ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

আওয়ামী লীগ

আশরাফকেই সাধারণ সম্পাদক রাখা হচ্ছে

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০৮ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৬
আশরাফকেই সাধারণ সম্পাদক রাখা হচ্ছে

ঢাকা: আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সর্বত্রই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু সাধারণ সম্পাদক পদটি। এ পদে কে বসছেন তা নিয়ে দলের ভেতরে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মধ্যে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

সম্মেলনের সময় যতো এগুচ্ছে ততো আকর্ষণের বিষয় হয়ে উঠছে দলের এই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদটি। কারণ দলের প্রধান কে হচ্ছেন এটা নেতা-কর্মীদের সবাই জানেন। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর কাছে সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার বিকল্প নেই।

শুধু দলের ভেতরেই নয়, দলের বাইরেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী এবং রাজনীতি সচেতন মানুষের মধ্যে জানার আগ্রহ রয়েছে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী, স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন।

সম্মেলনকে সামনে রেখে এখন পর্যন্ত এ পদে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামই এগিয়ে আছেন। আরও যাদের নাম শোনা যায় তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক।

তবে দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই পদে সৈয়দ আশরাফকেই রাখতে চান বলে জানা গেছে। আগামী ১০ ও ১১ জুলাই আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দিনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকেই দলের সাধারণ সম্পাদক করতে চান। দলের মধ্যে শেখ হাসিনার অধিকতর আস্থাভাজন হিসেবেই রয়েছে সৈয়দ আশরাফের অবস্থান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক নেতা ও সরকারের মন্ত্রী জানান, দল ও সরকারের অতিসংকটময় মুহূর্তে সৈয়দ আশরাফের উপর দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ছাড়াই নির্ভর করা যায় বলে শেখ হাসিনা মনে করেন। একাধিক বার এর প্রমাণও তিনি পেয়েছেন। তাছাড়া সৈয়দ আশরাফের জানা-বোঝা, রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতাও প্রখর।

বর্তমানে সৈয়দ আশরাফ দ্বিতীয় বার দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৯ সালের ২৪ জুলাইয়ের কাউন্সিলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এর আগে ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী সময়ে তিনি দীর্ঘদিন দলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তখন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল কারাবন্দি ছিলেন। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি দলের ক্রান্তিকালে অসাধারণ রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেন। দলের বর্ষিয়ান নেতা তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিল্লুর রহমানের পাশে থেকে সহযোগিতা করেন এবং শক্ত অবস্থান নিয়ে দলের ভেতরের ও বাইরে সংকটময় পরিস্থিতি মোকাবেলা করেন। তার এই ভূমিকা ও যোগ্যতার কারণেই শেখ হাসিনা তাকে দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়ে আসেন।

গত ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সম্মেলনে তিনি দ্বিতীয় দফায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীতে হেফাজতের সমাবেশ থেকে চালানো তাণ্ডবে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয় তা মোকাবেলায় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলে আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়ও সৈয়দ আশরাফ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ জাতীয় চার নেতা যারা জেল হত্যার শিকার হন তাদের অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে। এই সার্বিক কারণে তিনি তৃতীয় বারের মতো দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবেন বলে দলের অভিজ্ঞ নেতারা মনে করছেন।

এদিকে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে সৈয়দ আশরাফের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। গত বছর জুলাইয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে দলের ভেতরে-বাইরে তীব্র সামালোচনা ও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। দলের অধিকাংশ নেতাকর্মীই এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। অনেক নেতা-কর্মীর মধ্যে এক ধরণের হতাশাও তৈরি হয়। পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর কয়েক দিন পর সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সরকারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব দেন।

এদিকে দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ এই পদের জন্য তৎপর রয়েছেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর আগে গত দুই সম্মেলনেই ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আগ্রহী ও তৎপর ছিলেন। এবারও তার নাম জোরেসোরেই আলোচনায় আছে। দলের বিভিন্ন কার্যক্রমেও তিনি সক্রিয়। চলতি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। এই দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে জেলা, উপজেলাসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে ওবায়দুল কাদেরের যোগাযোগ স্থাপন হয়েছে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর আরেক সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ এই পদের জন্য আগ্রহী বলে জানা গেছে। সম্মেলনে প্রস্তুতির কাজেও তিনি তৎপর রয়েছেন। তাকে সম্মেলন প্রস্তুতি উপলক্ষে গঠিত অর্থ উপ-কমিটির প্রধান করা হয়েছে।

সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দলের বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফের নামও শোনা যাচ্ছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের অঘোষিত মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই গত দুই মেয়াদে দলে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন তিনি। যখন, যেখানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কর্মসূচি থাকছে সেখানেই তিনি ছুটে যাচ্ছেন। দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরাও সহজেই তাকে পাচ্ছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৪ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১৬
এসকে/এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।