ঢাকা, বুধবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

রম্য

মগের মুল্লুক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্তান শিক্ষক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৭
মগের মুল্লুক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্তান শিক্ষক ছবি: প্রতীকী

ঢাকা:  দুই আঙ্গুলের মাথা দিয়ে গোঁফে টান দেন বাচ্চু মিয়া। একটু একটু ব্যথা করে, তাও ভাল লাগে। এটা স্বভাব নাকি বদ অভ্যাস ঠিক জানেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের `অান্তর্জাতিক কলহ’ বিভাগের এই শিক্ষক। বিভাগের নামের অাগে অান্তর্জাতিক থাকলেও জাতীয় পর্যায়ের মাস্তানিতেই নিজেকে পরিচয় করাতে মরিয়া তিনি।

জুতার ফিতা বাঁধার সময় তার সহধর্মিনী এসে বললেন, 'শোনো, অাজ রাতে কিন্তু বেশী দেরি কোরো না। আর ওসব ছাইপাশ গিলে দয়া করে বাড়ি ফিরো না।

ছেল-মেয়েগুলো বড়ো হচ্ছে। '

স্ত্রীর দিকে অাড়চোখে তাকালেন বাচ্চু মিয়া। ছাত্রাবস্থায় যেমন তেমন, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর থেকে নারী শিক্ষার্থীদের দিকে অাড়চোখে তাকানোর স্বভাব রপ্ত করেছেন তিনি। বিশেষ করে ছাত্রীদের নিতম্ব তাকে এখনো টানে। স্ত্রীর নিতম্বের দিকে তাকিয়ে ছাত্রীদের নিয়ে বাজে ভাবনা মাথায় চক্কর দিলো। নিজের মাথায় নিজে চাঁটি মারলেন, ‘শালা, স্বভাব বদলাইতে পারলাম না। ’

ঘর থেকে বের হয়ে ৫ মিনিটের পথ হাঁটলেই নিজের বিভাগে পৌছে যাওয়া যায়। আজ  বিভাগের বিশেষ একটি মিটিং আছে। এখানে টাকা পয়সার ব্যাপার রয়েছে। বিভাগের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের দেয়া যে উন্নয়ন ফি রয়েছে. সেটা শিক্ষকরা ভাগ করে নেন। সেই ভাগ বাটোয়ারা হবে আজ। ক্লাসে যেতে আলসে ভাব থাকলেও এই মিটিং ছাড়া যাবে না। পাই পাই হিসাব বুঝে নিতে হবে। কোনো ধরনের অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়া যাবে না ভাগাভাগিতে।

প্রায় এক সপ্তাহ পর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের বিভাগে যাচ্ছেন বাচ্চু মিয়া। মগের মুল্লুক নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানেন, তিনি অনেক ব্যস্ত থাকেন। ‘স্যার পরীক্ষা নিলেই আমরা ধন্য,’ শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা আর আস্থা আছে তার।

অাবাসিক এলাকা থেকে বের হয়ে রিকশা নেন তিনি। দুই আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেটটা টান দিতে দিতে জুতার দিকে তাকান। আয় হায়! গতকাল রাজনৈতিক পার্টি অফিসে গিয়ে নেতাকর্মীদের জুতার চাপায় নিজের জুতা ময়লা হয়ে গেছে। শিক্ষক হিসেবে প্রথম প্রথম এই অফিসে আসতে লজ্জা পেতেন তিনি। তবে এখন সয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে এখানেই বেশি সময় কাটান। কারণ শিক্ষক হওয়া থেকে শুরু করে এই অধ্যাপক পর্যন্ত আসায় এই রাজনৈতিক দলেরই সব অবদান।

যাই হোক, টাকা ভাগের উত্তেজনায় সকালে আর খেয়াল করা হয়নি জুতার ময়লা। মনে মনে আবার এটাও ভেবে কিছুক্ষণ হাসলেন, ‘যাক, অন্যরা বুঝবো আমি পার্টি অফিস থেকেই আসছি। কোনো হালারপুতে ভাগযোগে ত্যাড়ামি করলে এই জুতা দিয়া লাইত্থামু। ’

গোঁয়ারের মতো ফোঁস ফোঁস করে ওঠেন বাচ্চু মিয়া। বিভাগে যাওয়ার আগে একটি বাগানের মতো সুন্দর জায়গার ভেতর দিয়ে রিকশা চলতে থাকে। সবুজ এই বাগানে এলেও কার্বন ডাই অক্সাইডের অভাব অনুভব করেন তিনি। অন্য মানুষের মতো না তিনি। মানুষের অক্সিজেন লাগলেও তিনি কার্বন ডাই অক্সাইড দিয়ে শ্বাস গ্রহণ করেন। গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকেন, ‘কবে যে এসব কেটে এখানে একটা সুন্দর দালান হবে! দালানের জন্য টেন্ডার দিলে আমার মারামারি করে কিছু টাকা আসবে। ’

এক শিক্ষার্থী সালাম দিলো রাস্তায় দাঁড়িয়ে। এই ছাত্রটাকে তিনি ভালভাবেই চেনেন। বেশ মেধাবী। কিন্তু কই কোনদিন তো পাশের বাজার থেকে দুটো মাছ কিনে এনে ঘরে দিলো না! ‘এমন ছাত্র দিয়ে আমি কি করবো!’ ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে আসার পর এক দলা থুথু ফেললেন রাস্তায়।

বিভাগের চেয়ারম্যানের অফিসের দরজার বাইরে থেকেই হট্টগোলের আওয়াজ। কান খাড়া করে শুনে বুঝে গেলেন, বিভাগের ১৫ শিক্ষকের ১০টি গ্রুপের ৭ নম্বর গ্রুপটির একজন তার শিক্ষকদের রাজনীতি না করা এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সের হিসেবের টাকা নিয়ে কথা বলছেন। মাথায় আগুন ধরে গেলো বাচ্চু মিয়ার। সজোরে দরজা খুলে মিন্টু মিয়া নামে ওই শিক্ষকের পাঁজর বরাবর বসিয়ে দিলেন এক লাথি।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০১৭
এমএন/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।