ঢাকা, শনিবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

খালেদা জিয়া যদি দেশে থাকতেন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
খালেদা জিয়া যদি দেশে থাকতেন! বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ফাইল ফটো

ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে প্রধান বিচারপতির ‘রাজনৈতিক’ পর্যবেক্ষণ, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিয়ে সৃষ্ট ‘জাতীয় সংকট’ এবং সর্বশেষ চালের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি-গুরুত্বপূর্ণ এ তিনটি ইস্যুতেও তেমন কিছু করতে পারছে না বিএনপি।

সভা-সেমিনার ও মানববন্ধনে নিন্দা-প্রতিবাদ, সরকারের সমালোচনা আর দাবি-দাওয়া তুলে ধরার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দলটি। জাতীয় এ ইস্যুগুলো কাজে লাগিয়ে দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করার সুযোগটাও হাতছাড়া হচ্ছে বিএনপির।


 
অবশ্য এর নেপথ্য কারণ হিসেবে সরকারের অনমনীয় মনোভাবকে দায়ী করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। তারা বলছেন, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের সুযোগ অনেক আগেই সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে সরকার। হলরুমে সভা-সেমিনার ছাড়া রাজপথে সভা-সমাবেশ, মিছিল মিটিং করতে দিচ্ছে না। এমনকি দুস্থদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণেও বাধা দেওয়া হচ্ছে।
 
পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে গত ১৮ জুন চট্টগ্রামে হামলার শিকার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ১৩ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাওয়ার সময় বিএনপির ত্রাণবাহী ২২টি ট্রাক আটকে দেওয়া হয়।
 
এসব উদাহরণ টেনে দলটির নেতারা বলছেন, সদিচ্ছা থাকলেও সরকারের অনমনীয় মনোভাবের কারণেই তারা কিছু করতে পারছেন না। সরকার অন্যান্য ইস্যুর মতো রোহিঙ্গা ইস্যুতেও বিএনপিকে কোণঠাসা করে রেখেছে। ত্রাণ তৎপরতার মতো মানবিক কাজেও তাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে।
 
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি নেতাদের এ অভিযোগ কিছুটা সত্য হলেও মূলত দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতির কারণেই বড় ইস্যুগুলো হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে বিএনপির। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা ও দলের একক কর্তৃত্ব খালেদা জিয়ার হাতে থাকায় বড় কোনো সিদ্ধান্ত শীর্ষ নেতারা নিতে পারছেন না।
 
ওভার টেলিফোনে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মাধ্যমে যে বার্তা তিনি লন্ডন থেকে ঢাকা পাঠাচ্ছেন সেগুলোই বাস্তবায়ন করার চেষ্টা হচ্ছে। চলমান ইস্যুতে ঢাকা থেকে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন না বিএনপি নেতারা।
 
সূত্রমতে, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা বোধ করেন বিএনপি নেতারা। দীর্ঘদিন ধরে সভা, সেমিনার, টক শো-তে যে রাজনৈতিক বক্তব্য তারা দিয়ে আসছিলেন, সেগুলোরই প্রতিফলন দেখতে পান রায়ের পর্যবেক্ষণে।
 
এতে করে সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলার একটা প্লাটফর্ম পেয়ে যান বিএনপি নেতারা। কিন্তু গত ১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনীর চূড়ান্ত রায় প্রকাশের ১৫ দিন আগেই ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে উদ্দেশ্যে রওনা দেন খালেদা জিয়া। তাই রায় নিয়ে বিএনপি নেতারা নানা কথা বললেও দলের চেয়ারপারসনের মুখ থেকে দলীয় অবস্থান জানতে পারে নি নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা।
 
ফলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের বলতে শোনা গেছে- আহ! খালেদা জিয়া যদি দেশে থাকতেন। এমন কি জোট নেতাদেরও বলতে শোনা গেছে, ষোড়শ সংশোধনী রায় ইস্যুতে আমরা অনেকটা পিছিয়ে গেছি ম্যাডাম না থাকায়।
 
এদিকে ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে যখন রাজনীতির মাঠ সরগরম, ঠিক সেই সময় আগস্টের মাঝামাঝিতে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে রোহিঙ্গাদের জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিপদাপন্ন রোহিঙ্গা নারী-শিশু-বৃদ্ধ-বৃদ্ধাসহ নানা বয়সী লাখ লাখ মানুষ কক্সবাজারের উখিয়া সীমান্তে আশ্রয় নেয়।
 
শুরুর দিকে রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণ ও জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন বাংলাদেশে সরকার তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিলো। এ সময় সরকারের তুমুল সমালোচনার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার জোর দাবি জানায় বিএনপি।
 
এক সময় মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশের দরজা খুলে দেয় সরকার। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে অসহায় রোহিঙ্গাদের বুকে টেনে নেন। সংসদে ঘোষণা দেন, ‘প্রয়োজনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে খাবার ভাগ করে খাব’।
 
এরপর একে একে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, বিরোধী দলের নেতা রওশন এরশাদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রধান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করছেন। কিন্তু রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এখনো ব্যক্তিগত সফরে লন্ডনে অবস্থান করছেন!
 
বিশ্লেষকরা বলছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতেও পিছিয়ে গেলেন খালেদা জিয়া। প্রধান প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ যখন বিষয়টিকে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক-সব দিক থেকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে গেছেন, তখন বিএনপি চেয়ারপারসন সুদূর বিলেত থেকে বিবৃতি ও দলের নেতাদের নির্দেশ প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছেন।
 
বিষয়টি নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যেও আলোচনা হচ্ছে। তারা মনে করেন, এই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার দেশে থাকা প্রয়োজন ছিলো। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন যখন সোচ্চার, তখন বিএনপির মতো একটি দলের প্রধান হিসেবে খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে থাকা সমীচীন নয়।
 
এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের চেয়ারপারসন দেশে থাকলে ভালো হতো। কিন্তু তার সুস্থতার কথাও আমাদের ভাবতে হবে। তিনি লন্ডনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসকের ছাড়পত্র ছাড়া তিনি আসতে পারছেন না। তবে তিনি সেখান থেকেই আমাদের প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।