ষিত পাসপোর্ট হাতে পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে বাদল জানান, ২০০৫ সালের মে মাসে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় জমি বিক্রির টাকায় বাহরাইনে পাড়ি জমান তিনি।

বিভিন্ন জায়গায় ঘুরোঘুরি করেও কাজ না পেয়ে অবশেষে বাধ্য হয়ে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করা শুরু করেন বাদল। এরই মধ্যে ৪টি বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু তার পাসপোর্টের কথা মনে নেই।

তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হয়। কিন্তু জানতে পারি তা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের (আরবাব) কাছে পাসপোর্ট জমা আছে।

মালিকের (প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ) মোবাইলে বারবার ফোন করেও পাসপোর্ট উদ্ধার করতে পারি নি।
 
বিদেশের মাটিতে নানা ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বাংলাদেশি এই তরুণ জানান, সর্বশেষ বাধ্য হয়ে ২০০৯ সালে দূতাবাসে যোগাযোগ করেন। দূতাবাসের কর্মকর্তারা সিপিআর (সেন্ট্রাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার) রেখে যাওয়ার পরামর্শ দেন। যাতে পাসপোর্ট পাওয়া গেলে তাকে জানানো যায়।

পাসপোর্ট ছাড়া প্রবাস জীবনের নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করে বাদল বলেন, এভাবেই দীর্ঘ ৫বছর দূতাবাসে ঘুরাফেরা করি। কোনো কাজ হয়নি। তবে নতুন রাষ্ট্রদূত এসেছেন শোনে আশা নিয়ে শেষবারের মতো তার (রাষ্ট্রদূত) সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা বিস্তারিত জানাই।

রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কে এম মমিনুর রহমান বলেন, বাদলের বিষয়টি আমলে নিয়ে আমাদের বাহরাইনি পরামর্শক মোহাম্মদের মাধ্যমে তার পাসপোর্টটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই।

এদিকে রাষ্ট্রদূতের হাত থেকে পাসপোর্টটি নেওয়ার পর বারবার পৃষ্টা উল্টে দেখছিলেন বাদল। দেশে ফিরে স্বজনদের মুখ দেখার সম্ভাবনায় আনন্দে কেঁদে ফেলেন তিনি।  

বাংলানিউজকে বাদল বলেন, এ পাসপোর্টের জন্য নিকট আত্বীয়দের শেষ দেখা দেখতে পারিনি। ছোট ভাইটিকে অনেক ছোট রেখে এসেছিলাম।

‘একমাত্র আদরের বোনটির বিয়েতেও যেতে পারি নি। এরই মধ্যে বোনের কোলে সন্তান এসেছে। ভাগনির সঙ্গে ফোনে কথা হয়, না, জানি কেমন হয়েছে সে’—বলেই কেঁদে ফেলেন বাদল।

পরণের গেঞ্জি দিয়ে বারবার চোখ মুছে বললেন, বাবাকে আগেই হারিয়েছি, মা ও ভাই-বোনের চেহারা অনেকটাই ঝাঁপসা হয়ে গেছে। জানি না দেশে ফিরে তাদের চিনতে পারি কিনা!

বাদল চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জের মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে। বর্তমানে মানামার বাঙালি গলিতে একটি চালের দোকানে বিক্রয় প্রতিনিধির কাজ করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।