ঢাকা, বুধবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ মে ২০২৪, ২৮ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বিএনপির ভোট নেবে, প্রতীক নেবে না জামায়াত!

আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪২৬ ঘণ্টা, জুলাই ২২, ২০১৭
বিএনপির ভোট নেবে, প্রতীক নেবে না জামায়াত!

ঢাকা: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভোট নেবে, কিন্তু প্রতীক নেবে না জামায়াত। নানামুখী চাপে কোণঠাসা হয়ে পড়লেও ‘পরগাছা প্রকৃতির সুবিধাবাদী’ এ দলটি বিএনপির অস্ত্রেই ঘায়েল করতে চায় জিয়ার গড়া দলটিকে। 

জামায়াতের এই রাজনৈতিক ‘অপকৌশল’ সম্পর্কে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতারা ওয়াকিবহাল। দলটির তৃণমূল থেকে হাইকমান্ড পযর্ন্ত সবাই প্রায় জামায়াতের এই সুবিধাবাদী ধ্যান-ধারণার সঙ্গে পরিচিত।

তারপরও ভোট ও রাজনৈতিক সমীকরণ মেলাতে গিয়ে জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক র‍াখতে হয় তাদের।  
 
উচ্চ আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানোয় আগামী নির্বাচনে দলীয় ব্যানার ও প্রতীক নিয়ে ভোটযুদ্ধে নামার সুযোগ নেই জামায়াতের। সঙ্গত কারণেই জোটশরিক জামায়াতকে দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করানোর পরিকল্পনা ছিল বিএনপির।
 
দলটি ভেবেছিল, যুদ্ধাপরাধের দায়ে শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি-যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, অন্য নেতাদের আত্মগোপন, তৃণমূল নেতাদের জেলা-জরিমানায় বিপর্যস্ত জামায়াত অস্তিত্ব রক্ষার জন্য হলেও বিএনপির প্রতি আনুগত্য দেখাবে। ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে ধানের শীষ প্রতীকেই নির্বাচন করবেন জামায়াত প্রার্থীরা।  
 
কিন্তু সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে আগ্রহী নয় জামায়াত। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ প্রতীকেই নির্বাচন করবে তারা। যে ৩০টি আসনে তারা মনোনয়ন দাবি করছে, সেগুলোতে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করে নিজেদের অস্তিত্ব বিএনপিতে বিলীন করতে চায় না ‘চতুর’ জামায়াত।
 
অর্থাৎ ছেড়ে দেওয়া আসন থেকে বিএনপির ভোটগুলো তারা নেবে, কিন্তু প্রতীক নেবে না। নিকট অতীতে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এমনটিই করেছে জামায়াত।
 
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রথমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। শুরু হয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকের ব্যবহার।
 
এরপর ইউনিয়ন ও জেলা পরিষদে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে নির্বাচন হয়। এ তিনটি নির্বাচনের মধ্যে দু’টিতে অংশ নেয় বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট।
 
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনগুলোতে নির্বাচন করলেও ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করেনি জামায়াত। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য বরাদ্দ প্রতীকে নির্বাচন করেছে তারা।  

কোথাও কোথাও ধানের শীষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ‘জগ’, ‘মগ’, ‘কলস’ প্রতীকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে বিএনপির রাজনৈতিক মিত্র জামায়াত।
 
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও একই রকম পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তারা। এমনও হতে পারে, বিএনপির ছেড়ে দেওয়া আসনের বাইরেও আরও অন্তত ৬০/৭০টি আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে দেবে জামায়াত।  

বিএনপিকে তখন প্রধান প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জোটসঙ্গী জামায়াতের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে।
 
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ছেড়ে দেওয়া আসনে জামায়াত যদি ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন না করে সেটি হবে বিএনপির জন্য আত্মহত্যার শামিল। আবার জামায়াতের জন্য ছেড়ে দেওয়া আসনে বিএনপি প্রার্থী দিতে গেলে হুমকির মুখে পড়বে জোটের অখণ্ডতা।
 
অর্থাৎ আগামী নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে ‘প্রতীক’ ইস্যু বিএনপিকে ফেলবে উভয় সংকটে। একদিকে দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে অংশ নিয়ে অসম লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে বিএনপিকে।  

অন্যদিকে চিরকালীন রাজনৈতিক মিত্র স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতের অপকৌশলকেও মোকাবেলা করতে হবে তাদের।
 
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুর ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, মনোনয়নের বিষয় নিয়ে শরিকদের সঙ্গে এখনও আলোচনা হয়নি। জোট শরিকদের মধ্যে যাদের নিবন্ধন নেই, তারা মনোনয়ন পেলে অবশ্যই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের নির্বাচনে  জামায়াতকে ৩৫টি আসন ছেড়ে দেয় বিএনপি। নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে মাত্র ৩টি আসনে জয় পায় স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত।
 
বাকি ৩২ টি আসনে মহাজোট মনোনীত প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয় তারা। জোটগত ওই নির্বাচনে ধানের শীষের ভোট দাঁড়িপাল্লায় পড়ায় ৩২টি আসনেই জামায়াতের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।  

এবারও বিএনপির ভোট নিজেদের বাক্সে ভরে অস্তিত্ব রক্ষার চেষ্টা করবে তারা। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীক ব্যবহার করবে না।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২২,২০১৭
এজেড/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।