ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

রাজনীতি করতে চাইলে বিচারপতির আসন ছেড়ে দিন 

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৭
রাজনীতি করতে চাইলে বিচারপতির আসন ছেড়ে দিন  মাহবুব-উল আলম হানিফ- ছবি: সুমন শেখ

ঢাকা: রাজনীতি করতে চাইলে বিচারপতির আসন ছেড়ে দিয়ে মাঠে আসুন। সাংবিধানিক পদে থেকে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলে বিচার বিভাগকে কলুষিত করবেন না। প্রধান বিচারপতির আসনে বসে এতো কথা বলার কি প্রয়োজন?

সোমবার (২১ আগষ্ট) ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে এ জাতীয় শোক দিবসের শ্রদ্ধা এবং ২১ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্বরণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি আয়োজিত 'সেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি ও আলোচনা সভায় প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
 
হানিফ বলেন,  বিচারপতিরা আপনাদের সাংবিধানিক শপথের কি হচ্ছে?  আজকে গুটি কয়েক বিচারপতি, তাদের কর্মকান্ড ও কথাবার্তায় গোটা বিচার বিভাগকে বিব্রত করছে।

জনগনের প্রশ্নের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছে। সাংবিধানিক পদে থেকে আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে জনগণের কাছে আপনারা প্রশ্নবিদ্ধ হন।

ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে তিনি বলেন,  ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পরে যে পর্ষবেক্ষণ দিয়েছেন এতে বুঝা গেছে জনগনের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে তা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে নিয়ে গেলেন। তা পৃথীবীর কোনো দেশে নেই। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল শুধুমাত্র পাকিস্তানে আছে। মেজর জিয়া সংসদের হাত থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কউন্সিল গঠন করেছিলেন। আপনারা একইভাবে তাই করলেন।
 
আমরা অবাক হয়ে যাই,  ১৯৭১ সালে যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিলাম। ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে। বাতিল করেছে যে রায়, জনগনের ক্ষমতা থেকে সু্প্রিম জুডিশিয়‍াল কাউন্সিল গঠন করলেন। এই উপমহাদেশ তথা সারা পৃথীবীর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সেটা নেই। একমাত্র পাকিস্তানে আছে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল। আপনারা সেটা প্রতিষ্ঠিত করলেন। এই বাংলাদেশে পাকিস্তানের দোসর জিয়াউর রহমান ১৯৭৪ সালে সংসদ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সু্প্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করেছিলেন। আপনিও বাংলাদেশে পাকিস্তান প্রীতি দেখিয়ে জনগনের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সেই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করলেন।

আপনি বিচারপতি হয়ে বিচারকের চেয়ারে বসে এতো কথা বলার কি প্রয়োজন আছে? আপনি যদি রাজনীতি করতে চান, বিচারপতি ছেড়ে এসে রাজনীতির মাঠে নামুন। কথা বলুন জনগণের সামনে। সাংবিধানিকভাবে ঐ বিচারের চেয়ারে বসে আপনি রাজনৈতিক কথা বলতে পারেন না। এটা করাতে সংবিধানের শপথ ভঙ্গের অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন আপনি।

আমরা দেখলাম গতকাল আপনি কথা বলেছেন, যেটা আজ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আপনি বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সুপ্রিম কোর্ট ইয়ে করেছে। ইয়ে মানে? কোন সাহসে আপনি পাকিস্তানের রেফারেন্স টানছেন? আপনিতো পাকিস্তানের সু্প্রিম কোর্টের বিচারপতির আসনে বসেন নাই। আপনাকে মাথায় রাখতে হবে। এটা পাকিস্তান নয়, এটা স্বাধীন বাংলাদেশ। আমরা ৯ মাস যুদ্ধ করে ঐ পাকিস্তানকে পরাজিত করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখানে পাকিস্তানের চিন্তা চেতনা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন সেটা আপনাদের দুঃস্বপ্নে পরিনত হবে। এই দেশের জনগণ কখনো আপনাদের অশূভ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে দেবে না।

প্রধান বিচারপতিকে উদ্যেশ্য করে বলেন, আপনি ইয়ে করতে চান? আপনি নিজেই ইয়ে হয়ে যাবেন। এই বাংলাদেশের জনগণকে আপনি দেখেন নাই?  এই জনগণ যদি একবার রুখে দাড়ায়, তা প্রতিহত করার ক্ষমতা কারো নেই।
 
এই দেশে বহু ঘটনা ঘটেছে যা জনগণের কাছে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা স্বাধীন বিচার ব্যবস্থায় বিশ্বাসী। আমরা চাই বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে তার কার্‌যক্রম পরিচালনা করবে। বিচার বিভাগ থেকে রাজনৈতিক কথাবার্তা বলে অহেতুক বিব্রত করুক এটা আমরা চাই ন‍া।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক জুলফিকুর রহমান খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন- স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান,  আওয়ামী লীগের সাবেক স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূঁইয়া ডাবলু,  আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন খান, সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. জিল্লুর রহমান ভূঁইয়া প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, আগষ্ট ২১, ২০১৭, আপডেট ১৭২৮ ঘণ্টা
এএম/বিএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।