ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭
মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান

ঢাকা: মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেই রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চায় সরকার। এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ তৈরিতে ব্যাপক তৎপর হলেও দেশটির সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক রয়েছে সরকার।  

সরকার ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা জানান, শুরু থেকেই বাংলাদেশের অবস্থান কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান করা।

এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দিতে বিশ্বের কাছে আহ্বান জানানো হচ্ছে। জাতিসংঘের অধিবেশনে বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের এ অবস্থানের ফলে ইতিবাচক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলেও মনে করছেন ওই নীতিনির্ধারকরা।  

বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) মিয়ানমারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা থাউং টুন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর বৈঠকে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। এ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবিলম্বে সহিংসতা বন্ধ করতে বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে সমস্যার সমাধান হতে পারে বলেও জানানো হয়েছে।  

এ প্রস্তাবে মিয়ানমারের উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে আলোচনায় বসতে চান তারা। আলোচনার জন্য মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর বা কার্যত প্রধানমন্ত্রী অং সান সু চির প্রতিনিধি ঢাকায় আসতে পারেন বলেও সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে।  

জাপানের নিকি এশিয়ান রিভিউ পত্রিকাকে গত বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) দেওয়া সাক্ষাৎকারে অং সান সু চি বলেছেন, কিছু শরণার্থীকে ফেরত নিতে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া শুরু করতে প্রস্তুত রয়েছেন তিনি। যেকোনো সময় এ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে শরণার্থীদের পালিয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করারও চেষ্টা চলছে।  


তবে মিয়ানমারের সর্বশেষ এ অবস্থানকে সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সরকার। সমস্যার সমাধান বের হয়ে না আসা পর্যন্ত চলমান কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রাখা হবে।  

সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানান, মিয়ানমার থেকে অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হয়ে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছেন, তারা সে দেশের নাগরিক। তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর লক্ষ্য নিয়েই কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্কও অব্যাহত থাকবে।  

মন্ত্রীরাও প্রায়ই বলছেন, ‘আমরা কোনো উস্কানিতে কান দিতে চাই না। কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েই সমস্যার সমাধান করা হবে’।    

এ নীতি অনুসরণ করেই গত ০৬ সেপ্টেম্বর খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে চাল আমদানির চুক্তি করতে যান। ফিরে এসে খাদ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে জানান, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করেই আমি মিয়ানমারে যাই। তাদের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্যও চলবে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতাও চলবে। প্রধানমন্ত্রী এটাই আমাকে বলেছেন’।     

গত ১৭ সেপ্টেম্বর চাল সংক্রান্ত চুক্তির বিষয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলও বাংলাদেশে আসেন।  

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সাংবাদিকদের বলেন, ‘মিয়ানমারের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে। যতোদিন তারা কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন না করবে, ততোদিন ব্যবসা-বাণিজ্যও চলবে’।  

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বাংলানিউকে বলেন, ‘কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়ে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরির মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের নীতি নিয়ে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। আমরা কারো উস্কানিতে কান দেবো না। এটিই শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত’।  

বাংলাদেশ সময়: ০০৩০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৭ 
এসকে/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad