ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

বিক্ষোভেই ঘুরপাক খাচ্ছে খালেদার মুক্তি আন্দোলন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১১, ২০১৯
বিক্ষোভেই ঘুরপাক খাচ্ছে খালেদার মুক্তি আন্দোলন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ফাইল ফটো

ঢাকা: কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করা হবে। গত ২২ মাস ধরে বিএনপি নেতাদের মুখে এমন হুমকি বহুবার শোনা গেলেও বিক্ষোভ কর্মসূচির মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে এই মুক্তি আন্দোলন।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে যান খালেদা জিয়া। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) তার কারাগারে যাওয়ার ৬৭২দিন পূর্ণ হয়েছে।

আর দুই মাস পরই হবে তার জেল জীবনের দু’বছর। দলের লাখ লাখ নেতাকর্মী মুক্তির দিন গুনলেও আইনি প্রক্রিয়ায় তার মুক্তি হচ্ছে না। নেতারা সভা-সমাবেশে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছেন। বিক্ষোভ মিছিল ছাড়া কর্মসূচি কিছু দেখা যাচ্ছে না।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইনিভাবে যিনি কারাগারে রয়েছেন, তাকে আন্দোলনের মাধ্যমে কীভাবে মুক্ত করবে? এটা রাজনৈতিক বক্তব্য ছাড়া আর কিছু নয়। অপরদিকে, সরকারের মন্ত্রী কিংবা সরকারি দলের সিনিয়র নেতারাও বলছেন, আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে না।

সরকার না চাইলে খালেদা জিয়ার জামিন হবে না, এমন কথা বলে তার আইনজীবীরাও হাল ছেড়ে দিয়েছেন। সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে তার জামিন পাওয়াতে বিলম্বিত হওয়ায় আরও ভেঙে পড়েছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। হতাশা থেকে আইনজীবীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন প্রধান বিচারপতির এজলাসে।

এদিকে, বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, দলীয় চেয়ারপারসন কারাগারে যাওয়ার পর প্রায় দু’বছর হতে চললো। কিন্তু বিএনপি নেতারা একটি হরতাল দিতে পারলেন না। তাদের সুরে সুর মিলিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরীকদল নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাও ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির সমাবেশে গিয়ে বলেছেন, আপনাদের দলের নেত্রীর মু্ক্তির জন্য একটি হরতালও দিতে পারলেন না?

গত ১৯ অক্টোবর বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ নারী ও শিশু অধিকার ফোরাম আয়োজিত সেমিনারে যোগ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে বলেছিলেন, আপনাদের নেত্রীকে কারাগারে রেখে আপনারা ঘুমান কী করে?

যে যা-ই বলুক, খালেদা জিয়ার কারাবাস দুই বছরের কাছাকাছি হলেও বিএনপির আন্দোলন হুমকি-ধামকি বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। এখান থেকে বেরিয়ে তারা কোনো কঠোর কর্মসূচি দেবে কি-না, সে বিষয়ে কেউ মূখ খুলছেন না।

তবে দলটির সিনিয়র নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গত ৩ ডিসেম্বর প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ৫ ডিসেম্বর নেত্রীর জামিন না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। ৫ ডিসেম্বর জামিন হয়নি। কিন্তু ড. মোশাররফের কথা অনুযায়ী কোনো কর্মসূচি দেখা যায়নি।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে বিজয় দিবস ও শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে যৌথসভার পরে দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে সারাদেশে একদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার এই কর্মসূচি ঘোষণার পরপরই বিএনপি কার্যালয়ে অবস্থানরত নেতাকর্মীদের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়ে যায়। অনেককে বলতে শোনা যায়, ম্যাডামের মুক্তির দাবিতে ওনারা কী আর কোনো কর্মসূচি খুঁজে পান না। দু’দিন পরপরই বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আর সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে দলীয় কার্যালয়ের সামন থেকে জন পঞ্চাশেক নেতাকর্মী নিয়ে ঝটিকা মিছিল করেন। এ ধরনের কর্মসূচি দিয়ে কী নেত্রীকে মু্ক্ত করা যাবে?

এসময় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিএনপি কর্মী বাংলানিউজকে বলেন, সবাই যদি সরকারের দালালি করে, তাহলে নেত্রীর মুক্তির জন্য কর্মসূচি কে দেবে?

তিনি বলেন, নেত্রী জেলে বসে মৃত্যুর প্রহর গুনলেও দালালি করে নেতারা তো সবাই ভালোই আছেন। কর্মসূচি দেওয়ার দরকার কী?

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা মাঠ ছাড়িনি। আন্দোলনের মধ্যেই আছি। সরকার যেটা চেয়েছিল, তাতে সফল হয়নি। সরকার ধারণা করেছিল খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখলে বিএনপি শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু দুই বছরেও বিএনপি ভাঙতে পারেনি।

২২ মাসে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কী কী কর্মসূচি দিয়েছেন- জানতে চাইলে আব্দুস সালাম বলেন, আমরা সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছি। মানববন্ধন করেছি, অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। মিছিল সমাবেশ প্রায় প্রতিদিনিই চলছে। তবে হরতাল দেওয়া হয়নি।

খালেদা জিয়ার জামিন না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে কি-না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কঠোর কর্মসূচি আসবে কি-না জানি না। তবে আমরা শেষ পর্যন্ত মাঠে থাকব।

খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিলে দলীয় নেতাকর্মীদের স্বেচ্ছায় কারাবরণ করার কথা শুনেছিলাম। ২২ মাসে কেউ কী স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেছেন? জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমার জানামতে কেউ স্বেচ্ছায় কারাবরণ করেনি।

বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু বাংলানিউজকে বলেন, ফ্যাসিবাদী সরকার অন্যায়ভাবে দেশনেত্রীকে কারাগারে রেখেছে। পাঁচ বছরের সাজায় এতদিন জেল খাটার নজির বাংলাদেশে নেই। কিন্তু সরকার প্রতিহিংসার বসবর্তী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কারাগারে রেখেছে। জামিনে বাধা দিচ্ছে। আমরা তার মুক্তির জন্য ইতোমধ্যে শান্তিপূর্ণভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি।

তিনি বলেন, আমাদের নেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে কঠোর নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তার মুক্তির দাবিতে এমন কোনো কর্মসূচি যেন না দেওয়া হয়, যাতে জনগণের দুর্ভোগ হয়। সেজন্য হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। তবে সামনে ১২ ডিসেম্বর যদি জামিন না হয় তাহলে দলের হাই কমান্ড বসে অবশ্যই সিদ্ধান্ত নেবে। আর কঠোর আন্দোলন তারিখ দিয়ে হয় না। কখন আন্দোলন হবে সেটা আগে বলা কঠিন।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৯
এমএইচ/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।