ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘পৌর নির্বাচনের ফল সরকারের জন্য সতর্ক সংকেত’

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮, ২০১১
‘পৌর নির্বাচনের ফল সরকারের জন্য সতর্ক সংকেত’

ঢাকা:  পৌরসভা নির্বাচনের ফল আশানুরূপ না হওয়াকে সরকারের জন্য সতর্ক সংকেত বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহল।

তৃণমূল পর্যায়ের এ নির্বাচনী ফলাফল দলের জন্য বিপর্যয়কর বলেই মানছেন তারা।



সরকারের নানা সফলতা ও অর্জনের মাঝেও এ বিপর্যয়ে দলের নীতি নির্ধারণী মহল তাই অনেকটাই উদ্বিগ্ন। এরই মধ্যে তারা ফলাফল মূল্যায়ন এবং বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন।

উল্লেখ্য, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ৭২টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ১৮ ও বিএনপি ৩১টিতে বিজয়ী হয়েছে।

খুলনা ও বরিশাল বিভাগে ৪৯টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮ ও বিএনপি ১৭ এবং ঢাকা বিভাগে ৬১টির মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫, বিএনপি ২৩ টিতে বিজয়ী হয়েছে।

এ হিসাব অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। তবে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল বিশ্লেষণে পৌরসভা নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটাই বিপর্যয়কর বলে দলের নেতারা মনে করছেন।

এদিকে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের ৫৮টি পৌরসভার মধ্যে এ রিপোট লেখা পর্যন্ত বিএনপি ১২টিতে এবং আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৩টিতে জয়লাভ করেছে।

এ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের আত্মোপলব্ধি থেকে বেশ কিছু বিষয় বেরিয়ে এসেছে। তবে এ ব্যাপারে এখনই কেউ মুখ খুলতে চাচ্ছেন না।

আওয়ামী লীগ নেতাদের মতে, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতি এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নির্বাচনে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

তবে তারা এও মনে করছেন, গত দুই সরকার অনেক সফলতা ও অর্জন রয়েছে। এগুলো সুদূর প্রসারী ফলাফল বয়ে আনবে এবং দল ও সরকারের জন্য দীর্ঘমেয়াদি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

কিন্তু দ্রব্য মূল্য ও আইন-শৃঙ্খলা মানুষের নিত্য দিনের সমস্যা। এসব ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা মানুষের জীবনে সরাসরি এবং দ্রুত প্রভাব ফেলে। নির্বাচনে এগুলো দলের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে বলে অনেকে মনে করছেন।

তবে প্রার্থী বাছাইও যথাযথ হয়নি বলে মনে করছেন অনেকে।

প্রার্থী বাছাই এবং দলীয় প্রার্থী সমর্থন প্রক্রিয়ায় যারা জড়িত ছিলেন তারা প্রকৃত যোগ্য প্রার্থীকে বেছে নিতে পারেননি।

প্রতিটি পৌরসভায়ই দল সমর্থিত প্রার্থীর বিপরীতে এক বা একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। অনেক পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করেছেন, অনেক স্থানে বিদ্রোহীরাই বিএনপির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এসেছেন।

উল্লেখ্য, ৫ বিভাগে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২২ জন বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

আবার অনেক স্থানে বিদ্রোহী প্রার্থীদের পেছনে থেকে মন্ত্রী, এমপি এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কেউ কেউ সমর্থন যুগিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

ফলে দলের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন। এর ফলে দলীয় প্রার্থীর পরাজয়ই ত্বরান্বিত হয়েছে।

এছাড়া দল ক্ষমতায় আসার পর প্রায় সর্বত্রই মন্ত্রী-সাংসদদের আত্মীয়-স্বজন এবং তাদের আস্থাভাজন দলের মুষ্ঠিমেয় নেতা-কর্মীর হাতে এলাকার সব ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়েছে।

মন্ত্রী-এমপির আস্থাভাজন গুটিকয়েক লোকজনের কারণে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতা-কর্মীদের বিরাট অংশ উপেক্ষিত রয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।  

জাতীয় সমস্যার চেয়ে তৃণমূলে মন্ত্রী-এমপি ও স্থানীয় নেতাদের সৃষ্ট অন্তর্দ্বন্দ্ব পৌর নির্বাচনে বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেও কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন।

কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও ১৪ দলীয় জোট থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে এ জোট এখনও বিস্তৃত হয়নি। জোটভুক্ত দলগুলোর তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যেও সুসম্পর্ক এবং জোটগত রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।

বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্র থেকে গড়ে ওঠা জোটের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছিল তা ছিল অনেকটাই স্বতঃস্ফূর্ত। নির্বাচনের পর এ ঐক্যের ধারাবাহিকতা এবং স্বতঃস্ফূর্ততাও আর থাকেনি। জোটও চলছে নানা টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে।

এছাড়া পৌরসভা নির্বাচন মহাজোটগতভাবে করার জন্য আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হলেও বাস্তবে তা কার্যকর হয়নি।

কিছু পৌরসভায় জোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দেওয়া হলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা সক্রিয় ছিল। জোটের অন্য শরিকরা ছিল আলোচনার বাইরে।

কিছু কিছু পৌরসভায় জাসদ এবং ওয়ার্কার্স পার্টি সমর্থিত প্রার্থীরাও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। এর বাইরে অন্য জোট শরিকরা প্রার্থী না দিলেও নির্বাচনে তাদের নেতা-কর্মীদের আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করানোর চেষ্টা হয়নি।

এছাড়া শেষ সময়ে কেন্দ্র থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসানো এবং বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করায় স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও এ প্রক্রিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এতে শেষ মুহূর্তের নির্বাচনী প্রচারণারও অনেকটা ব্যাহত হয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করছেন।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের একাধিক নেতা বাংলানিউজকে বলেন, দ্রব্যমূল্য ও আইন-শৃঙ্খলার বিরূপ প্রভাব এবং মন্ত্রী, এমপিদের কারণেই এ বিপর্যয় ঘটেছে। এটা সরকারের জন্য সতর্ক সংকেত।

তারা বলেন, এ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য শিক্ষনীয় ছিল। সরকারের জন্য এখনও তিন বছর সময় আছে। সতর্ক না হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৮,২০১১ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad