ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত সাতক্ষীরা আ’লীগ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত সাতক্ষীরা আ’লীগ

সাতক্ষীরা: অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা থেকে শুরু করে সাতটি উপজেলা ও দু’টি পৌরসভা ইউনিটও জর্জরিত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। এমনকি এসব ইউনিটের সভাপতি ও সম্পাদকদের মধ্যে মুখ দেখাদেখিও বন্ধই বলা চলে।  

এমন কোন্দল মেটাতে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এর চেষ্টাও ব্যর্থ হওয়ার পর নেতাকর্মীদের মধ্যে দলের ভবিষ্যত নিয়ে বিভ্রান্তি ও উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।

দলীয় সূত্র জানায়, জেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়।

এই নির্বাচনে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ দলীয় মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হন বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম।

আর এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’ভাগ হয়ে যান জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা। একই সাথে দু’ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েন জেলার সাতটি উপজেলা ও দুটি পৌরসভা ইউনিটের নেতা-কর্মীরাও। এছাড়া আওয়ামী লীগের অঙ্গ-সংগঠনগুলোও সভাপতি ও সম্পাদকের পক্ষে পৃথক অবস্থান নেয়।

এই কোন্দল কেন্দ্রের দৃষ্টিগোচর হলে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তা নিরসনের উদ্যোগ নেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গত ৪ মে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ  ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-২ আসনের সংসদ সদস্য মীর মোস্তাক আহমেদ রবি ও সাতক্ষীরা-৪ আসনের সংসদ সদস্য স ম জগলুল হায়দারকে ডেকে পাঠান তিনি। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সম্পাদকের বক্তব্য শুনে তাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের। তার সামনেই কোলাকুলি করে বের হয়ে আসেন জেলা সভাপতি ও সম্পাদক। কিন্তু তারপরও দৃশ্যত অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি।

এরই মধ্যে ২১ মে পুনরায় কেন্দ্রে ডাক পড়লে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ ১৯ মে তার পক্ষের লোকজনকে ডেকে সাতক্ষীরার তুফান কনভেনশন সেন্টারে গোপন বৈঠকে বসেন। এতে বিদ্বেষ ছড়িয়ে পড়ে জেলা শহর থেকে তৃণমূলের দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে। যদিও পরে ২১ মের কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাতিল হয়ে যায়।

সর্বশেষ, গত ১১ রমজান জেলা প্রশাসনের ইফতার অনুষ্ঠানে পাশাপাশি দুটি চেয়ারে বসলেও কথা হয়নি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদকের মধ্যে। তার পরপরই জেলা আওয়ামী লীগের কোন্দল ফের সামনে আসে দু’অংশের পৃথক ইফতার এবং দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান ঘোষণা ও আমন্ত্রণপত্র দেওয়ার মধ্য দিয়ে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৭ জুন সাতক্ষীরা কমিউনিটি সেন্টারে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও ইফতার অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। আর ১৮ জুন তুফান কনভেনশন সেন্টারে একই অনুষ্ঠানের ঘোষণা দেন সভাপতি মুনসুর আহমেদ। পৃথক কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়টি কেন্দ্রের কানে উঠলে তা বাতিলের নির্দেশনা দেয় কেন্দ্র।

কিন্তু তারপরও সভাপতি-সম্পাদকের নেতৃত্বে পৃথক ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর পৃথক এই কর্মসূচিতে বিভক্ত হয়েই অংশ নিয়েছেন নেতা-কর্মীরা।

এভাবেই অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ। যেখানে দলকে সুসংগঠিত করার কোন কর্মসূচি নেই তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক নেতা-কর্মী বাংলানিউজকে জানান, দলের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। সভাপতি-সম্পাদকের বিরোধ দলকে খণ্ড-বিখণ্ড করে ফেলেছে। আর তাতে বাতাস দিচ্ছে এমপিরা। এভাবে চলতে থাকলে সাতক্ষীরার সবকটি আসনে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে।  

এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন-উর-রশীদ বাংলানিউজকে জানান, কোন্দল নিরসনে ২১ মে জেলা নেতাদের কেন্দ্রে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু তা বাতিল করে কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, সাতক্ষীরায় কোন্দল অনেক বেশি। ঢাকায় বসে এই কোন্দল নিরসন করা যাবে না। সাতক্ষীরায় এসে নেতারা কোন্দল নিরসনের উদ্যোগ নেবেন।

এ প্রসঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুনসুর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, কেন্দ্র বিষয়টি দেখছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।