ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

নিউইয়র্ক

আটলান্টিক সিটিতে বাংলাদেশিদের নিজস্ব কমিউনিটি ভবন

আকবর হোসাইন, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩
আটলান্টিক সিটিতে বাংলাদেশিদের নিজস্ব কমিউনিটি ভবন

আটলান্টিক সিটি: যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিতে বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য মিলেছে নিজস্ব ভবন। ভবনটি তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ‍আয়োজনে যেমন ব্যবহৃত হবে।

তেমনি এখানেই গড়ে উঠবে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি উদ্যোক্তা আইটি প্রকৌশলী আবু বকর হানিফের পরিচালনায় পিপল অ্যান্ড টেকের একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র।  

গত ১৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সি এবং কমিউনিটির সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় আটলান্টিক সিটির ২৭০৯ ফেয়ার মাউন্ট এভিনিউর ভবনটি কেনার মধ্য দিয়ে সাউথ জার্সিতে বাংলাদেশিদের স্বপ্ন পূরণের প্রথম ধাপ অর্জিত হয়। দীর্ঘ দুই যুগ ধরে আটলান্টিক সিটিসহ সাউথ জার্সির বিভিন্ন সিটিতে বাংলাদেশিরা বসবাস করলেও সম্ভব হয়নি এখানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের জন্য একটি কমিউনিটি সেন্টার তৈরি করা। প্রায় আট হাজার বাংলাদেশির অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান ছিল না সিটিতে। ভবনটি কেনার মধ্য দিয়ে সে সমস্যা সমাধানের পথ পেলো এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটি।

৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্হাসহ দ্বিতল ভবনটিতে দুই হাজার মানুষের অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে। আর এই ভবনেই বসছে পিপল অ্যান্ড টেকের প্রশিক্ষণকেন্দ্র।

দুই লাখ ডলারের ভবনটি কেনার জন্য এরই মধ্যে ৬২,০০০ ডলার ব্যয় করা হয়েছে। বাকি অর্থ আগামী ৫ বছরে পরিশোধ করতে হবে।

এর আগে গত ১০ই ডিসেম্বর মঙ্গলবার বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সির সভাপতি জহিরুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে এবং আকবর হোসাইনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এবং ডোনারদের সঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন নেতাদের বৈঠক।

এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা এবং আওয়ামীলীগ নেতা আবদুর রফিক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি অব নিউজার্সির সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান চুন্নু, বাংলাদেশ-আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব অব আটলান্টিক সিটির সাবেক সভাপতি রহমান বাবুল, আওয়ামীলীগ নেতা নুরুন্নবী চৌধুরী শামীম, কমিউনিটির অন্যতম নেতা নাসির উদ্দিন শিকদার, পিপল অ্যান্ড টেকের প্রশিক্ষণ নিয়ে সদ্য চাকুরিপ্রাপ্ত মীর হোসাইন, প্রশিক্ষণার্থী জিয়াউর রহমান অনু, আইয়ান রশীদ, সালমা পারভীন, ননী হাসান, মরিয়ম বেগম এবং রিফাত জাহান।

অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্হিত ছিলেন পিপল অ্যান্ড টেকের সিইও এবং আইটি বিশেষজ্ঞ আবু বকর হানিফ।

তিনি ভবনটি কেনার ব্যাপারে পিপল অ্যান্ড টেকের পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতার আশ্বাস দেন। আবু বকর হানিফ এসময় বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি। বিপুল জনগণকে জনশক্তিতে রূপান্তর করে বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে ভারত এবং চীন।



তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার সামাজিক ব্যবসাতত্ত্বের মাধ্যমে যেভাবে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচেছন ঠিক তেমনি বর্তমানে বাংলাদেশে প্রয়োজন দেশের উন্নয়নকাজে সহযোগী হিসাবে বেসরকারি উদ্যোগ। যারা কোটি কোটি জনগণকে জনশক্তিতে পরিণত করবে স্বল্প সময়ের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। এই উদ্যোগটি নেয়া দেশে থেকে যেভাবে সম্ভব ঠিক তেমনি বিদেশে থেকেও সম্ভব।

আবু বকর হানিফ আরও বলেন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র থেকে জনশক্তি তৈরির এই কাজটিই করছে পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউট।

