ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

আগে নিজের ঘরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করুন: খালেদা জিয়া

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩, ২০১১
আগে নিজের ঘরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করুন: খালেদা জিয়া

ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আমরাও দেখতে চাই। তবে সরকারকে আগে নিজের ঘরের যুদ্ধাপরাধীর বিচার করতে হবে।



সোমবার রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির চাকুরিচ্যুত চিকিৎসকরা সাক্ষাত করতে গেলে তাদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, আসল যুদ্ধাপরাধীদের কেন ছেড়ে দেওয়া হলো। তাদের কারা ছেড়ে দিলো। তাদের ধরে এনে বিচার করুন। তারাই বলবে কারা তাদের সহযোগিতা করেছিলো। আর তখনই সেই সহযোগিদেরও বিচার করা যাবে।

‘সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গি বলবেন এটা হবে না। এমন বক্তব্য বেশি দিন টিকবে না। ’

দেখা করতে আসা চিকিৎসকদের খালেদা জিয়া বলেন, যখন সময় আসবে ইনশাল্লাহ তখন আপনাদের মূল্যায়ন করা হবে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ করলে রাজাকারও  মুক্তিযোদ্ধা আর বিএনপি করলে মুক্তিযোদ্ধাও রাজাকার হয়ে যায়। ’
 
খালেদা জিয়া বলেন, দেশ এখন চলছে না। শুধু ডাক্তারদেরই তারা চাকুরিচ্যুত করেনি, সচিব থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকল ক্ষেত্রে ভালো লোকদের সরিয়ে এমন লোকদের বসিয়েছে যারা সেই পদে উপযুক্ত না। ফলে দেশে কোনো কাজ হচ্ছে না।

তিনি বলেন, ‘২০০৭-০৮ সালে অগণতান্ত্রিক সরকার যাওয়ার পর মনে করেছিলাম গণতান্ত্রিক সরকার ফিরে আসবে এক সঙ্গে কাজ করবো। আমরা এমনটাই ভেবেছিলাম। তারা কি ভেবেছিলো জানিনা। ’

তিনি বলেন, ‘বিএনপি ধ্বংস করার জন্য ফখরুদ্দিন সরকার বিএনপির বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার করেছিলো। তারা চেয়েছিলো বিএনপিকে ধ্বংস করে তাদের মন মতো একটি বিএনপি গঠন করবে। তারা আজীবন ক্ষমতায় টিকে থাকবে। কিন্তু আমাদের দলে সবার কারণে তারা তা পারেনি। ’
 
খালেদা জিয়া বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনের সকল পরিকল্পনা বিদেশে হয়েছিলো। সেখান থেকেই পরিকল্পনা করা হয়েছিলো কাদের ক্ষমতায় বসানো, কাদের কত সিট দেওয়া হবে। এসময় আমরা তাদের কথায় রাজি হইনি। বিএনপি দেশবিরোধী কোনো কাজে সহায়তা করতে পারে না। কিন্তু যারা তাদের কথায় রাজি হয়েছিলো তাদেরকেই ক্ষমতায় বসিয়েছে।
    
তিনি বলেন, ‘দেশে বাকশাল কায়েম হয়েছে। বাকশাল মানে এক নেতার এক দেশ। তিনি যা বলবেন তাই হবে। এখনও বাকশালের মতো দেশ চলছে। যিনি সরকার প্রধান তিনিই সকল কাজ করছেন। স্পিকার, প্রধানবিচারপতি, জজ, পুলিশের আইজি থেকে সকল কাজই তার কথা মতো চলছে। আবার  তার কথা মতোই সব কিছু চলছে কিনা তাও বিশ্বাস হচ্ছে না। তাকেও হয়তো বাইরে থেকে কেউ চালাচ্ছে। ’

‘এখন বিরোধী দলের কোনো মূল্য নেই। আমাদের কথার কোনো দাম নেই,’ বলেন খালেদা জিয়া।
 
তিনি বলেন, দেশে নামমাত্র স্বাধীনতা আছে। আসলে কারো কোনো স্বাধীনতা নেই।
 
একজন মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসককে চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে এ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে শুনলাম মুক্তিযোদ্ধাদের নাতীদের চাকুরি দেবে। অথচ যিনি নিজে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন তাকেও চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে। ’

