ঢাকা: শুরু হয়েই থমকে গেছে সারা দেশে বিএনপির মাসব্যাপী কর্মসূচি। কর্মসূচি পালনের জন্য কেন্দ্র থেকে কমিটি করে দেওয়া হলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের অসহযোগিতার কারণেই সময়মতো কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলের মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
কর্মসূচি শুরুর চার দিন অতিবাহিত হলেও অনেক জেলা কমিটির নেতা এখনো চিঠি পাননি বলে জানা গেছে।
গত ২১ সেপ্টেম্বর স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অক্টোবরে মাসব্যাপী থানা ও উপজেলায় গণসংযোগ ও প্রতিবাদ সভা করার কথা ঘোষণা করা হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। এ ছাড়া ১০ অক্টোবর ২০১০ শহীদ জেহাদ দিবস উপলে ছাত্র গণজমায়েত করার কথা রয়েছে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায়। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এতে বক্তব্য রাখবেন।
সরকারের বিরুদ্ধে জুলুম, নির্যাতন, হয়রানি, মামলা, হামলা, অপহরণ, গুম, খুন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, নিয়োগ বাণিজ্য, দেশবিরোধী চুক্তি, বিচার বিভাগের ওপর নগ্ন হস্তপে ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে দলীয় লোকজন নিয়োগের অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদে এ কর্মসূচি দেয় বিএনপি।
কর্মসূচি শুরুর তিনদিন পেরিয়ে গেলেও কোথাও এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না বলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খবর নিয়ে জানা গেছে।
এ ছাড়া দলের মাঠ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগের সুরে বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েই সিনিয়র নেতারা তাদের কাজ শেষ করেছেন। ’
ক্ষোভ প্রকাশ করে নেতাকর্মীরা আরও বলেন, ‘মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন বেশিরভাগ সময়ই থাকেন অসুস্থ, সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর অস্ট্রেলিয়ায় প্রায় একমাস ঈদের ছুটি কাটিয়ে এলেন। যুগ্মমহাসচিব আমান উল্লাহ আমান কিছু জেলার কমিটি করে চলে যান বিদেশে।
তবে দিন কয়েক আগে দেশে ফিরে অবশ্য ঢাকা জেলার সাভার থানার কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে বিরোধ মেটানোর উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। সোমবার সাভার থানার নেতাদের নিয়ে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে বৈঠক করেন আমান উল্লাহ আমান।
আর বৃহস্পতিবার দেশে ফিরে রাজধানীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যেতে শুরু করেছেন মির্জা ফখরুল। এরমধ্যে গুলশান অফিসে গিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি।
দলের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সাংগঠনিক তৎপরতা নেই এমন অভিযোগ করেছেন বিএনপির একাধিক নেতা। পদ হারানোর ভয়ে তরুণ নেতারা এ ব্যাপারে প্রকাশ্য কিছু বলতে না চাইলেও তাদের মধ্যে প্রচ- ক্ষোভ রয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক সেনা প্রধান মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কর্মসূচি ঘোষণা হয়েছে, পালিতও হবে। প্রস্তুতিও চলছে। ’
মাসব্যাপী কর্মসূচির প্রথম তিন চারদিন কোনো সাংগঠনিক তৎপরতা নেই কেন জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি আমার এলাকার কথা বলতে পারি। দলের নির্দেশ অনুযায়ী আমি আগামী বৃহস্পতিবার এলাকায় যাবো। থানা পর্যায়ের নেতারা প্রতিদিনই প্রতিবাদ সভা ও গণসংযোগের কাজ করছেন। ’
অন্য কোনো জেলায় রাজনৈতিক কার্যক্রম নেই কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এটা দলের মহাসচিব ও দায়িত্ব প্রাপ্তরা বলতে পারবেন। ’
সেপ্টম্বরের প্রথম দিন থেকেই কর্মসূচি পালনের কথা থাকলেও তা হচ্ছে না প্রশ্ন করা হলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, ‘রাজনৈতিক অনুষ্ঠান করতে কিছুটা সময় লাগে। বললেই তো সভা-সমাবেশ করা যায় না। এলাকায় প্রচারের প্রয়োজন আছে। নেতাদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। আমি নিজেও ৮ সেপ্টম্বর ঠাকুরগাঁও যাচ্ছি। ’
তিনি বলেন, ‘ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এ সপ্তাহের শেষের দিকে গাইবান্ধা যাবেন । এভাবেই সিনিয়র নেতারা কর্মসূচি পালনের জন্য চলতি সপ্তাহেই দায়িত্বপ্রাপ্ত থানায় যাওয়া শুরু করবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বিরোধী দল, এমনিতেই নানা হামলা মামলার শিকার হচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে দল ও দলের নেতাকর্মীদের চিন্তা করেই পর্যায়ক্রমে প্রতিবাদ সভা করছি। ’
ঘোষিত সময়মতো কর্মসূচি পালিত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি যতোদূর জানি, এ পর্যন্ত সবাই চিঠি পেয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘নেত্রকোনা জেলার দায়িত্বে রয়েছি আমি নিজে, ঢাকা জেলার দায়িত্বে রয়েছেন সরোয়ারী রহমান, আর গাজীপুরের দায়িত্বে রয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। এর বেশি কিছু আমি জানি না। আগামীকাল নেত্রকোনা যাবো। ’
তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি কর্মসূচি সফল হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১০