ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

রাজনীতি

আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের দূরত্ব বাড়ছে

শামীম খান | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩০ ঘণ্টা, জুলাই ৬, ২০১০

ঢাকা : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলের দূরত্ব বেড়েই চলছে। এসব দলের নেতাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাদের কোনো যোগাযোগ নেই।

সরকার পরিচালনাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোটের কোনো পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না। জোটের কোনো সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয় না।

এ কারণে ১৪ দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ইস্যুসহ বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ১৪ দলকে সক্রিয় রাখা জরুরি বলে তারা মনে করছেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে এরই মধ্যে জামায়াতের তিন শীর্ষ নেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ এবং দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর মুক্তির দাবি জানানো হয়েছে।

এর মাধ্যমে জামায়াতের আন্দোলনকে সমর্থনের পাশাপাশি তাদের সঙ্গে যৌথ আন্দোলনেরও প্র¯ত্ততি নিচ্ছে বিএনপি।

অথচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে জনসর্থন গড়ে তুলতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তার শরিকদের সেভাবে কাজে লাগাচ্ছে না বলে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেছেন ১৪ দলের বেশ ক’জন শীর্ষ নেতা। তবে বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় সরকারকে সহযোগিতা করে যাবেন তারা। এ প্রেক্ষাপটে সরকারি দলের পাশাপাশি রাজনৈতিকভাবে ১৪ দলের ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে থাকা জরুরি বলে তারা মন্তব্য করেন।

এ নিয়ে ১৪ দলের দ্রুত আলোচনা হওয়া উচিত বলেও মনে করছেন জোটের শীর্ষ নেতারা।

তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এখনো কোনো উদ্যোগ নেই। শিগগিরই জোটের কোনো বৈঠক হবে কি-না সে ব্যাপারেও তারা কিছু বলতে পারছেন না।

সম্প্রতি ১৪  দলের পক্ষ থেকে এজোটকে সক্রিয় করতে একাধিকবার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগ তাতে কোনো সাড়া দেয়নি বলে জানান জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)’র সভাপতি সাংসদ হাসানুল হক ইনু।

তিনি বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে সারা দেশে ১৪ দলকে দ্রুত সক্রিয় করা উচিত। আমরা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছি। কিন্তু কোনো সাড়া পাচ্ছি না। ’   

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের এক পর্যায়ে ২৩ দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে গড়ে ওঠে ১৪ দলীয় জোট। পরবর্তী কালে  এই জোটের আকার বাড়িয়ে আওয়ামী লীগ সাবেক রাষ্ট্রপতি এরশাদের জাতীয় পাটিসহ কয়েকটি ইসলামি দলকে নিয়ে মহাজোট গঠন করে। তবে এ মহাজোটের ব্যাপারে আপত্তি তোলে ১৪ দলের শরিকরা। তখন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘মহাজোট গঠন করা হলেও ১৪ দলই আমাদের রাজনৈতিক ও আদর্শিক জোট। ’

মহাজোট সরকার মতায় আসার পর গত ১৬ মাসে ১৪ দল শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের বৈঠক হয়েছে মাত্র দু’টি। শেষবার বৈঠক হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি।

সভায় যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল তার একটিও বাস্তবায়ন হয়নি বলে জোট নেতাদের অভিযোগ।

এরপর গত ২ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে মহাজোটের সব নেতা, সাংসদ ও মন্ত্রীদের একটি বৈঠক হয়। এ বৈঠকটিও গতানুগতিক ছিল বলে জানান তারা।

শরিকদের ক্ষোভ এবং দূরত্ব কমাতে সরকারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ১৪ দলের সঙ্গে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেন।

এ বৈঠকে ১৪কে সক্রিয় করে নিয়মিত বৈঠকের সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবে তার দেখা মেলেনি।

শরিকদের অভিযোগ, সরকার পরিচালনাসহ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে জোটের কোনো পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে না। জোটের কোনো সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয় না।

৯ ফেব্রুয়ারি জোটের শেষ বৈঠকে জেলায় জেলায় ১৪ দলের সমন্বয় কমিটি গঠন, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কমিটিগুলোতে জোটের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ত করা ও পরামর্শ নেওয়া, কেন্দ্রীয় কার্যালয় স্থাপনসহ বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর একটিও বাস্তবায়িত হয়নি।

এছাড়া রাজনৈতিক জোট হিসেবে ১৪ দলকে সক্রিয় রাখার ব্যাপারেও আওয়ামী লীগ আন্তরিক নয় বলে তাদের অভিযোগ।

১৪ দলের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম.বিডিকে বলেন, ‘১৪ দলীয় জোটকে সক্রিয় রাখা ও সমন্বয়ের দায়িত্ব আওয়ামী লীগের। কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো উদ্যোগ নেই। ’

আরেক শরিক দল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)’র সাধারণ সম্পাদক শরিফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, ‘১৪ দলের কোনো তৎপরতা নেই। বিগত সভায় যেসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তার একটিরও বাস্তবায়ন হয়নি। যখন বসা হয়, তখন অনেক কিছুই আলোচনা হয়। বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন নেই। ’

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ-মোজাফ্ফর) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এনামুল হক বলেন, ‘দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি চলছে। এ সময় রাজনীতি করতে বিএনপি-জামায়াত তো এক জায়গায় দাঁড়াবেই। এ অবস্থায় স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির ঐক্যবদ্ধ অবস্থান জরুরি। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো ১৪ দলকে মূল্যায়নই করছে না। ’

গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নুরুর রহমান সেলিম বলেন, ‘যে কোনো ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জোটগত প্রস্তুতি থাকা দরকার। ’

তবে এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘১৪ দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। ’

বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোটগতভাবে রাজনৈতিক তৎপরতা শুরু করা হবে কি-না সে ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেনি।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, ‘এ মাসেই ১৪ দলকে নিয়ে বসা হতে পারে। দ্বিতীয় সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভা রয়েছে। সভায় সার্বিক বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। ’

বাংলাদেশ সময় ১২.০০ঘন্টা, জুলাই ৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।