ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

সরকার পরিকল্পিতভাবে সমাবেশের ওপর ট্রেন চালিয়েছে: টুকু

আহমেদ রাজু, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০
সরকার পরিকল্পিতভাবে সমাবেশের ওপর ট্রেন চালিয়েছে: টুকু

সিরাজগঞ্জ থেকে ফিরে: সরকার সিরাজগঞ্জে পরিকল্পিতভাবে সমাবেশের ওপর ট্রেন চালিয়ে দিয়ে বিএনপি কর্মীদের হত্যা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।

গতকাল টুকু তার সিরাজগঞ্জের বাসভবনে বাংলানিউজকে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে এ অভিযোগ করেন।



তিনি বলেন, ‘সমাবেশে ট্রেন চালিয়ে মানুষ খুন করে এখন উদোর পিণ্ডি বুঁদোর ঘাঁড়ে চাপানোর চেষ্টা করছে সরকার। সরকার বিএনপিকে ভয় পায়। ’

সম্প্রতি যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডে দেশবাসী অতিষ্ঠ। তাই বিএনপি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বিএনপির এ জনপ্রিয়তা সরকার সহ্য করতে পারছে না। বিএনপিকে ধ্বংস করতেই সরকার এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে দাবি করেন ইকবাল হাসান মাহমুদ।

তিনি আরও বলেন, ‘১/১১ থেকে আওয়ামী লীগের শিক্ষা নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনও প্যারোলে আছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াও জামিন নিয়ে আছেন। শেখ হাসিনার প্যারোল বাতিল করা হয়েছে কি-না তা আমার জানা নেই। তাই আওয়ামী লীগের উচিত গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তাদের এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়। যাতে গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ে। ’

বিএনপি নেতা টুকু বলেন, ‘আমরা চাই দেশটি আমাদের হোক। গণতন্ত্র অব্যাহত থাকুক। কিন্তু দেশকে এমন পর্যায়ে দেখতে চাই না, যেখান থেকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে সমস্যা হবে। অথচ আওয়ামী লীগ দেশে যে অরাজকতা, লুটপাট, সন্ত্রাস ও খুন খারাবি চালাচ্ছে তাতে আগামীতে দেশে গণতন্ত্র অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে পড়তে পারে। ’
 
সমাবেশ করতে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সমাবেশের ১০/১২ দিন আগেই আমরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে চিঠি দিয়েছি। কিন্তু এখন সরকার বলছে সমাবেশ করতে আমরা সরকারের অনুমতি নিইনি। ’

রেলওয়ে ও যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষেরও অনুমতি নেওয়া হয়নি বলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এগুলো ঠিক নয়। ’

তিনি বলেন, ‘জনসভার জন্য জনে জনে জানাবার প্রয়োজন নেই। কারণ যেখানে সমাবেশ হয়েছে সেটি একটি ফুটবল খেলার মাঠ। আমরা আগেও সেখানে অনেকবার জনসভা করেছি। কিন্তু তখন তো কোনও সমস্যা হয়নি। তখন তো বলা হয়নি, এখানে সমাবেশ করবেন না। এখন কেন প্রশ্ন উঠছে?’

নিজেই এর উত্তর দিয়ে টুকু বলেন, ‘আসলে সরকারের মেশিনারিজই খারাপ। সরকার উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সরকার দেখতে পাচ্ছে বিএনপি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে, এটাই তাদের ভয়। ’

সিরাজগঞ্জের ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মন্তব্যের সমালোচনা করে টুকু আরও বলেন, ‘রেলমন্ত্রী কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার আগেই বলে দিলেন বিএনপি এ ঘটনা ঘটিয়েছে। সরকার ব্যর্থতা ঢাকতে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। ’

তিনি বলেন, ‘সমাবেশে বিএনপির লোকেরা বেগম জিয়ার কথা শুনতে এসেছিলেন। তারা মারামারি ও ট্রেন ভাঙচুর করতে আসেনি। হাজার হাজার লোকের মধ্যে কে বিএনি কে আওয়ামী লীগ সেটি তো বোঝার উপায় ছিল না। ’

পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আওায়ামী লীগের লোকেরাই সমাবেশের মধ্যে ঢুকে হামলা ও ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
 
প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন চুক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকার ভারতের সঙ্গে অনেক চুক্তি করছে। ভারতের কাছ থেকে ৪ ভাগ সুদে ১ শ’ কোটি টাকা ঋণ নিচ্ছে। কড়িডোর ও ট্রানজিট দিচ্ছে। কিন্তু  আমরা কিছুই জানি না। সরকার ভারত থেকে বিদ্যুৎ আনছে। ভারতেই তো বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। ভারত কীভাবে বিদ্যুৎ দেবে?’

নিজের এ প্রশ্নের জবাবে টুকু বলেন, ‘সরকার এসব প্রচার চালিয়ে আসলে জনগণকে ধোকা দিচ্ছে। ’
 
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও গ্যাস-বিদ্যুতের সমস্যা নিয়ে সরকারের কড়া সমালোচনা করেন বিএনপি নেতা টুকু।

তিনি বলেন, ‘দেশে নানা সঙ্কট চলছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে মানুষ দিশেহারা। গ্যাস ও বিদ্যুতের সঙ্কটে দেশবাসীর কষ্টের সীমা নেই। শিল্প-কারখানার উৎপাদনও বন্ধ। কিন্তু জনগণের সমস্যা সমাধানে সরকারের কোনও খেয়াল নেই। ’

তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সরকার মানুষকে ধোকা দিচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয়  গ্রিডে ১২ শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু সেটি করতে তারা পারবে না। ’

তিনি বলেন, ‘শীত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা খুব কম থাকে। তখন এমনিতেই লোডশেডিং কমে যায়। তখন তো বাড়তি বিদ্যুতের প্রয়োজনই নেই। ’
 
তিনি বলেন,‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই মানুষ স্বস্তিতে থাকে না। এবার ক্ষমতায় আসার পরও সরকার দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। ’
 
তিনি বলেন, ‘সরকার জনগণের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছে না। অথচ দেশবাসীর সমস্যার কথা বলতেও দিতে চায় না। এমন কি বিরোধী দলের দায়িত্ব পালনও করতে দিচ্ছে না সরকার। সরকারের অগণতান্ত্রিক কাজ কর্মের প্রতিবাদ করতে গেলেও বাধা দেয়। হরতাল করতে দেয় না। এমন কি কোনও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিও পালন করতে দেয় না। তাহলে এ দেশে গণতন্ত্র বিকশিত হবে কীভাবে?’
 
বিএনপি নেতা টুকু বলেন, ‘সরকার বিএনপিকে ধ্বংস করতে চায়। বিএনপি নেতারা যাতে সভা সমাবেশ করে দলকে সংগঠিত করতে না পারেন, সেজন্য বিএনপি নেতা-কর্মীদের নামে একের পর মামলা দিচ্ছে। তার ধারাবাহিকতায় গতকাল সিরাজগঞ্জ জিআরপি ও যমুনা পশ্চিম থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে ছয়টি মামলা হয়েছে। ’

‘তবে মামলা হামলা করে সরকার বিএনপিকে দমন করতে পারবে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কারণ বিএনপির শেকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। মাটি ও মানুষের সঙ্গে রয়েছে বিএনপির আত্মার সম্পর্ক। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।