ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

মালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ার ইউসিটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাসুম

মাজেদুল নয়ন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১৪
মালয়েশিয়ার ইউসিটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাসুম বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মালয়েশিয়া থেকে ফিরে: আমরা অপেক্ষা করছিলাম, সুখবরটি শোনার জন্যে। ২১ নভেম্বর আমি দেশে ফেরার আগ পর্যন্ত খবরটি কোথায় যেন আটকে ছিল।

অবশেষে গত ২৭ নভেম্বর অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লা ফোন দিয়ে নিজেই দিলেন সুখবরটি। মালয়েশিয়ার অন্যতম নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় ইউসিটেক এর উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন তিনি। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ড. মাসুম।

মালয়েশিয়ায় যাওয়ার প্রথম দু’একদিনের মাথাতেই ড. মাসুম বিল্লা’র সঙ্গে দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি পুত্রজায়াতে নতুন বাসা বদলের কারণে ব্যস্ত থাকায় সময় হয়ে ওঠেনি। পরে আমপাংয়ের এক রেস্তোরাঁয় তার সঙ্গে কথা হয় দু’বার।

১৯৮৭ সালের প্রথম দিকেই মালয়েশিয়াতে আসেন ড. মাসুম। বাংলাদেশে সম্ভব না হলেও, মাত্র ৪৫ বছর বয়সে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে নিজেকে উপাচার্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বাগেরহাটের এ কৃতী সন্তান।

ইউসিটেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাড়াও বর্তমানে মিডল ইস্টার্ন বিজনেস ওয়ার্ল্ড গ্রুপ অব কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করছেন।

ড. মাসুম যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিবিএ করেছেন ই-কমার্সের ওপর এবং এমবিএ করেছেন কো-অপারেটিভ মাইক্রো-ফাইনান্সের ওপর। মালয়েশিয়া থেকে পিএইচডি করেছেন ইন্সুরেন্সের ওপর, কম্পারেটিভ কর্পোরেট ল’-এ নিয়েছেন এমসিএল ডিগ্রি। এছাড়াও নিয়েছেন এমএমবি এবং এলএলবি ডিগ্রি।

তিনি ইসলামিক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (আইসিসি) পরিচালক হিসেবেও দ্বায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। এই আর্ন্তজাতিক প্রতিষ্ঠানটির গ্লোবাল ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশনের ইন-চার্জ হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন। এছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া (আইআইইউএম) এবং সৌদি আরবের কিং আব্দুল আজিজ ইউনিভার্সিটি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন তিনি।

ফাইন্যান্স এবং কর্পোরেট বিষয়ে ত্রিশটির ওপর বইয়ের রচয়িতা ড. মাসুম। যেগুলো পৃথিবীর নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা পাঠ্য হিসেবে বিবেচনা করেন। এছাড়াও বিভিন্ন জার্নালে দুই শতাধিক আর্টিকেল রয়েছে এই গুণী শিক্ষকের। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে কনফারেন্স, সেমিনার এবং ওয়ার্কশপে প্রফেশনাল লেকচার দেন তিনি।

কাতার ন্যাশনাল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষক ছাড়াও বেশ কয়েকটি আর্ন্তজাতিক জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডে রয়েছেন তিনি।

প্রফেশনাল এক্সপার্ট হিসেবে তিনি বিভিন্ন দেশের ৩০টিরও বেশি ফাইন্যান্সিয়াল এবং কর্পোরেট ইন্ডাস্ট্রিজের বোর্ডে রয়েছেন।

বর্তমানে সেন্ট্রাল ব্যাংক অব মালয়েশিয়াতে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন তিনি। এছাড়াও সিঙ্গাপুরের এনটিইউসি, সাউথ আফ্রিকার আর নূর, লন্ডনের আইসিএমআইএফ এর উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেন তিনি। আর্ন্তজাতিক বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার চেয়ারম্যান হিসেবেও দ্বায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

দেশের জন্যে সবসময় কিছু করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন ডা. মাসুম। দেশের রাজনীতি নিয়ে ভাবেন তিনি।

