ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রাতের ঢাকায় বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১১
রাতের ঢাকায় বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ

ঢাকা: দেশে যখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা বলা হচ্ছে, ঠিক সে সময়েই খোদ রাজধানীতে বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। রাতের বেলা অকারণেই জ্বলছে হাজার হাজার বৈদ্যুতিক বাতি।



‘আমরা বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী’ বাণী ঝুলিয়ে রাখলেও খোদ বিদ্যুৎ ভবনে রাতের বেলা অকারণে জ্বালিয়ে রাখা হচ্ছে অসংখ্য লাইট। ওয়াপদা ভবনের প্রবেশ দ্বারেও আলোর অকারণ ঝলকানি।

রোববার গভীর রাতে রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যুৎ অপচয়ের মহোৎসব। আর বিদ্যুৎ অপচয়ের দিক থেকে সব চেয়ে এগিয়ে আছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো।

ব্যাংকগুলোর একেকটি শাখায় ৩ থেকে ৪টি করে সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে, যার একেকটিতে ৫০ থেকে ১০০টির অধিক টিউব লাইট লাগানো রয়েছে।

রাত ২টায় অফিস বন্ধ, তবুও ৯৯ মতিঝিল করিম চেম্বারের পাট অধিদপ্তরে সিঁড়ি এবং অফিসে জ্বলতে দেখা গেছে অসংখ্য লাইট। পাট অধিদপ্তরের গাড়ির গ্যারেজেও বেশকিছু লাইট জ্বলতে দেখা গেছে।

পাট অধিদপ্তরের গার্ড নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, অফিসে রাতে লোক থাকে তো তাই আলো জ্বালানো রয়েছে।

রাত ২টায় অফিসে কি কাজ করছে না ঘুমিয়ে পড়েছে। এ প্রশ্নের জবাবে নজরুল বলেন, ‘এখনতো ঘুমানোই স্বাভাবিক। ’

ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক। এই ৯৯ মতিঝিলে করিম চেম্বারে অবস্থিত ব্যাংকটির মতিঝিল এবং প্রধান কার্যালয়ের বিশাল আকারে ৩টি এবং এটিএম বুথের জন্য একটি বিশাল আকার সাইনবোড টানানো হয়েছে।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের শুধু এখানেই নয়, এই শাখার উল্টোদিকে ৫৩ মতিঝিলে বিশাল আকারের ৩টি সাইনবোর্ড গুলশান শাখাও ৫টি সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। যেগুলোতে কয়েক শ লাইট জ্বলতে দেখা গেছে।

এই বিশাল আকারের সাইনবোর্ডগুলোর একেকটিতে প্রায় ৫০ এর অধিক ৪০ ওয়ার্টের টিউব লাইট লাগানো আছে। রাতের বেলা রাস্তায় লোকজন নেই, ব্যাংকিং কার্যক্রমও বন্ধ। তবুও রাতভর বিদ্যুতের শ্রাদ্ধ করা হচ্ছে।

ওই এলাকায় মজিবর রহমান নামের এক পুলিশ কনস্টেবল মন্তব্য করেন, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকওয়ালারা না কথায় কথায় ধর্মের দোহাই দেয়। তাহলে তারা নিজেরা মানে না কেন। ইসলাম ধর্মেতো স্পষ্ট করেই বলা আছে, যারা অপচয় করে, তারা শয়তানের ভাই।

তিনি বলেন, ‘একইভাবে আরো বলা আছে, নিশ্চয় আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না। ’

তিনি দাবি করেন, ব্যাংকটির একেকটি সাইনেবোর্ডে ঘণ্টায় প্রায় ২০০০ হাজার কিলোভোল্ট অপচয় হচ্ছে। অথচ তারা ইচ্ছা করলেই এসব লাইট বন্ধ রাখতে পারে। তাতে তাদের কোনো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরের অবস্থানেই আছে এবি ব্যাংক। মতিঝিলের বিসিআইসি ভবনে অবস্থিত এবি ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসে বিশাল আকারের সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। যাতে প্রায় ১০০টির অধিক টিউব লাইট লাগানো আছে।

ইসলাম ধর্মমতে পরিচালিত এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশেও বিদ্যুতের ব্যাপক অপচয় করতে দেখা গেছে। ৭৫ গুলশান এভিনিউয়ে ব্যাংকটির গুলশান শাখায় ৫টি সাইনবোর্ডে অসংখ্য লাইট জ্বলতে দেখা গেছে।

