ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

আ.লীগে ২৫ জনেরও বেশি বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বহিষ্কার

শামীম খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১১
আ.লীগে ২৫ জনেরও বেশি বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী বহিষ্কার

ঢাকা: ঢাকা, চট্রগ্রাম ও সিলেট বিভাগের পৌরসভা নির্বাচনকে কড়া পর্যবেক্ষণের মধ্যে রেখেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একমাত্র বরিশাল বিভাগ ছাড়া রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে নির্বাচনের ফল দলের জন্য আশানুরূপ না হওয়ায় বাকী তিনটি বিভাগে দল সমর্থিত প্রার্থীরা কি করে বিজয়ী হবেন তার ওপরই এখন গুরুত্ব দিচ্ছে দলটির হাইকমান্ড।



এ জন্য দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন ইতিমধ্যেই বেশ কিছু জায়গায় তাদের বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি প্রায় ২৫ জনের উপরে বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র।

কেন্দ্র থেকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ, প্রধানমন্ত্রীর ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এইচটি ইমাম এবং যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ তৃণমূলের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন।

কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদকরা সার্বক্ষণিক মাঠে রয়েছেন। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন প্রত্যেক পৌর সভার নেতাদের সঙ্গে। তারা বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসানো ও সমঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাংগঠনিক সম্পাদকদের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মাঠে থাকতে বলা হয়েছে।

শরিবার সারা দিনই আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির কার্যালয়ে দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা পৌর নির্বাচন নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এরা হলেন- এইচটি ইমাম, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বিএম মোজাম্মেকল হক।

১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিভাগের ৬৩টি পৌরসভা, ১৮ জানুয়ারি চট্রগ্রাম বিভাগের ৪৩টি ও একই দিন সিলেট বিভাগের ১৬টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এসব নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের জয় নিশ্চিত করতে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের পথই বেছে নিয়েছে ক্ষমতাসীনরা।

শুক্র ও শনিবার দু’দিনে প্রায় ২৫ জনের উপরে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দলের একাধিক সূত্র। বহিষ্কৃতদের আর দলে ফিরিয়ে নেওয়া হবে না বলেও জানা গেছে।

বহিষ্কৃত যাদের নাম পাওয়া গেছে তারা হলেন- মাদারিপুরের খলিলুর রহমান খান, গোপালপুরের আবদুল জাব্বার, ভূয়াপুরের হামিদুল ইসলাম, ময়মনসিংহের ইউনুস খান পাঠান, ফুলপুরের মইনুল হাসান টিটু, মুক্তাগাছার আবদুল হাই আকন্দ, ঢাকার ধামরাইয়ের গোলাম কবীর, মুন্সিগঞ্জ সদরের ফয়সাল বিপ্লব, চান্দিনার সওকত ভূইয়া, শেরপুরের রোমান আলী, নালিতাবাড়ির বদিউজ্জামান, মৌলভীবাজারের নাহিদ আহমেদ, বড়লেখার আবদুর নূর, নোয়াখালীর আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু, চৌমুহনীর আখতার হোসেন, চাটখিলের জসিম উদ্দিন, লাকসামের অ্যাডভোকেট ইউনুস ভূইয়া, ভেদরগঞ্জের আবদুল মান্নান হাওলাদার, সিলেটের কানাইঘাটের সোহেল আহমেদ, লক্ষ্মীপুরের আনম ফজলুল করিম, ডা. জাকির হোসেন, চাঁদপুরের শাহরাস্তির রেজাউল করিম মিন্টু ও মাহবুব আলম চৌধুরী, মতলবের ইকবাল হোসেন পাটোয়ারী, কামাল আহমেদ, শাহজাহান মল্লিক, রায়পুরের রফিকুল হায়দার ও বাবুল পাঠান।

এদিকে চট্রগ্রামের বাঁশখালি, চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ, লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে সমঝোতা হয়েছে। এসব পৌরসভায় দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোয়নয় জমা দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

আওয়ামী লীগের চট্রগাম বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এই বিভাগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের অনেককেই বসিয়ে দিয়েছেন বলে তিনি বাংলানিউজকে জানান।

এ প্রসঙ্গে আহমদ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কেউ কেউ প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে কেউ নির্বাচনে দাঁড়িয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ দাবি করলেও তাদের বিরুদ্ধে তো আর ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে না থাকলে তারা তো আর আওয়ামী লীগ হিসেবে গণ্য হবে না।

কাজী জাফরুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, ‘চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিদ্রোহীদের বসানো খুবই কঠিন। কারণ নির্বাচনের মাত্র দু’দিন বাকী আছে। প্রার্থীরা মার্কা পেয়ে গেছে। এখনো যদি বিদ্রোহী প্রার্থীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় বা দল সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে নামে তাহলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া সম্ভব।

মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি দল সমর্থিত প্রার্থীর বাইরে যারা নির্বাচন করছেন তাদের বসিয়ে দিতে।

এদিকে চার বিভাগের ১২১টি পৌরসভায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৫২টি ও বিএনপি ৫৩টিতে জয় পেয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে ফলাফল বিপর্যয়ের পর দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হন।

এ জন্য তিনি বিদ্রোহী প্রার্থীদের দায়ি করেন। বাকী সে সব পৌরসভায় এখনো নির্বাচন হয়নি সেগুলোতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

এদিকে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের যেসব পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন সেসব পৌরসভার সংশ্লিষ্ট জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের কাছে কেন্দ্র থেকে ফোন করে পরাজয়ের কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে। শনিবার এইচটি ইমাম ও মাহবুব উল আলম হানিফ ফোনে জেলা নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

বাংলাদেশ সময় ২২০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৫, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।