ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

লন্ডন

বাংলাদেশের জনগণকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা

সৈয়দ আনাস পাশা, লন্ডন করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ৯, ২০১৪
বাংলাদেশের জনগণকে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ঈদ শুভেচ্ছা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

১০ ডাউনিং স্ট্রিট, লন্ডন থেকে: বাংলানিউজের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণকে আবারও ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন।

বুধবার স্থানীয় সময় বিকেলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আযহা উপলক্ষে আয়োজিত ‘ঈদ রিসেপশন’ অনুষ্ঠানে তিনি এ শুভেচ্ছা জানান।



অনুষ্ঠানে ‘মিস্টার প্রাইম মিনিস্টার, ক্যান ইউ সে এ ফিউ ওয়ার্ডস টু দ্য বাংলাদেশি পিপল টুডে?’ বাংলানিউজ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলাদেশিদের ঈদ শুভেচ্ছা জানান।

প্রশ্নের জবাবে ক্যামেরন বলেন, ‘অহ ইয়েস, অফকোর্স, ঈদ মোবারক’।

১০ ডাউনিং স্ট্রিট আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রদায়ের সীমিতসংখ্যক শীর্ষস্থানীয় ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।

বাংলাদেশি কমিউনিটি থেকে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশ নেন, ব্রিটিশ মূলধারায় অস্কারখ্যাত রন্ধন শিল্প বিষয়ক এওয়ার্ড অনুষ্ঠান ‘কারি এওয়ার্ড’ এর প্রতিষ্ঠাতা এনাম আলী এমবিই, ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের উপদেষ্টা ওয়ালি তছর উদ্দিন এমবিই, কনজারভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ’র চেয়ারম্যান মেহফুজ আহমেদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বজলুর রশীদ এমবিই, বেথনাল গ্রিন-বো আসনের সাবেক কনজারভেটিভ দলীয় পার্লামেন্টারি প্রার্থী শাহগীর বখত ফারুক, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সেলিম হোসেন এমবিই, ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম, সাংবাদিক তাইছির মাহমুদ ও সৈয়দ ‌আনাস পাশা।

স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিট থেকে ৬টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী এ অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় কাটান। এ সময় তিনি হেঁটে হেঁটে সবার সঙ্গে কথা বলেন ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

অনুষ্ঠানের ফাঁকে গ্রুপে গ্রুপে অতিথিদের সঙ্গে নিয়ে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের অফিসিয়াল ফটোগ্রাফারকে ফটো পোজও দেন ডেভিড ক্যামেরন। শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে অতিথিদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

বক্তব্যে ক্যামেরন বলেন, ব্রিটেনের সার্বিক উন্নয়নে ব্রিটিশ মুসলমানদের অবদান বিশাল। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গেও ব্রিটেনের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্দশাগ্রস্ত, যুদ্ধাক্রান্ত জনগণের প্রতি ব্রিটিশ মুসলমানদের সহানুভূতির প্রশংসা করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাহায্য দাতা হিসেবে ব্রিটিশ মুসলিম সম্প্রদায় দেখিয়ে দিয়েছেন বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যায়।

ক্যামেরন ইসলাম ধর্মে কোরবানির প্রচলন শুরুর ইতিহাস বলতে গিয়ে হযরত ইব্রাহিম (আ.) এর প্রথম সন্তান কোরবানির নিয়তের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, নিজ সন্তানকে সৃষ্টিকর্তার নির্দেশে কোরবানি করার নিয়ত করে যে ত্যাগের নজির সৃষ্টি করেছিলেন ইব্রাহিম, সেই ত্যাগের মানসিকতা নিয়ে বিশ্বের বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে এখনও দাঁড়াচ্ছে মুসলমান সম্প্রদায়।

কোরবানির মাংস তিন ভাগে ভাগ করার নিয়মেরও ভূয়সী প্রশংসা করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোরবানির মাংস বন্টনের এই নিয়মই প্রমাণ করে ইসলাম সব শ্রেণির মানুষের প্রতি নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে কতটুকু সচেতন।
 
