ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

সব কিছুতেই কালক্ষেপণ বিএনপির

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
সব কিছুতেই কালক্ষেপণ বিএনপির

ঢাকা: ক্ষমতায় নেই; নির্বাচনে বর্জন করায় সংসদেও নেই প্রতিনিধিত্ব, গত আড়াই বছর ধরে রাজপথের আন্দোলনেও নেই দলটি। তারপরও সাংগঠনিক কাজসহ সব কিছুইতে বিএনপির ধীর গতি বিরাজমান। 

দলটির নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা বলছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে- কালক্ষেপণ-ই যেন বিএনপির ললাট লিখন।
 
তাদের ভাষ্য, কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়াই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ ঝুলিয়ে রাখছেন খালেদা জিয়া।

অথচ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা রাষ্ট্র পরিচালনাসহ সব দিক সামাল দিয়ে সাংগঠনিক কাজগুলোও নির্দিষ্ট সময়েই সেরে ফেলছেন।
 
অন্যদিকে সরকার ও সংসদের বাইরে থেকেও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সাংগঠনিক কাজগুলো গুছিয়ে উঠতে পারছেন না। কখনও বলা হয়েছে ঈদের পরে, কখনও রোজার পরে, কখনও নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনে বিএনপির রূপ রেখা ঘোষণার পরে। কখনও বা বলা হয়েছে, ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি পদগুলো নিয়ে বসবেন খালেদা জিয়া।
 
আর এখন বলা হচ্ছে, লন্ডন থেকে ফেরার পর স্থায়ী কমিটির খালি পদসহ কেন্দ্রীয় কমিটি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো নিয়ে বসবেন বিএনপির চেয়ারপারসন।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আড়াই মাসের লন্ডন সফর শেষে আগামী ৩ অক্টোবর দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া। বিভিন্ন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী নেতারা অধির আগ্রহে বসে আছেন, লন্ডন থেকে ফিরেই কমিটিগুলো ঘোষণা করবেন তাদের নেত্রী। পদের প্রত্যাশায় থাকা নেতাদের পৌনে দুই বছর অপেক্ষার অবসান ঘটবে।
 
গত বছর ১৯ মার্চ অনুষ্ঠিত জাতীয় কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়, আওয়ামী লীগের আদলে বিএনপিতে মন্ত্রণালয় ভিত্তিক উপ কমিটি গঠন করা হবে। যে কমিটিতে আরও কয়েকশ’ নেতাকে পদায়ন করা হবে।

 আরও পড়ুন>>
** 
সুযোগ হাতছাড়া করতে চায় না বিএনপি

এরই প্রেক্ষিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদবঞ্চিত হাজার হাজার নেতা উপ কমিটিতে সহ-সম্পাদক পদের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে খালেদা জিয়ার কাছে সিভি জমা দেন। এর পর কেটে গেছে দেড় বছর। কিন্তু বিএনপির উপ কমিটি আলোর মুখ দেখেনি।
 
বিষয়টি নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুর ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও মো. শাহজাহানসহ শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার কথা হয় বাংলানিউজের।
 
গত দেড় বছরে তাদের প্রায় সবাই একই কথা বলেছেন- এই ঈদের পরে, রোজার পরে, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনে বিএনপির রূপ রেখা ঘোষণার পরেই উপ কমিটিসহ কেন্দ্রীয় কমিটির শূন্য পদগুলোতে নেতা নিয়োগ দেবেন খালেদা জিয়া।  

কখনওবা তারা বলেছেন- ‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় কমিটির বাকি পদগুলো নিয়ে বসবেন বিএনপির চেয়ারপারসন। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত আর বসা হয়নি তার।

‘ভিশন ২০৩০’ ঘোষণার ২ মাস ৫ দিন পর চিকিৎসার জন্য লন্ডন যান খালেদা জিয়া। কিন্তু এর মধ্যে উপ কমিটি নিয়ে তিনি বসেছেন-এমন খবর বিএনপির কোনো নেতার কাছে নেই। শীর্ষ নেতারাও এ ব্যাপারে জোর দিয়ে কিছু বলতে পারছেন না।
 
শুধু উপ কমিটি নয়, ১৯ সদস্যের জাতীয় স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ শূন্য রয়েছে। এ তিন পদে গত পৌনে দুই বছরেও লোক নিয়োগ দিতে পারেননি খালেদা জিয়া। সম্ভব্য প্রার্থীরা পথ চেয়ে চেয়ে এখন পথ চাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
 
এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটিতে বেশ কয়েকটা সম্পাদক ও সহ-সম্পাদকের পদ শূন্য রয়েছে। সেখানেও লোক নিয়োগের বিষয়টি বেমালুম ভুলে বসে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন! জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তার টেবিলে পড়ে আছে গত ছয় মাস ধরে। সেটিও নেড়ে-চেড়ে দেখার সময় হয়নি তার! 
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দল গুছিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের নামার যে ‘আওয়াজ’ খালেদা জিয়া দিয়ে আসছিলেন, সেটি বাস্তবে রূপ দেওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে গুরুতপূর্ণ কাজে কালক্ষেপণের কারণে। বিএনপির পিছিয়ে যাওয়ার পেছনে কাজের ক্ষেত্রে কালক্ষেপণকেও অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন তারা।
 
এ প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, একটা বিষয় বুঝতে হবে, আমরা কিন্তু আমাদের গতিতে কাজ করতে পারি না। সরকারের নানামুখী চাপ ও অনমনীয় মনোভাবের কারণে সাংগঠনিক কাজ গুছিয়ে ওঠা আমাদের জন্য অনেক সময় কঠিন হয়ে যায়। যে কাজগুলো বাকি আছে, সেগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ধাপে ধাপে শেষ করা হবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এজেড/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।