ঢাকা: সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখার উদ্যোগ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছে রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে।
সোমবার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংবিধান সংশোধন কমিটির বৈঠকে সংবিধানে এ দুটি বিষয় রাখার সিদ্ধান্ত অনেকাংশেই চূড়ান্ত হয়।
সংবিধান সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণকারী আওয়ামী লীগ নেতারা বিষয়টিকে ইতিবাচক মনে করলেও প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির নেতারা বিষয়টিকে সাংঘর্ষিক বলে মনে করছেন। এমনকি সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি নেতার প্রতিক্রিয়াতেও পাওয়া যাচ্ছে সরকারের অবস্থান বিরোধী সুর।
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা সবাই আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করি। তাই সংবিধানে বিসমিল্লাহ থাকলে তাতে কোনো সমস্যা হবে না। সংবিধানে একই সঙ্গে ধর্ম নিরপেক্ষতা আর বিসমিল্লাহ থাকলেও তা সাংঘর্ষিক কিছু হবে না। ’
তবে সরকারের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব রুহুল আমীন হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। প্রধানমন্ত্রী নিজেও একজন মুসলমান। সেদিক চিন্তা করেই হয়তো তিনি চান সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও আল্লাহর নাম থাকুক। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষতার পাশাপাশি এরকম কিছু রাখতে গেলে তা সাংঘর্ষিক হবে। ’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এমন চিন্তাই স্ববিরোধী। একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতা আর একদিকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম- একই সংবিধানে থাকতে পারে না। ’
তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতা একসঙ্গে কিভাবে থাকে এ প্রশ্ন আমারও। ’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পলিট ব্যুরো সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বাংলানিউজকে বলেন, ‘সংবিধানে একই সঙ্গে ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার উদ্যোগ স্ববিরোধী। ’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দাবি সংবিধানকে পরিপূর্ণভাবে ’৭২ সালের সংবিধানে ফিরিয়ে নিতে হবে। হাইকোর্টও একই রায় দিয়েছেন। তাই সংবিধান সংশোধন কমিটির উদ্যোগ নীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হলো না। ’
বিএনপি’র অপর নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশের ৮০/৯০ শতাংশ মানুষ মুসলমান। অথচ তারা (আওয়ামী লীগ) একদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলছে, অন্যদিকে বিসমিল্লাহ রাখার কথা বলছে। এটা কন্ট্রাডিক্টরি। ’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধনের নামে একেক সময় একেক কথা বলছে। কিন্তু জাতীয়ভাবে আলোচনা করে সংবিধান সংশোধন করা উচিত। ’
সংবিধান নিয়ে খামখেয়ালী করা হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নষ্ট হবে বলেও মত দেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১১