ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

সিঙ্গাপুর

বাংলাদেশের তরুণ প্রকৌশলী

সিঙ্গাপুরের মতো শিপইয়ার্ড চট্টগ্রামেও হতে পারে

মাজেদুল নয়ন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪১ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৪
সিঙ্গাপুরের মতো শিপইয়ার্ড চট্টগ্রামেও হতে পারে ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

সিঙ্গাপুর থেকে: বাংলাদেশের তরুণ প্রকৌশলী তৌফিকুল জাকারিয়া। ২০০৯ সালে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) থেকে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পাশ করেছেন তিনি।



গত আড়াই বছর ধরে কাজ করছেন সিঙ্গাপুরের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে। কাজ করেছেন বাংলাদেশেও।

সিঙ্গাপুরে জাহাজ নির্মাণ শিল্পে কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করা এই বাংলাদেশি তরুণ আত্মপ্রত্ময়ের সঙ্গে বলেন, সিঙ্গাপুরের মতো শক্তিশালী জাহাজ নির্মাণ শিল্প বাংলাদেশেও গড়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে যে জায়গা রয়েছে, সিঙ্গাপুরে তা নেই।

জাকারিয়ার বাড়ি চট্টগ্রামের হালিশহরে। চুয়েট থেকে পাশ করার পর জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ওয়েষ্টার্ন মেরিনে চাকুরি করেন ২ বছর।

এ সময় সিঙ্গাপুরের শিপইয়ার্ড কোম্পানি জুরাং বাংলাদেশে জনবলের জন্য যায়। ওই সময় তারা যোগ্য মনে করে কোম্পানিতে চাকরি দেয় জাকারিয়াকে।

এই কোম্পানির মাধ্যমেই প্রথম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে আসেন তিনি। এরপর কর্মস্থল পরিবর্তন করে বর্তমানে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন জয়া শিপইয়ার্ডে।  

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে প্রফেশনাল ভিসাধারী জাকারিয়া জানান, এখানে এই ভিসাধারীরা বেশ সম্মান পান। তাদের জন্যে কাজের ক্ষেত্র ভালো।

কাজের বৈচিত্র্যও রয়েছে। নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগটাও অনেক বেশি। তবে পার্মানেন্ট রেসিডেন্স যারা, তাদের মতো চিকিৎসা এবং শিক্ষার সুযোগ নেই প্রফেশনাল ভিসাধারীদের।

সিঙ্গাপুরের শিপইয়ার্ড প্রসঙ্গে বলেন, এখানে কর্মীদের নিরাপত্তাটা বেশ ভালো। পরিস্কার-পরিপাটি কাজ। এখানে দুর্ঘটনা বা আহত হওয়ার রেকর্ড প্রায় শূন্য।  
জাকারিয়া বলেন, সিঙ্গাপুর বহুজাতির দেশ। তবে কাজ জানলে এখানে বৈষম্য নেই। যোগ্যতার উপরই মূল্যায়নটা নির্ভর করে।

এ দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সঙ্গে আরো কাজ করতে চান জাকারিয়া, শিখতে চান আরো অনেক। বললেন, পৃথিবীর সবচেয়ে অত্যাধুনিক জাহাজগুলো এখানে নির্মাণ হচ্ছে। দেশে ফিরে নিজেদের মতো করে এই শিল্পের উন্নয়নে কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, সিঙ্গাপুরে জায়গা কম। আমাদের দেশের চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় বা শিপইয়ার্ডে যে জায়গা রয়েছে তার তুলনায় এদের জায়গাই নাই। কিন্তু সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এটি এখন সবচেয়ে বড় শিল্প এদেশে। আমাদের যে জায়গা রয়েছে তাতে আরো বড় পরিসরে কাজ করা সম্ভব।

আত্মবিশ্বাসী জাকারিয়া বলেন, বাংলাদেশে সুযোগ করে দিলে, এক্সপার্ট বাড়ালে, যে অর্ডারগুলো এখানে আসছে, সেটা বাংলাদেশেও যেতে পারে। আমাদের পক্ষেও সম্ভব বাইরের দেশের অর্ডার নেওয়া। বিদেশি জাহাজ প্রস্তুত করা।

স্বপ্নাতুর এ তরুণ প্রকৌশলী বলেন, আমরা এখন শুধু জাহাজ ভাঙি আর কিছু অভ্যন্তরীণ জাহাজ নির্মাণ করি। অথচ আমাদের যে দক্ষ প্রকৌশলী এবং শ্রমিক এ দেশে কাজ করছেন, তাদের দিয়েই বাংলাদেশে আরো উন্নত জাহাজ নির্মাণ ও মেরামত শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

বাংলাদেশে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, দেশে শ্রমিকদের যোগ্য মূল্যায়ণ করা হয় না। কাজের পরিশ্রমের তুলনায় বেতন কম। অথচ এটি উদীয়মান একটি শিল্প।

এছাড়াও দেশে অস্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মস্থলের অভাবের কথা বলেন এই তরুণ প্রকৌশলী।  

উচ্চ মাধ্যমিকের সহপাঠী ও প্রেয়সী নূর ইসরাত জাহানকে বিয়ে করেছেন আড়াই বছর আগে। আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম থেকে পড়াশোনা করেছেন নুসরাত।
 
স্বামী জাকারিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ৭ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুর এসেছেন নুসরাত।

স্ত্রীর লং টাইম ভিজিট ভিসার প্রসেসিংয়ে ব্যস্ত জাকারিয়া। শনিবার বিকেলে মোস্তফা মার্টে টুকটাক কেনাকাটা করতে আসেন এই দম্পতি। পরিচয় পর্ব শেষে গল্প হয় একটু সামনে নাভিস রেস্টুরেন্টে বসে।

জাকারিয়া ভাই পাশে এসে বৌ-য়ের হাতে স্মার্টফোন দিয়ে ছবি তুলতে বললেন। ছবি তোলা হলো। এবার স্ত্রীর পাশে গিয়ে বসলেন জাকারিয়া।

নুসরাত ভাবি তার ফোনটা বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, আমাদের ছবি তুলুন। স্বামী-স্ত্রীকে এক ফ্রেমে রেখে ছবি তুললাম।

হাস্যজ্জ্বল জাকারিয়া বললেন, যদি নিউজ হয়, আমার ছবি না থাকলেও সমস্যা নাই। কিন্তু আমার বৌয়ের ছবি দিতে যেন ভুল না হয়।

** দৈনিক ২০ ডলারে কাজ শুরু করি
** ‘স্যরি’টা এক সময় যন্ত্রণা হয়ে উঠছিল’

বাংলাদেশ সময়:০৮৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।