ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

স্পেন

থাইল্যান্ডে আটকরা ‘বাংলাদেশি’ কিনা যাচাইয়ের অপেক্ষায়

ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪
থাইল্যান্ডে আটকরা ‘বাংলাদেশি’ কিনা যাচাইয়ের অপেক্ষায়

ঢাকা: থাইল্যান্ডের উপকূলে ‘মানব পাচারকারীদের’ নৌকা থেকে আটক ১৩৪ জন ‘বাংলাদেশি’ নাগরিক কিনা বিষয়টি যাচাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে।

থাইল্যান্ড সরকারের কাছে তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের অনুমতি চেয়েছে বাংলাদেশ।

এরপরেই তারা ‘বাংলাদেশি’ কিনা নিশ্চত হওয়া যাবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও থাইল্যান্ডে বাংলাদেশ দূতাবাস বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

যাচাইয়ের পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।

বাংলাদেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া নৌকা থেকে এদের আটক করায় তারা ‘বাংলাদেশি’ বলে প্রচার চালানো হয়। তবে ১৩৪ জনকে আটক করা হলেও একই নৌকায় থাকা আরো ১৭৬ জনের হদিস পেতে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কর্মকর্তারা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক নূর-ই-হেলাল সাইফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, থাইল্যান্ড উপকূলে আটকদের বিষয়টি আমরা অবগত আছি। তবে তারা ‘বাংলাদেশি’ কিনা সেটি জানতে তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য থাইল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। অনুমতি মিললে দেশটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা আটকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি নিশ্চিত হবেন।

আটকদের বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ পূর্ব-এশিয়া বহিঃপ্রচার বিভাগের মহাপরিচালক আসুদ আহমেদ বলেন, থাইল্যান্ডের উপকূলে আটকরা মূলত দালালদের প্ররোচনায় পড়ে মালয়েশিয়া যাচ্ছিলেন। জীবন বিপন্ন জেনেও তারা এ বিপদসঙ্কুল পথ বেছে নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশি আছেন কিনা সেটি থাইল্যান্ড দূতাবাসের মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নানা সময় থাইল্যান্ডে আটকদের অনেককেই ‘বাংলাদেশি’ বলে প্রচার করা হলেও পরে দেখা যায়, তাদের বেশির ভাগই ‘রোহিঙ্গা’। তাই, মিডিয়া প্রচার করলেও নিশ্চিত না হয়ে তাদের ‘বাংলাদেশি’ মানতে রাজি নই আমরা।

তিনি বলেন, থাইল্যান্ড সরকারের অনুমতি মিললে আটকদের নাগরিকত্ব যাচাই করবে বাংলাদেশ দূতাবাস। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তেমন নির্দেশনাই দিয়েছে।  

থাই সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, সম্প্রতি একটি দুর্গম এলাকা থেকে ১৩৪ জনকে উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী। উদ্ধারদের মধ্যে ১৬ জন রোহিঙ্গাও ছিলেন। এদের কাছ থেকে জানা যায়, একই নৌকায় আরো ১৭৬ জন ছিলেন।

কিন্তু উদ্ধার ১৩৪ জনসহ ৩১০ জনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, আর এখন ওই ১৭৬ জনই বা কোথায় তা নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।

উদ্ধারদের ভাষ্যমতে, পাচারকারীরা তাদের মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার মাছধরা ট্রলার ও কারখানায় ‘দাস’ হিসেবে বিক্রি করে দিতে পারে। উদ্ধার হওয়া ১৩৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বর্তমানে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা থাইল্যান্ড সফর করছেন।

সবার মতো এক যুবক ও এক বালক দাবি করেন, তাদের বাংলাদেশ থেকে ‘অপহরণ’ করে নিয়ে আসা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় দুর্বৃত্তরা তাদের আটকের পর প্রথমে মাছধরা জাহাজে আটকে পরে কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর এলাকা থেকে থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল উপকূলের একটি দুর্গম দ্বীপের উদ্দেশে রওয়ানা হয়।
এর আগে, থাইল্যান্ডের ফ্যাং এঙ্গা প্রদেশের তাকুয়া পা জেলায় ১৩০ জনকে উদ্ধারের ঘটনার পর মানবপাচারের অভিযোগ এনে দুই থাই নাগরিকের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়। পুলিশ এ ঘটনায় অন্য অভিযুক্তদেরও খুঁজছে।

স্থানীয় অনলাইন সংবাদ সংস্থা ফুকেটবান জানায়, একটি দ্বীপে পাচারকারীরা একদল লোককে নামিয়েছে বলে থাই কর্তৃপক্ষ জানতে পারার পর প্রায় অর্ধেক জিম্মি লোককে ওই দ্বীপ থেকে সাঁতরে স্থলভাগে ফিরে যেতে সমুদ্রে নামিয়ে দেয় পাচারকারীরা।

কিন্তু এই ১৩৪ জনকে স্থলভাগ থেকে উদ্ধার করা হলেও মনে করা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষের লোকজন পৌঁছানোর আগেই ওই ১৭৬ জনকে নিয়ে দ্বীপটি ছেড়ে গেছে পাচারকারীরা।

উদ্ধাররা ফুকেটবানকে জানান, তাদের ব্যাপক মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে এবং ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হয়নি।

তবে, বাংলাদেশের এক কর্মকর্তা ফুকেটবানকে জানান, আমরা এ ধরনের ঘটনা আর কখনো ঘটতে দেখিনি। কারণ, বাংলাদেশ থেকে সাধারণত পাচারের ঘটনা ঘটে না।

আবার রোহিঙ্গারা সাধারণত অক্টোবরের শুরু থেকে পরবর্তী পাঁচ মাস বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাতে শুরু করেন বলে এই ১৭৬ জন ঠিক কারা, তা নিয়ে রহস্য আরও ঘনীভুত হচ্ছে।

** থাই উপকূলে ‘বাংলাদেশি’ নৌকা থেকে নিখোঁজ ১৭৬

বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।