আমপাংয়ের রেস্তোরাঁয় বসে কথা বলেন দেশের রাজনীতি নিয়ে। হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘একটা পরির্তন দরকার। সুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। আমাদের জনবল রয়েছে, দক্ষতা রয়েছে। প্রচুর সম্ভাবনাময় একটি দেশ বাংলাদেশ। তবে সকল ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব এদেশকে পিছিয়ে রাখছে। ’

দেশের রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রকে বিষফোঁড়া বলে মনে করেন ড. মাসুম। তিনি বলেন, ‘দেশের রাজনীতিতে বর্তমানে যারা রয়েছেন, তারা নিজের যোগ্যতাবলে  নয়, বরং সকলেই পারিবারিকভাবে এসেছেন। ’

তিনি বলেন, ‘দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে রাজনৈতিক দলগুলোতেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবে সেটি হচ্ছে না। দলগুলো হয়ে উঠেছে পরিবারকেন্দ্রিক। ’

আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে অর্থনীতির পরিকল্পনার অভিজ্ঞতা থেকে ড. মাসুম জানালেন নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরির পরিকল্পনার কথা। তিনি বলেন, ‘যে দেশ নোবেল পাওয়ার যোগ্যতা রাখে, সে দেশটি নিজস্ব অর্থায়নে একটি পদ্মাসেতুও নির্মাণ করতে পারে। কো-অপারেটিভ মাইক্রো ব্যান্ড চালু করেই দেশে পদ্মাসেতু নির্মাণ করা সম্ভব। সেই সাথে পদ্মাসেতুকে শেয়ারবাজারের আওতায় আনা যায়। ’

ড. মাসুমের মতে, শেয়ারবাজারের তালিকায় পদ্মাসেতু অর্ন্তভুক্ত হলে মানুষ হুমড়ি খেয়ে সেতুর শেয়ার কিনবে। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ধরা যেতে পারে ১ ডলার করে। শেয়ার হোল্ডাররা ইচ্ছে করলে যখন খুশি বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি মনে করেন, পদ্মাসেতুর শেয়ারের মূল্য বাড়বেই। এখানে জনগণ বিনিয়োগ করলে লাভবান হবে। এতে করে সরকারের সুবিধা হবে ঋণমুক্ত অর্থ সংগ্রহের এবং শেয়ার হোল্ডাররা অদূর ভবিষ্যতে হবে পদ্মাসেতুর মালিক। এছাড়াও অন্যান্য সহযোগী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সক্রিয় থাকলে বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণে কোনো সমস্যা নেই।

পদ্মাসেতুর দু’ধারে পরিকল্পিত পর্যটনকেন্দ্র, বিনোদনকেন্দ্র গড়ে তুলেও অর্থ আয় সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।

মালয়েশিয়াতে বেশ সম্মানের সঙ্গে বসবাস করছেন ড. মাসুম। মালয়েশিয়া তিনি ‘দাতু’ খেতাবও পেয়েছেন এরই মধ্যে। মালয়েশিয়া সরকারের আর্থিক পরিকল্পনা থেকে শুরু করে নীতি নীর্ধারণী ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখছেন এই অর্থনীতিবিদ।

মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত বাঙালিদের নিয়ে নতুন এক তথ্য দিলেন তিনি। বললেন, ‘চায়নিজ এবং মালয়িদের মতো এখানে জন্মসূত্রে বাঙালিও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শত বছর আগেই এখানে এসেছেন বাঙালিরা। তাদের অনেকেই আছেন বাংলায় কথা বলেন, কিন্তু লিখতে পারেন না। কিন্তু জন্মসূত্রে এসব বাঙালি এখন আর নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না। ’

তিনি বলেন, ‘বাঙালিরা যদি এখানে নিজেদের শক্ত কমিউনিটি গড়ে তুলতে পারতো, তবে আমরাও জাতি হিসেবে মালয়েশিয়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারতাম। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১৩
সম্পাদনা: এম জে ফেরদৌস, নিউজরুম এডিটর/ জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।