সিরিয়া, ইরাকসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ইসলামের নামে আইএসের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের ধর্ম ইসলামকে মানুষ জবাই করে যারা কলুষিত করতে চায় তাদের রুখতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায়কেও আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

এ ইস্যুতে তার সরকারের সঙ্গে ব্রিটিশ মুসলমানদের সহযোগিতা ও সহমতেরও প্রশংসা করেন ক্যামেরন। আসসালামু আলাইকুম বলে শুরু করা সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ঈদ মোবারক বলে শেষ করেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে, ঈদ রিসিপশনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন অনুষ্ঠানে আমিন্ত্রত বাংলাদেশি কমিউনিটির শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা।

মূলধারায় অস্কার খ্যাত ‘কারি এওয়ার্ড’ এর প্রতিষ্ঠাতা, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী এনাম আলী এমবিই বাংলানিউজকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য ব্রিটেনের মুসলিম সম্প্রাদায়ের জন্যে অনুসরণীয় হতে পারে।
রাজনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ধর্ম পালন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবাধ সুযোগ-সুবিধা দিয়ে মুসলমানদের নিজেদের অংশ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে ব্রিটেন। ব্রিটেনের উন্নয়নে মুসলিম কমিউনিটির ইতিবাচক অবদান শুধু আজ নয়, এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অকৃপণভাবে স্বীকার করেছেন ক্যামেরন।
 
মুসলিম কমিউনিটি সম্পর্কে তার আজকের মন্তব্য মূলধারায় মুসলিম সম্প্রাদায়ের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওয়ালী তছর উদ্দিন এমবিইও প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরনের বক্তব্যকে ব্রিটেনের মুসলমানদের জন্যে ইতিবাচক ও অনুসরণীয় বলে মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশের ভ্রাম্যমাণ অনারারী দূতের দায়িত্ব পালনকারী ওয়ালী তছর উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশিসহ মুসলিম কমিউনিটির আজকের এই সমৃদ্ধ অবস্থান অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আসার পর। রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি মাল্টিকালচারাল ও মাল্টি রিলিজিয়াস দেশ হিসেবে ব্রিটেনে ধর্মপালনসহ সবক্ষেত্রেই মুসলমানরা অবাধ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন। এই সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন বলেই মুসলমানরা এই সোসাইটির জন্যে অবদান রাখতে পারছেন। যা আজ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করলেন।

তিনি বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ইসলামকে কলুষিত করার সাম্প্রতিক অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্যে আজ যে আহ্বান জানালেন, তাতে অবশ্যই আমাদের সাড়া দিতে হবে। কারণ এর সঙ্গে আমাদেরই স্বার্থ জড়িত। এক্সট্রিমিজমের হাত থেকে আমাদের মেধাবী প্রজন্মকে রক্ষার স্বার্থেই এটি আমাদের করতে হবে।

কনজারভেটিভ দলীয় সাবেক এমপি প্রার্থী শাহগীর বখত ফারুক ডেভিড ক্যামেরনের বক্তব্যের প্রশংসা করে বলেন, মুসলমান সম্প্রদায় যে ব্রিটেনের সম্পদ এটিই বলেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তিলে তিলে গড়া মুসলমানদের এই ইতিবাচক ইমেজ ভ্রান্ত এক্সট্রিমিস্টদের কারণে নষ্ট হতে দেওয়া যায় না। শান্তির ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে যারা মানুষের রক্তে হাত রাঙায়, ব্রিটিশ মুসলমানদের অবস্থান হবে তাদের বিরুদ্ধে।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের মধ্যে এমনটাই তুলে ধরা হয়েছে বলে মনে করেন শাহগীর বখত ফারুক।

বাংলাদেশ সময়: ০৭০৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।