ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

দপ্তরের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে বিব্রত বিএনপি

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৬
দপ্তরের কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে বিব্রত বিএনপি

ঢাকা: ২৭ সেপ্টেম্বর, ঘুম থেকে উঠেই বিএনপি নেতাদের শুনতে হয় একটি দুঃসংবাদ। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ মৃত্যুবরণ করেছেন।

ওয়ান ইলেভেনের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে সবার ‌আস্থাভাজন হয়ে ওঠা এই প্রবীণ নেতা সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

এমন একটি দুঃসংবাদে স্বভাবতই শোকাহত দলের বেশিরভাগ নেতা-কর্মী ও সমর্থক। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘুম থেকে উঠেই ছুটে গেছেন হান্নান শাহ’র ডিওএইচএসের বাসায়। শোকাহত পরিবারকে দিচ্ছেন স্বান্ত্বনা।

এ পরিস্থিতিতে সবাই যখন হান্নান শাহ’র মরদেহ’র জন্য অপেক্ষা করছেন। ঠিক সেই সময়ই নয়াপল্টন কার্যালয় থেকে দলের সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু‘র স্বাক্ষরিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পৌঁছায় সংবাদ মাধ্যমের কাছে।

প্রথমে অনেকেই মনে করেছিলেন-এই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হয়তো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শোকবাণী রয়েছে।

কিন্তু মেইল ওপেন করে দেখা যায়-সেটি শোকবাণী নয়। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নতুন কমিটি-যা ইতোপূর্বে খালেদা জিয়ার নির্দেশক্রমে অনুমোদন দিয়েছিলেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

অর্থাৎ স্বামী হারিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ’র স্ত্রী যখন শোকে কাতর, ঠিক সেই সময় মহিলা দলের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার ‘আনন্দে’ বিব্রত স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা ‌আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস।
 
শুধু আফরোজা আব্বাস নয়, দপ্তরের এমন কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ডে ওইদিন বিব্রত হয়েছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আফরোজা আব্বাসের স্বামী খোদ মির্জা আব্বাস।

তাতক্ষণিকভাবে সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেন, মহিলা দলের কমিটি অনুমোদন দেওয়ায় তিনি খুশি হয়েছেন। কিন্তু এমন দিনে কমিটি ঘোষণা করায় বিব্রতবোধ করছেন।

সূত্রমতে, ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে প্রভাবিত করে পছন্দের লোকজনকে একচেটিয়া পদ দিয়েছেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

এই তিন নেতার দাপটে বিএনপির দপ্তর থেকে সরে যেতে হয়েছে আব্দুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন ও শামীমুর রহমান শামীমকে। আর এদের জায়গায় ঠাঁই হয়েছে তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন ও বেলাল আহমেদের। যারা সবাই রুহুল কবির রিজভীর লোক হিসেবে পরিচিত।

জানা যায়, অতীতে গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর প্রয়োজন হলে দলের সংশ্লিষ্ট নেতা বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বা আলাপ-আলোচনা করে তবেই পাঠাতেন দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা। কিন্তু অতি সম্প্রতি যার যেমন খুশি, তেমনভাবেই সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। কারো কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করছেন না।

হান্নান শাহ’র মৃত্যুর দিন মহিলা দলের কমিটি ঘোষণার ক্ষেত্রে এমনটিই ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, দায়িত্ব পালনের চেয়ে মিডিয়াতে নিজের নাম জাহির করার প্রবণতা থেকেই এমনটি ঘটছে বার বার।
 
শুধু সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠানোর ক্ষেত্রেই নয়, এসএমএস’র মাধ্যমে বিএনপি এবং শীর্ষ নেতাদের কর্মসূচিগুলো জানানোর ব্যাপারেও প্রচণ্ড রকম সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে বিএনপির দপ্তরে।
 
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণার জন্য আয়োজিত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সংবাদ সম্মেলনের খবর বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যমকে জানানো হয়নি। হাতে গোণা কয়েকটি টিভি চ্যানেল ও পত্রিকার লোক ডেকে সংবাদ সম্মেলনের ব্যবস্থা করেন বিএনপির দপ্তরে থাকা নেতারা।

সর্বশেষ মঙ্গলবার (০৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হান্নান শাহ’র স্মরণ সভার খবরটিও বেশিরভাগ সংবাদ মাধ্যমকে জানাননি বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা। বিষয়টি এখন নিত্য দিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা মনে করি দলের জন্য সবাই কাজ করছে। আন্তরিকতার ঘাটতি নেই কারো মধ্যে। তারপরও কোথাও কোনো ঘাটতি থাকলে সেটা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবো’।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১৬
এজেড/জিপি/আরআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।