ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

হাইকোটের নির্দেশে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন আ’লীগ নেতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫০ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
হাইকোটের নির্দেশে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইলেন আ’লীগ নেতা শ্মশানে গিয়ে ব্যানারে উঁচিয়ে ক্ষমা চান আজিজুল হক

বগুড়া: শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টা করায় হাইকোর্টের নির্দেশে স্থানীয় জনগণের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হক।

বুধবার (২৩ মে) বিকেলে তিনি একটি ব্যানার নিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষী বানাইল মহাশ্মশানে উপস্থিত হয়ে স্থানীয়দের কাছে ক্ষমা চান।

ব্যানারটিতে লেখা ছিলো, “বানাইল মহাশ্মশান নিয়ে সভাপতি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আর কোনো বিরোধ নেই।

আমরা একে অপরের সহযোগিতার ভিত্তিতে সহাবস্থান করবো এবং শান্তিময় পরিবেশের অঙ্গীকারাবদ্ধ। ”

এর আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষী বানাইল মহাশ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হককে ভর্ৎসনা করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আদালত তাকে কৃতকর্মের জন্য স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন। আগামী রোববার (২৭ মে) এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক বানাইল মহাশ্মশানে পৌঁছানোর খবর ছড়িয়ে পড়লে সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ সেখানে ভিড় জমান। এরপর উপস্থিত জনগণের মাঝে ব্যানার উঁচিয়ে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

এ সময় আজিজুল হক ক্ষমা চেয়ে বলেন, “শ্মশান দখল নিয়ে শুরু থেকেই মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়। আমি জায়গাটি কিনেছিলাম। পরে জানতে পারি এটি শ্মশান। তখন চুপ ছিলাম। ”

তিনি আরও বলেন, “যা হয়েছে ভুল হয়েছে। এই জায়গা আমার নয়। এখন থেকে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যা করার করবে। আমি তাদের সহযোগিতা করবো। ”

শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ণ কানু বাংলানিউজকে বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হক মঙ্গলবার (২২ মে) রাতে সিদ্ধান্ত নেন বিকেলে শ্মশানে গিয়ে ক্ষমা চাইবেন। বিষয়টি তিনি আমাদের জানালে আমরা সেই হিসেবে প্রস্তুতি নেই এবং অপেক্ষা করি। পরে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি শ্মশানে আসেন এবং শতশত মানুষের উপস্থিতিতে তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান। পাশাপাশি তিনি শ্মশানের ব্যাপারে আমাদের সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

ক্ষমা প্রার্থনাকালে শতবর্ষী বানাইল বারোয়ারী শিবমন্দির এবং শ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শ্রী কৃষ্ণ মোহন্ত, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ণ কানু, সাধারণ সম্পাদক শিশির সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রহ্লাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক দুলাল অধিকারী, বাবু রতন কুমার রায়, নিশিকান্ত সাহা, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মির্জারুল আলম চৌধুরী শাহাজাদা,বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুর মান্নান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান, ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়শনের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ রিজু উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সংঘ্যালঘু সম্প্রদায়ের শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করার অভিযোগের ঘটনায় বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আজিজুল হককে তলব করেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত হাইকোর্টের জারি করা রুল শুনানিতে রোববার (১৩ মে) বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ তাকে ক্ষমা চাওয়ার আদেশ দেন।

আগামী ২০ মে আজিজুল হককে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। নির্ধারিত তারিখে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখা দিতে গেলে আদালত বলেন, স্থানীয় জনগণের কাছে ওই অপকর্মের জন্য শ্মশানে ব্যানার লাগিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। ব্যানারে লিখতে হবে, ‘শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টা করে আমি ভুল করেছি। এ ধরনের কাজ আর কোনো দিন করব না। ’ 

আদেশে আরও বলা হয়, ব্যানার টানিয়ে ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানে ওই শতবর্ষী শ্মশানের কমিটিকে উপস্থিত রাখতে হবে। ওই ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানের ছবি আগামী রোববারের মধ্যে হাইকোর্টে উপস্থাপন করতে হবে। একইসঙ্গে আগামী রোববার দখল চেষ্টা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে বিষয়টি আদালত দেখবেন।

শ্মশান দখল করা নিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ জুন একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ প্রতিবেদনযুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট করে। এ রিট আবেদনে ওই বছরের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং স্থাপনা নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।  

আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে হাইকোর্টে। এ রুলের ওপর শুনানির সময় আগামী রোববার উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তলব করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৪ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০১৮
এমবিএইচ/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।