ঢাকা, শনিবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

খালেদার বাড়ি ইস্যুতে আন্দোলনের হুমকি বিএনপি’র

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১০
খালেদার বাড়ি ইস্যুতে আন্দোলনের হুমকি বিএনপি’র

ঢাকা: খালেদা জিয়ার ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ইস্যুতে আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে বিএনপি। দলের মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেছেন খালেদা জিয়াকে তার সেনানিবাসের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার উদ্যোগ ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রের অংশ।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদ একটি রাজনৈতিক ইস্যু। খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি উচ্ছেদ করলে জনগণ তা মেনে নেবে না। ’

২৮ অক্টোবর পল্টন হত্যাকাণ্ড উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে বিএনপি আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন।

বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে আয়োজিত স্মরণসভায় বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘আপনারা (সরকার) যে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটিয়েছেন, ১১ জানুয়ারি এনেছেন, ক্ষমতায় এসেছেন, সেই ধারাবাহিকতারই একটা অংশ হলো খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে উচ্ছেদের নোটিস। ’

তিনি বলেন, ‘এ বাড়ি একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি। একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধান নেত্রীর বাড়ি। তিনি দলের প্রধান নেত্রী না হলে সরকার তাকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতো না। তাদের একটিই ভয়। আর তা হলো বিএনপি ও জিয়াউর রহমানের পরিবার। এজন্যই তারা সেনানিবাসের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করছে। ’

সরকারকে উদ্দেশ্য করে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তাদের বন্ধুদের (ভারত) সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ও নীলনকশা অনুযায়ী ২৮ অক্টোবরের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। ওই দিন তারা ১৩ জনকে হত্যা করেছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমরা এ সরকারের অনেক অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি। এবার বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ করে ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। ’

সরকার ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের বিচার না করলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে সকল অন্যায় অত্যাচার মোকাবিলার জন্য সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান তিনি।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন ,‘অনেক রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছি। এ স্বাধীন দেশে এখন মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করতে পারছে না। আজ বিচার বিভাগের দলীয়করণ, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি ইত্যাদি সঙ্কটে দেশ অচল হয়ে গেছে। তারা (আওয়ামী লীগ) ক্ষমতায় গিয়ে নির্বাচনী ওয়াদা একটিও পূরণ করেনি। ছাত্রলীগ-যুবলীগ এখন লুটপাট, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও মানুষ খুন নিয়েই ব্যস্ত।

সাধারণ মানুষকেও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী পতাকাতলে সামিল হওয়ার আহবান জানান দেলোয়ার।

সরকারকে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেওয়ার আহবান জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন দিন। তা না হলে এর খেসারত দিতে হবে। ’

পল্টনের হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে দাবি তুলে মোশাররফ বলেন, ‘সরকার হত্যাকারীদের বিচার করে না বলেই নাটোরসহ বিভিন্ন জায়গায় হত্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা গায়ের জোরে সব কিছু করছে। সহযোগী দলের নেতাকর্মীদের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলেছে। ’

তিনি আরো বলেন, ‘যে বাড়িতে জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্মৃতি জড়িত সেই বাড়ি থেকে এ সরকার খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করার ষড়যন্ত্র করছে। এ ষড়যন্ত্র জনগণ মেনে নেবে না। সকল জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হবে। ’

স্মরণসভায় আরো ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ড. আব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, সাংসদ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক উইং কমান্ডার (অব.) হামিদুল্লাহ খান, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা প্রমুখ।

ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, ‘যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সারাদেশে অস্থিরতা বিরাজ করছে। ’

খালেদা জিয়াকে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানান তিনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘২৮ অক্টোবর হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ শেখ হাসিনাই দিয়েছিলেন। আজকেও তাদের ইঙ্গিতেই দেশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। পত্রিকা খুললেই হত্যা  আর হত্যা। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই। ’

সভাপতির বক্তব্যে সাদেক হোসেন খোকা সরকারকে ধোঁকাবাজ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘এ সরকার ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ছাড়া কিছুই করেনি। তারা চাইছে পুলিশ ও জনগণকে মুখোমুখি দাঁড় করাতে।

এদিকে স্মরণসভা চলাকালে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে দুই দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

সভাস্থলে যাতায়াতের পথে শরীরে ধাক্কা লাগাকে কেন্দ্র করে বিকেল পৌনে চারটার দিকে প্রথম দফা হাতাহাতির সূত্রপাত।   ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলসহ অন্যদের প্রায় ১০ মিনিটের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে এর কয়েক মিনিটি পরই দ্বিতীয় দফা হাতাহাতি শুরু হয়। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্য নেতারা দ্বিতীয় দফা হাতাহাতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

হাতাহাতি শুরু হওয়ার আগে বক্তব্য দেওয়া সব নেতাই সরকারকে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী বলে অভিযুক্ত করেন।

তারা বলেন, ‘এ সরকার চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসী সরকার। তারা বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের হত্যা করছে। তারা মানুষ নয়। ’

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর রাজধানীর পল্টনসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও সদ্য মতাত্যাগী বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা রক্তয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।

বিএনপি-জামায়াত জোটের অভিযোগ, ওই দিন ১৪ দলের লোকজন লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে তাদের কয়েকজন নেতা-কর্মীদের হত্যা করেছে। তারপর লাশের ওপর দাঁড়িয়ে নাচানাচি করেছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৮২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৮, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।