শুধু এই বিশাল সাইনবোর্ড লাগিয়েই তারা খান্ত হননি। ৫শ ওয়াটের ৩টি সার্চ লাইট, ১৪টি ১শ ওয়াটের লাইট, এটিএম বুথের জন্য দুটি সাইনবোর্ড বসিয়েছে।

এবি ব্যাংকের নাইট গার্ড সাইফুল বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আরো লাইট এবং আরো একটি সাইনবোর্ড শিগগিরই টানানোর জন্য কর্তৃপক্ষ নির্দেশ দিয়েছে।

মহাখালীতে একটি ভবনে সাইনবোর্ড টানানোর রীতিমতো প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা গেছে। দেখে মনে হয়েছে কে কার চেয়ে বড় সাইনবোর্ড টানাতে পারে।

ভবনটিতে ঢাকা ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক এবং বাটার ফ্লাই যে সাইনবোর্ড ঝুলিয়েছে সেগুলির দৈঘ্য কমপক্ষে ১৫০ ফুটের কম নয়। বাটারফ্লাই সাথে আরো একটি ঝুলিয়েছে। সাথে সমানতালে রয়েছে প্রিমিয়ার ব্যাংক।

৯০ মহাখালীতে ফখরুল ইসলাম সিকিউরিটিজ লি. এর অফিসে প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি লাইট জ্বালানো ছিলো অফিস বন্ধ থাকলেও।

বেরসরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি আমাদের সরকারি ব্যাংক জনতা, পুবালী এবং রূপালিও পিছিয়ে নেই। সোনারগাঁও রোডে একটি ভবনে জনতা ব্যাংকের সোনারগাঁও শাখায় ৪টি বিশাল আকারের আলো ঝলমলে সাইনবোর্ড দেখা গেছে।
 
 এর মধ্যে ২টি সোনারাগাঁও রোড শাখার, ২টি বিভাগীয় কার্যালয়ের। স্থানীয়রা মন্তব্য করেছেন, একটি শাখার জন্য একটি সাইনবোর্ড থাকলেই যথেষ্ট। কিন্তু দুটি করে সাইনবোর্ড টানানো অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়।

তবে আশার কথাও রয়েছে। ব্যাবসায়ীদের সর্ববৃহৎ সংগঠন এফবিসিসিআই এর মূল ভবনে বিদ্যুতের সাশ্রয় করতে দেখা গেছে।

ফেডারেশন ভবনে মাত্র ১টি লাইট জ্বালানো ছিলো। এর পার্শ্বেই ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই সার্ভিস সেন্টারের বিশাল সাইনবোর্ড থাকলেও তাতে মাত্র ১টি লাইট জ্বালাতে দেখা গেছে।

ব্র্যাক ব্যাংকের এই সাইনবোর্ড দৃষ্টান্ত হতে পারে। কারণ ব্র্যাকের এই সাইনবোর্ডটিতে যেমন লেখা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। তেমনিভাবে রাস্তাকেও আলোকিত করেছে।

রাতে ঠিক যখন এই অবস্থা তখন বাংলাদেশ ন্যাশনাল লোড ডিসপার্স সেন্টার বাংলানিউজে জানিয়েছে, রোববার রাতে ঢাকা শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো ১৩০০ মেগাওয়াট। গরমের সময়ে এই চাহিদা থাকে ২ হাজারের ওপরে।

দেশের শীত নেমে আসায় রোববার রাতে দেশে ৩ হাজারের মেগাওয়ার্টের নিচে বিদ্যুতের চাহিদা ছিলো বলে তিনি জানান।

চাহিদা কম থাকার কারণে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে উৎপাদন বন্ধ রাখা হয় রোববার রাতে।

তিনি মন্তব্য করেন, সারা দেশের যে চাহিদা, তার প্রায় অর্ধেক ঢাকা সিটির। সাইনবোর্ড এবং বিলবোর্ডগুলোর কারণে চাহিদা বেশি বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পাওয়ার সেলের পরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আমরা মিতব্যায়ী হলে চরম লোড শেডিং থাকার কথা নয়।

সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকার যেহেতু ভর্তুকি দিচ্ছে, সে কারণে বিদ্যুৎ ব্যবহারে গাইড লাইন থাকা উচিত। যাতে কেউ অপচয় করতে না পারে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।