ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বিএনপির ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা

পল্টনের মহাসমাবেশে সংঘর্ষ, ধাওয়া-ধাওয়ি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০১ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১১
পল্টনের মহাসমাবেশে সংঘর্ষ, ধাওয়া-ধাওয়ি

ঢাকা: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদ, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ, দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও বন্দিমুক্তির দাবিতে আবারও তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করল বিএনপি।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সোমবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত সমাবেশ থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।



এদিকে মঞ্চের কাছাকাছি বসা নিয়ে সমাবেশ চলাকালে কর্মী সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পরে দলের সিনিয়র নেতাদের পস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বিকেল ৬টায় সমাবেশ শেষে একই কারণে আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক রাউন্ড টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে।  
    
একটি সূত্র জানায়, বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু’র মধ্যে মঞ্চে দাঁড়ানো নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। এর জের ধরে পরে তাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, গাজীপুরের কালিগঞ্জে বিএনপি কর্মী জামির ও নাঈম হত্যাকাণ্ডসহ দেশব্যাপী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে ১২ মে ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ।

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে জেলায় ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল ১৮ মে।

এছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার ও বন্দিমুক্তির দাবিতে উপজেলা, জেলা ও মহানগর পর্যায়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল ২৪ মে।

বেলা ৩টায় সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। তবে বেলা সাড়ে ১২টা থেকেই সমাবেশস্থল এবং আশপাশের এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাজার হাজার নেতাকর্মী দুপুর থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। সমাবেশের কারণে নয়া পল্টনসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।  

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সরকার রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানকে তছনছ করে ফেলেছে। তাদের লক্ষ্য একটাই-সংবিধানকে ধ্বংস করে দিয়ে আবারও একদলীয় বাকশাল কায়েম করা। কিন্তু এ দেশের মানুষ সবসময় বিপ্লবী। তারা সরকারের এই ষড়যন্ত্র কিছুতেই বস্তবায়ন হতে দেবে না। ’

সরকারের আর ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সরকারের প্রথম প্রতিশ্রুতি ছিল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ। তারা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি করতে পারেনি। তৃতীয় প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ঘরে ঘরে চাকরি দিতে পারেনি। চতুর্থ প্রতিশ্রুতি আইনের শাসনও প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি। বিচার বিভাগকে করেছে দলীয়করণ। ’

তিনি বলেন, ‘দুর্নীতিকে তারা আইন সঙ্গত করতে সংসদে বিল পাস করিয়ে নিচ্ছে। পদ্দা সেতু, ঢাকায় উড়াল সেতু নির্মাণে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির খবর পত্রিকায় আসছে। অথচ দুর্নীতি দমন ছিল তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। ’

স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘নির্বাচিত সরকার হলেই যে জনগণের সরকার হয় না আজকের সমাবেশ তার প্রমাণ। ’

সংবিধান সংশোধন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জনগণই হচ্ছে সব ক্ষমতার উৎস। সুতরাং জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া সংবিধানের মৌলিক কোনো পরিবর্তন তারা (জনগণ) মেনে নেবে না। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ডাকে বিএনপি যেদিন মাঠে নামবে সেদিন সারা বাংলাদেশ পল্টনে পরিণত হবে। ’

খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ অগণতান্ত্রিক সরকারের কাছে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা চেয়ে কোনো লাভ নেই। খালেদা জিয়ার নিরাপত্তা দেবে এ দেশের লাখো-কোটি জনগণ। ’

এদিকে সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচন পূর্ব ভাষণের ভিডিওচিত্র দেখাতে গিয়ে যান্ত্রিক গোলোযোগের কারণে তা দেখাতে ব্যর্থ হয় বিএনপি।

এর পর বিরোধী দলের চিফ হুইপ ও সমাবেশের সঞ্চালক জয়নুল আবদিন ফারুক সারাদেশের জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে এই ভিডিও চিত্র সরবরাহের ঘোষণা দেন।

সমাবেশে আরও বক্তৃতা করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুরর রহমান পটল, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, যুগ্ম-হাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, ফজলুল হক মিলন, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক জাফরুল হাসান, যুব বিষয়ক সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবির খোকন, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভুঁইয়া, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সলাম, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সহ ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু প্রমুখ।

রাজধানীর মুক্তাঙ্গন ও পল্টন ময়দানসহ আশপাশের এলাকায় সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

পল্টন কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের অনুমতি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রস্তুতি সভা শেষে এক প্রেসব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল এ তথ্য জানান।

দেশব্যাপী সোমবারের বিক্ষোভ সমাবেশ সফল করতে ঢাকাসহ আশপাশের ছয় জেলার নেতাদের নিয়ে এ প্রস্তুতিসভা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে গত ৬ এপ্রিল গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভা হয়। ওই সভা শেষে ঢাকাসহ দেশব্যাপী ৯ মে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৩ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।