ঢাকা: ‘সিরাজগঞ্জে বিএনপির দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারি মাহবুব-উল আলম হানিফ।
বিনা অনুমতিতে রেল লাইনের পাশে কেন বিরোধী দলের নেতার সমাবেশ ডাকা হলো, ট্রেনের হুইসেলের পরেও কেন লোকজনকে সরিয়ে দেওয়া হলো না প্রশ্ন করে হানিফ বলেন, ‘তাদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণেই সিরাজগঞ্জে ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
হানিফ দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ধ্বংসের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
হানিফ বলেন, নাটোরের একটি অনাকাঙ্খিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া যে বক্তব্য দিয়েছে তাতে প্রমাণ হয়েছে তারা সহিংস রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তিনি দেশে সংঘাত, প্রতিশোধ এবং আরো রক্তপাতের হুমকি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানিয়ে দেশকে অসাংবিধানিক পথে ঠেলে দেয়ার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মচারিদের পর্যন্ত গুরুতর উস্কানি দিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে তার হিংস্র ও ফ্যাসিবাদী চরিত্রের উন্মোচন হয়েছে। ক্ষমতার জন্য তারা যে মানুষ হত্যা করতে পারে এবং লাশের রাজনীতি করতেও দ্বিধাবোধ করে না সেটা আবারো প্রমাণ হয়েছে।
মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বিরোধী দলকে ষড়যন্ত্র, সংঘাত ও অপ্রচারের রাজনীতি পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকারের পাশাপাশি বিরোধী দলেরও দেশের প্রতি, জনগণের প্রতি দায়িত্ব আছ্। ে আসুন জাতীয় স্বার্থে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে সাংঘষিক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে সহিষ্ণু রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তুলতে এক যোগে কাজ করি।
তিনি আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এমন কোনো কাজ করবেন না বা প্রশ্রয় দেবেন না যাতে জনগণ আশাহত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের প্ররচোনার ফাঁদে পা দেবেন না।
হানিফ দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চায়, অতীতের মতো হত্যা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, লুটপাটের রাজত্ব কায়েম করতে চায় তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দাঁড়ান।
সংবাদ সম্মেলনে হানিফ প্রশ্ন করে বলেন, যিনি দুইবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তিনি কিভাবে জানেন না ট্রেন কিভাবে চলে। ট্রেন থামাতে হলে অন্তত এক কিলোমিটার স্পেস দরকার হয়। খালেদা জিয়া জনসভায় আসবে বলে ঘুরে যাবে এটা কি করে হয়। তারা কি জানে না রেল লাইনের ৫০ গজের মধ্যে জনসভা করা যায় না।
হানিফ বলেন, জনসভা করার জন্য বিএনপি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো অনুমতি নেয়নি। এই জায়গাটি যমুনা সেতুর নিকটবর্তি, যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষেরও কোনো অনুমতি নেয়নি তারা।
ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ এবং প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই স্থানে তাদের জনসভা না করার অনুরোধ করা হয়েছিলো কিন্তু বিএনপি তা মানেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যেহেতু বিরোধী দলের নেতা বক্তব্য রাখবেন সেখানে বাধা দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে এই জন্য প্রশাসন জোর করে জনসভা বন্ধ করে দেয়নি। ’
তিনি বলেন, আমরা বিস্মিত হচ্ছি উদ্যোক্তারা কতটুকু দায়িত্বজ্ঞাহীন হলে রেললাইনের মাত্র ১৫ গজ দুরে অবৈধভাবে খালেদা জিয়ার মতো জাতীয় নেতার জনসভার মঞ্চ তৈরি করতে পেরেছে। যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষের আওতাধীন স্থানে জনসভার পূর্বঅনুমতিও যেমন তারা নেয়নি, তেমনি দূর্ঘটনার আগে ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বার বার অনুরোধ সত্বেও রেল লাইন থেকে লোকজন সরে আসেনি। এবাপারি স্থানীয় বিএনপির নেতাদের ভূমিকাও ছিলো রহস্যজনক।
হুইসেল বাজাতে বাজাতে ট্রেনটি ধীর গতিতে এসে থেমে যায়। কিন্তু তারপরও দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়নি। এরপর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের সন্ত্রাসী ক্যাডাররা ট্রেনের নিরাপরাধ যাত্রীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। অবাধে লুটপাট চালায় এবং ট্রেনটিতে অগ্নিসংযোগ করে। দরিদ্র দেশের মুল্যবান রাষ্ট্রীয় সম্পদ ভষ্মিভ’ত করে।
দূর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করবো তদন্ত কমিটি রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত থেকে তদন্ত সম্পন্ন করবে। এমন মর্মান্তিক দূর্ঘটনা এবং অবৈধভাবে রেল লাইনের ওপর করার পেছনে কারা দায়ী তাও উদ্ঘাটন করবেন। ’
অতীতে নাটোরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর অত্যাচার-নির্যাতনের অভিযোগ তুলে ধরে হানিফ বলেন, ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তিনি রাজশাহী সফরের পথে নাটোর রেল স্টেশনে নাটোরের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীণ জননেতা ও সাবেক সাংসদ শঙ্কর গোবিন্দ চৌধুরীকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা ট্্েরন থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে চির দিনের জন্য পঙ্গু করে দেয়। ৮৭ সালে নাটোরের আব্দুল্লাহপুরে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য বিএনপির সন্ত্রাসীরা গুলি বর্ষণ ও বোমা নিক্ষেপ করেছিলো।
তিনি আরও বলেন, ‘২০০১-৬ এই ৫ বছর প্রীয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ একটা মৃত্যু উপত্যাকায় পরিণত হয়েছিলো। নাটোর ও বড়াইগ্রামে সাবেক উপমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর নেতৃত্বে বিএনপি সন্ত্রাসীরা সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা মমতাজউদ্দিনকে হত্যা করেছিলো। এই দুলুর প্রশ্রয়েই জঙ্গিবাদের হোতা সিদ্দিকুর রহমান বাংলা ভাইয়ের উন্থান ঘটেছিলো। আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আয়নালকে বিএনপির সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছিলো। শুধু তাই নয় আওয়ামী লীগ সমর্থিত গ্রাম শাহাপাড়া, আমতলি এাবং এর সংলগ্ন বাজার গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছিলো। ’
বাংলাদেশ সময় ২০০০ ঘন্টা, অক্টোবর ১২, ২০১০