ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

মুক্তমত

বাবা এবং বাবা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫৩২ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
বাবা এবং বাবা ছবি: প্রতীকী

ক'দিন আগে বাবা দিবসে আবেগ, উচ্ছ্বাসের বন্যায় ভেসেছেন অনেকেই। ঈদ উৎসবে সে আবেগ আরও একটু মোচড় দিয়ে গেল বহুজনের তাপিত হৃদয়ে। যাদের বাবা বিগত ঈদে ছিলেন, এবার নেই, তারা গভীর শূন্যতা ও হাহাকারে কাতর হয়েছেন। আর যারা নিজেরা বাবা হয়েছেন, কিন্তু সন্তান থাকে দূরদেশে, তারাও হৃদয়ের তন্ত্রীতে অনুভব করেছেন বিচ্ছেদের তীব্র যাতনা। হয়ত নিভৃতে নিজের অজান্তেই গুনগুন করেছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় ও শ্রাবস্তী মজুমদারের গাওয়া সেই অবিস্মরণীয় গান 'আয় খুকু আয়, আয় রে আমার সাথে আয় মা মনি...'।

ঈদের দিন বিকেলে সামাজিক খোঁজ খবর নিতে গিয়েছিলাম আমার এক প্রবীণ আত্মীয়ের বাড়িতে। ঘরের চারদিকে উৎসবের কোন ছাপ নেই।

নিশ্চুপ বসে ছিলেন বয়স্ক দম্পতি।

আমাদের পেয়ে আনন্দে ঝলমল করে উঠলেন তারা। কত যে কথা বলতে শুরু করলেন! বললেন, ' তুমি তো জানো, আমার পুত্র  ও কন্যা  দু'জনেই বিদেশে থাকে। ফলে আমি যে একজন বাবা সেই বোধটা রোজ অনুভব করার অবকাশই পাই না! আজ সকালে আচমকা সেই নিয়মে ব্যত্যয় ঘটে গেল!!

সকালে ফোন খুলতেই দেখি আদরের কন্যা আমাকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে! লিখেছে আমার জন্য নাকি আমেরিকা থেকে উপহারও আনবে!  আর কয়েক দিন পরেই গবেষণায় বিশ্রাম দিয়ে বাড়ি ফিরছে সে!!'

কেন জানি না মনটা ভিজে গেল, বুকের মধ্যে মোচড় দিয়েও উঠল! পিতৃত্ব বস্তুটা কত গভীর আনন্দের আবার নতুন করে তা বুঝতে পারলাম। ছেলে- মেয়েরা মায়ের নাড়ি ছিঁড়ে বের হয় ঠিকই। আবার বাবার প্রতি তাদের টানটাও তো নাড়িরই!!

অপলক চোখে তাকিয়ে থাকি নিঃসঙ্গ ও বয়সী দম্পতির দিকে। তারা চুপ, আনমনা। চোখের তারায় চিকচিক করছে সন্তানের জন্য এক ফোটা ছলছল অশ্রুবিন্দু।

অনেকক্ষণ পর তাদের একজন নৈঃশব্দ ভেঙে সরব হলেন মৃদ্যু কণ্ঠে। বললেন, 'জীবনে নিজের জন্য বাঁচার দিন কবেই শেষ হয়ে গেছে। এখন আমি বাঁচি আমার নয়নের দু'টি মনির জন্যই-- কন্যা ও পুত্রর জন্য। '
 
এমন হৃদয়ছোঁয়া কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে আবার আমার নিজের বাবার কথাও মনে পড়ল! মনে পড়ল আরও অনেকের বাবার কথা, যারা আছেন, কিংবা নেই, কিংবা সন্তানদের চেয়ে দূরে থাকেন। পিতার স্বর্ণালী মুখচ্ছবি আর তার বটবৃক্ষ সদৃশ্য অস্তিত্ব আমাকে প্রবলভাবে আচ্ছন্ন করলো।

মনে পড়লো, একবার কলকাতার একজন নামকরা লেখক-সাংবাদিক নিজের শিক্ষক পিতার স্মৃতিচারণ করে আমাকে বলেছিলেন,  'তিনি আমার কেবল বাবাই ছিলেন না, আমার শিক্ষকও ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজে তিন বছর আমি তাঁর ক্লাসে বসেছি বাকি সকলের মতো। আমি জীবনে যতটুকু পথ অতিক্রম করতে পেরেছি, যা কিছু আমার সাফল্য ও  অর্জন  সবটুকুই তাঁর অবদান!'

সন্ধ্যার আলোছায়া মেখে ঈদের দিন শেষে বিষণ্ন মুখে নিঃসঙ্গ দ্ম্পতির কাছ থেকে ফিরে আসার সময় আমার ভেতরে প্রবল আলোড়ন: কোনও দিন আমার ছেলে মেয়ে যদি তাদের বাবার সম্পর্কেও একই কথা বলে, জানব জীবনটা সার্থক হয়েছিল!

বলবে বোধহয়!!

জানি, প্রতিটি বাবাই এই কথাটা শোনার জন্য জনম জনম কান পেতে থাকেন!!!

ড. মাহফুজ পারভেজড. মাহফুজ পারভেজ: কবি-রাষ্ট্রবিজ্ঞানী-সাহিত্যিক। অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়  



বাংলাদেশ সময়: ১১২৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।