ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বিকল্প আন্দোলনের পথে চার দলীয় জোট

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১০
বিকল্প আন্দোলনের পথে চার দলীয় জোট

ঢাকা: সমমনা দলগুলোকে নিয়ে বিকল্প আন্দোলনের পথে হাঁটছে চার দলীয় জোট। নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে ছোট ছোট কর্মসূচি দিচ্ছে তারা।

সব কিছু গুছিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন শুরুই তাদের লক্ষ্য বলে জানিয়েছে দলীয় সূত্র।

তাই অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে বিএনপি ও জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। বুধবার বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ পালন করেছে বিএনপি। এছাড়া ২৪ অক্টোবর জেলা শহরে এবং ২৭ অক্টোবর উপজেলা-থানায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল কর্মসূচি আছে তাদের। বুধবার মুক্তাঙ্গনের সমাবেশে ২৮ অক্টোবর আবারও একই স্থানে বিক্ষোভের ঘোষণাও দিয়েছে তারা।

চার দলীয় জোটে বিএনপির অন্যতম সহযোগী বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ২০ অক্টোবর থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত দেশব্যাপী গণসংযোগ কর্মসূচি, ২৭ থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল এবং  ১ থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত দেশের সব জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ে সভা সমাবেশ করবে।

এছাড়া আর সব সমমনা দলও এরকম ছোট ছোট কর্মসূচি ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দলীয় সূত্রমতে, নেতাকর্মীরা সংগঠিত হলে প্রয়োজনে লংমার্চ, ঘেরাও ও হরতালের মত কর্মসূচিও ঘোষণা করবে বিএনপি ও তাদের সহযোগীরা। তবে জনদুর্ভোগ বাড়ে এমন কোনো কর্মসূচি এখনই দিতে চাইছে না তারা। জনমত পক্ষে রাখার জন্যই তারা এ কৌশল নিয়েছেন। আর জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান চার দলীয় জোট শরিক ও সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন কর্মসূচি ও বিকল্প আন্দোলনের কৌশল নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছেন।

বাংলানিউজকে শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘আমরা সমকালীন আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ’

থাইল্যান্ডের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বেই আন্দোলনের ধরন পরিবর্তন হয়েছে। হরতাল, ঘেরাও এসব কর্মসূচি যতটা পারি এড়িয়ে চলাই আমাদের চিন্তা। আমরা চাই জনগণের দুর্ভোগ হবে না এমন কর্মসূচি দিতে। তবে এমন কর্মসূচি দিতে চাই যে কর্মসূচির ফলে সরকার বেকায়দায় পড়ে। আমরা বিশ্ববাসীকে সরকারের খারাপ কাজগুলোর কথা জানাতে চাই। ’

সরকারের আচরণে আন্দোলনের বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। সামনের ঈদুল আজহা পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি দিয়ে জনগণকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ’

বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিরোধী দল আন্দোলন করতে না চাইলেও সরকারই বাধ্য করছে বিরোধী দলকে আন্দোলনে যেতে। ’

তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘সিরাজগঞ্জে খালেদা জিয়াকে সমাবেশ করতে দিলে কি সরকারের পতন হতো? সরকার কেন বিএনপির আবেদনে সমাবেশের অনুমতি না দিয়ে সরকারের উপদেষ্টাকে অনুমতি দিলেন?’

তিনি বলেন, ‘সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। উল্টো বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের নামেই মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। সব মিলিয়ে সরকার দেশে একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য জনগণকে সঙ্গে নিয়েই আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে। ’
 
তিনি আরও বলেন, ‘সরকারই বিএনপিকে বড় ধরনের আন্দোলনে যাওয়ার পথে ঠেলে দিচ্ছে। ’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশে ভয়াবহ অবস্থা চলছে। সিরাজগঞ্জ ও নাটোরের মতো সারাদেশেই বিরোধী দলের নেতা কর্মীদের ওপর নির্যাতন চলছে। মিথ্যা মামলার কারণে বিএনপির বহুকর্মী বাড়ি ছাড়া। সিরাজগঞ্জে এখন কোনো বিএনপি নেতাকর্মী বাড়িতে থাকতে পারছেন না। ’

জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতের নেতা কর্মীদের ওপর যেভাবে মামলা-হামলা-নির্যাতন চালানো হচ্ছে তাতে আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের কথা চিন্তা না করে ভারতকে কড়িডোর, ট্রানজিট দিচ্ছে। তারা দেশের স্বার্থে গত ২২ মাসে কিছুই করেনি। ’

চারদল ঐক্যবদ্ধভাবে সরকার পতনের আন্দোলনে যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় হলে সবই দেখতে পাবেন। সরকার সারাদেশে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে, প্রকাশ্য দিবালোকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করছে তাতে আমাদের আন্দোলনের বিকল্প নেই। ’

বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী বাংলানিউজকে বলেন, ‘ঈদের আগেই আন্দোলনের বিষয় নিয়ে চারদলের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। ঈদের পর আমরা দলকে সংগঠিত করা নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত ছিলাম। ’

তিনি বলেন, ‘সরকার সংবিধান সংশোধনের নামে মুসলমানদের ধর্মের উপর আঘাত হানার চেষ্টা করছে। দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি করে করিডোর ট্রানজিট দিয়ে দেশকে অন্যের হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এসবের প্রতিবাদে আমাদের আন্দোলন চলছে। আগামীতে বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হবে। সরকারই আমাদের আন্দোলন করতে বাধ্য করছে। ’

প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাড়ির বরাদ্দ ও তার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর প্যারোল বাতিল, নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান সানাউল্লাহ নূর বাবু হত্যা, সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে ট্রেন পোড়ানোর ঘটনায় বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মামলা ও ব্যাপক ধরপাকড়, বিচার বিভাগের ওপর হস্তক্ষেপ, প্রশাসনকে দলীয় কাজে ব্যবহার, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মামলা-নির্যাতন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার ও বিএনপি নেতা চৌধুরী আলম অপহরণ, চট্রগ্রাম বন্দরে সেনা মোতায়েনের ঘটনা, সংবিধান সংশোধনের নামে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিয়ে ১৯৭২ সালের সংবিধানে ফিরে যাওয়া, দেশে বাকশাল কায়েমের চেষ্টা,

ভারতের সঙ্গে গোপন চুক্তি, ট্রানজিট, কড়িডোর, টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ বন্ধ, দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি, ছাত্রলীগ-যুবলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, আইনশৃংখলার অবনতিসহ আরো বেশ কিছু ইস্যু পুঁজি করেই বড় কর্মসূচি দেবে বিরোধী দল।

আপাতত এসব ইস্যুর পক্ষে জনমত তৈরির জন্য নানা কর্মসূচি দিচ্ছে তারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।