ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়া নিয়ে বিভিন্ন দলের রাজনীতিকসহ দেশের বিশিষ্টজনরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
শহীদ মঈনুল রোডের ওই বাড়িটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানামুখী কথা হচ্ছিল।
বাড়ি রক্ষায় আইনি লড়াই চালানোর পাশাপাশি রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা ভাবছে বিএনপি। আর স্থায়ী কমিটি সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ সিনিয়র নেতাদের একাংশ বিষয়টিকে পুরোপুরি রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে দেখারই দাবী তুলছেন। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কেবল আদালতের রায় বাস্তবায়নের মাধ্যমেই বিষয়টির সমাধান চাইছে।
এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যেও চলছে কানাঘুষা। বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষে মত আসছে বিশিষ্টজনদের আলোচনাতেও। বাংলানিউজের পক্ষ থেকে কয়েক জন রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়ার ২৮ বছর পর খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ বড় দুই দলের মধ্যে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে বলেও আশঙ্কা ধ্বণিত হয়েছে কারো কারো কণ্ঠে। আবার বিষয়টিকে রাজনীতির সঙ্গে না জড়ানোরও পরামর্শ দিয়েছেন কেউ কেউ।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ মঙ্গলবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে তার বক্তৃতায় খালেদা জিয়ার বাড়ি সম্পর্কে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক ফায়সালার বিষয় নয়, এটি আইনের বিষয়। আদালতই তাকে (খালেদা) সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা আইনের মাধ্যমেই ফয়সালা হবে। ’
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনীতিতে এখন শালীনতা ও সহনশীলতার অভাব। আদালতের এ বিষয় নিয়ে কারো মাঠে ময়দানে বক্তব্য দেওয়া উচিত নয়। আদালতের সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া উচিত। ’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিষয়টি নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলছে। অথচ তাদের লোকদের দখলবাজি তারা দেখছে না। ’
বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি সদস্য ও সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘বরাদ্দের ২৮ বছর পর খালেদা জিয়ার বাড়ি নিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা দু:খজনক। এই বাড়িটি নিয়ে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। আমি তখন সেনাপ্রধান ছিলাম। ’
তিনি বলেন, ‘প্রতিহিংসামূলকভাবে যদি কেউ এই সমস্যা সৃষ্টি করে সে জন্য তারাই দায়ী থাকবে। কারণ, খালেদা জিয়া যখন বাড়ি বরাদ্দ পেয়েছিলেন তখন ছিলেন গৃহবধূ, এখন তিনি বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান। ’
তিন দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়া খালেদা জিয়ার স্মৃতি বিজরিত এই বাড়ি নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা।
জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার বাড়ির বিষয়টি যেহেতু আদালত পর্যন্ত পৌঁছেছে ও আদালত একটি রায় দিয়েছেন, সেহেতু এ রায়ে সবারই শ্রদ্ধা দেখানো উচিত। ’
বিষয়টি রাজনীতির সঙ্গে জড়ানো উচিত নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে খালেদা জিয়া আদালতে আপিল করতে পারেন। ’
তিনি বলেন, আদালতে যাওয়ার আগে এটা রাজনৈতিক ভাবে ফয়সালার একটা সুযোগ ছিল।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া গৃহবধূ হিসেবে বাড়িটি বরাদ্দ পেয়েছিলেন। এখন তিনি বড় রাজনৈতিক দলের নেত্রী। এখন আর তার ওই বাড়িতে থাকা উচিত নয়। তিনি স্বেচ্ছায় বাড়িটি ছেড়ে দিলে এই সমস্যা হতো না। ’
তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ নেই। এই বাড়ির বরাদ্দ এখন বাতিল হবে। দেশে উত্তেজনা বাড়বে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবার বরাদ্দ নেবে। এভাবেই দেশ চলবে। ’
রাজনীতিকদের ব্যক্তি স্বার্থের প্রতি দুর্বলতা থাকলে দেশের উন্নতি কিভাবে হবে সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খালেদা জিয়ার বাড়ি রাজনীতির বিষয় নয়। এর আগে শেখ হাসিনার বাড়ির বরাদ্দও বাতিল হয়েছে। তাই খালেদা জিয়ার বাড়ির বরাদ্দ বাতিলের বিষয়টিকে খুব বড় করে দেখার কিছু নেই। ’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির উচিৎ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখানো। আর খালেদা জিয়ার বাড়ি সরকারের পলিসি পার্ট হতে পারে, রাজনীতির পার্ট হওয়া উচিত নয়। ’
সিপিবি’র পলিট ব্যুরো সদস্য হায়দার আকবর খান রনো বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাড়ি নিয়ে দুই দলই রাজনীতি করছে। এর সঙ্গে জনগণের কোনো সর্ম্পক নেই। ’
খালেদা জিয়ার আইনগত ভাবে এগিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৯, ২০১০