পিপল অ্যান্ড টেকের শিক্ষার্থীরাসহ ‍অন্য বক্তারা বলেন আবু বকর হানিফের সুচিন্তিত চিন্তাধারার কারণে বর্তমানে প্রায় ২০০০ বাংলাদেশি অড জব ছেড়ে আইটিতে চাকুরি করছেন। যাদের অধিকাংশই জড়িত ছিলেন ট্যাক্সি ক্যাব ড্রাইভিং, পিজা ডেলিভারি, ডেইলি কনস্ট্রাশন এমপ্লয়ি, কম বেতনের স্টোর কর্মচারী এবং হোটেল কর্মচারী হিসাবে। বিশেষ করে নিউইর্য়ক এবং ভার্জিনিয়ায় বসবাসকারী বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ নিয়ে চাকরি পেলেও নিউজার্সির আটলান্টিক সিটিসহ পার্শবর্তী এলাকায় বাংলাদেশিদের জন্য কম সময়ের প্রশিক্ষণ নিয়ে আইটি সেক্টরের চাকরি করার সুযোগ ছিলো না।

গত বছর অক্টোবর মাসে আটলান্টিক সিটিতে পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষণ সেন্টারটি খোলার পর থেকে ছয়জন বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের আইটি খাতে চাকরির মতো সোনার হরিণ ধরতে সক্ষম হয়েছেন, বলেন একজন বক্তা। আগামী মাসে আরও ২জন প্রশিক্ষণার্থীর আইটি চাকরিতে যোগ দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলেও জানান তিনি।

বক্তারা বলেন, আটলান্টিক সিটিতে এখন বেড়েই চলেছে পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। ছাত্রছাত্রীদের অধিকাংশই হচ্ছেন তারা, যারা দেশে অথবা বিদেশের উচ্চ শিক্ষা নিয়ে দীর্ঘদিন হতাশায় ভুগছিলেন।

পিপল অ্যান্ড টেকের প্রশিক্ষণ নিয়ে এরই মধ্যে চাকরি পেয়েছেন এমন শিক্ষার্থীরা তাদের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের শিক্ষক হিসাবে সিইও আবু বকর হানিফ, নিজাম উদ্দিন এবং শ্রীকান্তের প্রশংসা করেন। তবে তারা ক্লাস শেষে নিজের অনুশীলনের ওপর জোর দেন। বক্তারা বলেন, প্রশিক্ষণচর্চা, গবেষণা এবং শেষে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের কোনো তুলনা নেই। পিপল অ্যান্ড টেকের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি গ্রুপ স্টাডি খুবই প্রয়োজন বলেও তারা উল্লেখ করেন।

পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের আটলান্টিক সিটির পূর্ববতী প্রশিক্ষণ সেন্টারটি পার্কিং জটিলতার কারণে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে যারা চাকুরির সাক্ষাৎকার দেয়ার প্রস্তুতি নিচেছন তাদের গ্রুপ স্টাডি বিঘ্নিত হচ্ছিলো। খুব শিগগিরই বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথ জার্সি, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব আটলান্টিক সিটি, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, এবং অপরাপর সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিত্বদের সহযোগিতায় পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের নতুন প্রশিক্ষণ সেন্টার হিসাবে ২৭০৯ ফেয়ার মাউন্ট এভিনিউস্হ ভবনটি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। সুপরিসর এবং প্রায় ৫০টি গাড়ি পার্কিংয়ের সুবিধাসহ স্হানটি হয়ে উঠবে শতশত বাংলাদেশির আইটি প্রশিক্ষণের কেন্দ্রবিন্দু, এটাই সবার প্রত্যাশা।

আবু বকর হানিফ জানান, আগামী ৪ জানুয়ারি পিপল অ্যান্ড টেক ইনস্টিটিউটের নতুন প্রশিক্ষণ কোর্স শুরু হতে যাচেছ। আটলান্টিক সিটির বাংলাদেশিরা পিপল অ্যান্ড টেকের প্রশিক্ষণ নিয়ে নতুন জীবনের দ্বার উম্মোচন করতে পারবেন সেই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময় ১০১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৩
এমএমকে/জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।