ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

‘হাসিনা সরকারের প্রথম পুরস্কার ভাইয়ের লাশ’

আনছার হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১০
‘হাসিনা সরকারের প্রথম পুরস্কার ভাইয়ের লাশ’

কক্সবাজার: ‘কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের ব্যানারে নির্বাচন করে আমিই একমাত্র প্রার্থী হিসেবে ভাইস চেয়ারম্যান পদটি শেখ হাসিনাকে উপহার দিয়েছিলাম। আর সেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রথম পুরস্কারটি পেলাম আমার ভাইয়ের লাশ।



এ আক্ষেপ কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলমগীর চৌধুরী হিরুর। তিনি র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’ সংগঠনের জেলা যুগ্ম আহবায়ক ও যুবলীগ নেতা রাশেদ উদ্দিন চৌধুরী বাবরের বড় ভাই।

বুধবার ছোট ভাই বাবু নিহত হওয়ার পর সকাল সাড়ে ১১টায় শহর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

হিরু বলেন, ‘আমার ভাইকে শুধু ক্রয়ফায়ারে হত্যাই করা হয়নি, বর্বর কায়দায় তার দুই হাত ও একটি পাও ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। এটি ক্রসফায়ার না হত্যাকাণ্ড!’

তিনি বলেন, ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যার পেছনে আমরা রাজনীতি করেছি, তাঁর ক্ষমতাকালেই ঠাণ্ডা মাথায় মানুষ হত্যা, এটাকে কী বলবো! বিনাবিচারে ভাই হত্যার বেদনা কেমন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি কেউ বোঝার কথা নয়। ’

ভাই হত্যার বিচার ও বিভাগীয় তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, ‘বিনা বিচারে কেউ যেন সন্তান না হারায়। ’

ভাই হত্যার জন্য ঈদগাঁও এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল ফোরকানকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের যে কর্নেল আশফাকের নেতৃত্বে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়েছে তিনি কর্নেল ফোরকানেরই ব্যাচমেট। ’

হিরুর অভিযোগ, আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমার ভাই বাবর ছিলেন ইউপি নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী। আর কর্নেল ফোরকানের ভাই মোহাম্মদ আইয়ুবও সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী। কিন্তু আমার ভাইয়ের জনপ্রিয়তায় ইর্ষান্বিত হয়ে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ’
 
কর্নেল ফোরকানের ভাগিনা, জালালাবাদ ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ওসমান সরওয়ার দীপুর একটি মামলায় বাবরকে ফাঁসাতে না পেরে অনেকদিন ধরেই তার পেছনে কর্নেল ফোরকান লেগে ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভাই হত্যার মানবিক আবেদন তুলে ধরে হিরু বলেন, ‘বাবরের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী মনজুরা বেগম হয়তো স্বামীর শোকেই মারা যাবেন। এই মাসেই তার সন্তান প্রসব হওয়ার কথা রয়েছে। তার একমাত্র কন্যা নাভা’র কি হবে এখন!’
 
ভাইয়ের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই এক সময় বেপথে ছিলো। তার জন্য সে ৭ বছর জেলও খেটেছে। যখনই আমাদের মনে হয়েছে সে পরিপক্ক হয়েছে তখনই আমরা জেল থেকে ছাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছি। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সে ভালো মানুষই হয়ে গিয়েছিল। পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়তো। সাধারণ মানুষের সুখে দুঃখে থাকতো। ’

এদিকে ‘ক্রসফায়ারে’ নেতৃত্ব দেওয়া র‌্যাব-৭ কর্মকর্তা কর্নেল আশফাক বাংলানিউজকে বলেন, ‘কোনো ফোরকানকেই আমি চিনি না। ’

বাবর ভালো মানুষ হলে থানায় তার নামে ৪০টি মামলা কোত্থেকে এলো সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
 
এদিকে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফোরকান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের পরিবারের কেউ চেয়ারম্যান মেম্বারে দাঁড়াবে না। ওরা কেন এসব কথা বলছে মাথায় আসছে না। ’

তিনি আরো বলেন, ‘আমার ব্যাচমেটরা সবাই ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হয়ে গেছেন। আমার ব্যাচমেট কেউ কর্নেল নেই। ’   

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২০, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।