তিনি বলেন, ৬ তারিখে তাদের সরকারের দুই বছর পূর্ণ হবে। নিশ্চয়ই তারা দুই বছর পুর্তিতে তাদের সফলতার কথা তুলে ধরবে। কিন্তু আমি তাদের কোনো সফলতা দেখতে পাই না। তারা দুই বছরে শুধু ব্যর্থ ব্যর্থ আর ব্যর্থতাই দেখিয়েছে।
 
খালেদা জিয়া বলেন, সবাই আন্দোলনের কথা বলে। আমরা অবশ্যই আন্দোলন করবো। কিন্তু আমাদের আন্দোলন জঙ্গী বা সশস্ত্র পন্থায় হবে না। আমরা ধাপে ধাপে গণতান্ত্রিক পন্থায় আন্দোলন করবো।
আগে আওয়ামী লীগ কি জিনিষ তা জনগণকে বুঝতে দিতে হবে।

তিনি বলেন, এ সরকার মিথ্যাবাদী তারা দেশের জন্য কিছু করতে পারেনি। দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি করেছে। এসব চুক্তি বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের ডাকে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার শিক্ষকসহ সবাই যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো তেমনি আবার দেশ রক্ষায় সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। নিজেদেরও বাঁচতে হবে এবং দেশও বাঁচাতে হবে।

এসময় প্রায় অর্ধ শত চাকুরিচ্যুত চিকিৎসক উপস্থিত ছিলেন। তাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ড্যাব এর সভাপতি ডা. আবদুল আজিজ, মহাসচিব ডা. এজেড এম জাহিদ হোসেন, অধ্যাপক ডাক্তার আবদুল কুদ্দুসসহ বেশ কয়েকজন ডাক্তার।

তারা নিজেদের চাকুরিচ্যুতির ঘটনা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে তুলে ধরেন।

কেনো তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে খালেদা জিয়ার এমন প্রশ্নের জবাবে ডা. আবদুল কুদ্দুস বলেন, আমরা জিয়াউর রহমানের সঙ্গে রাজনীতি করেছি, আপনার সঙ্গে করছি আবার তারেক রহমানের সঙ্গেও করবো। এটাই আমাদের অন্যায়।

তখন বেগম জিয়া বলেন, আমাদের সুযোগ এলে আমরা নিশ্চয়ই এসব তদন্ত করে অন্যায়ভাবে যাদের চাকুরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
 
চাকুরিচ্যুতদের মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন ১৩ জন। এরা হচ্ছেন, ডাক্তার সিরাজউদ্দিন আহমদ. ডা. মতিউর রহমান মোল্লা, ডা. সায়েবা আখতার, ডা. জাহাঙ্গির কবির, ডা. নাসিমা আক্তার জাহান, ডা. আবুল কাশেম, ডা. শরীফ হাসান, ডা. এসএ খান, ডা. একেএম ফজলুল হক, ডা. মনজুর মোরশেদ, ডা. সৈয়দ আকরাম হোসেন, ডা. জাহিদুল হক এবং অধ্যাপক ডা. শহিদুর রহমান।

সহযোগী অধ্যাপকরা হলেন, ডা. মো. আবদুল কুদ্দুস, ডা. জুনায়েদ শফিক, ডা. হোসেন ইমাম আল হাদী, ডা. জেরজিনা রহমান, ডা. মজিবর রহমান ভূইয়া, ডা. কামরুজ্জামান. ডা. মহিবুল আজিজ, ডা. আবদুল ওহাব. ডা. আলিয়া সুলতানা. ডা. হাসান ইমাম আল হাদী।
 
এছাড়া ১৫ জন সহকারী অধ্যাপক ৫জন ডাক্তার ও ৬জন কর্মকর্তাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। আরও চাকরিচ্যুত হন ৩১ জন তৃতীয় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী।

এদের মধ্যে হাফিজুর রহমান নামে একজন কর্মচারি চাকুরিচ্যুত হওয়ার খবর পেয়ে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান বলে বৈঠকে জানানো হয়।
 
একই সময় ১৬জন ডাক্তার ও শর্তসাপেক্ষে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপাওয়া ৪জনকে পদাবনতি দেয়া হয়।

বাংলাদেশ সময় ২২৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।