ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

মুক্তমত

ফাটাকেষ্ট সমাচার ও শুভেচ্ছা

মনোয়ার রুবেল, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫২৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
ফাটাকেষ্ট সমাচার ও শুভেচ্ছা

ফেসবুক আসার পর বাঙালি একটি অনন্য অর্জন আছে। সেটি হলো পাণ্ডিত্য!

এমন কোনো বিষয় নাই ফেসবুকাররা জানেনা।

রাজনীতি বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জ্ঞান সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ, রাজনীতির গতি প্রকৃতি এসব ফেসবুকারদের কাছে ডাল ভাত।  

শেখ হাসিনা ফেসবুক ব্যবহার করেন না বলে তিনি জানেন না। রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতি বিষয়ে কতোটা কাঁচা। তার চেয়ে মহত্তর জ্ঞানীরা ফেসবুক চালায়। তারা তাকে জ্ঞান দেয়। শেখ হাসিনার দুর্ভাগ্য তিনি সেসব জ্ঞানীর উপদেশ চামড়ার চোখে দেখার সুযোগ হয় না, শুধু ফেসবুক ব্যবহার করেন না বলে।

এই যেমন এখন জ্ঞান দেয়া হচ্ছে ওবায়দুল কাদেরকে কেনো সাধারণ সম্পাদক করা হলো  নিয়ে।  

ওবায়দুল কাদেরের অপরাধ, তিনি ফেসবুক চালান, তিনি ফাটাকেষ্ট, তিনি কোনো এক কালে কোনো ড্রাইভারকে ‘তুই’ বলেছেন, কোনো এক কুলিকে থাপ্পড় দিয়েছেন, তিনি লোক দেখানো কাজ করেন, মেয়েরা তার সাথে সেলফি তুলে। এগুলো তার অপরাধের তালিকা। ফেসবুকবাসী অনুসন্ধান করে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে এইসব অপরাধের কারণে তিনি খুবই খারাপ লোক। এত খারাপ লোক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হতে পারবে না।

আরেকদল সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অবহেলিত হয়েছেন মর্মে গভীর যাতনা অনুভব করে মাতম করছেন।

ফেসবুক তাদের চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে বঙ্গবন্ধুর পর (১৩ বছর) সবচেয়ে দীর্ঘ সময় (৭ বছর) এ পদে সৈয়দ আশরাফই থাকতে পেরেছেন! আওয়ামী লীগে সাধারণ সম্পাদক পদ স্থায়ী বা আমৃত্যু কোনো পদ নয়।  

এর আগে অনেকে এ পদে এসেছেন, সময়ের দাবিতে অন্যজনকে এগিয়ে দিয়েছেন, কাল পরিক্রমায় আবার কেউ দ্বিতীয় বার এ পদে এসেছেন কিছু বছর পর। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। তাজউদ্দীন আহমদের উদাহরণ দিই। ১৯৬৬-৭২ সময়কালে তিনি সা.সম্পাদক ছিলেন। ৭২ এর কাউন্সিলে দলের প্রয়োজনে তিনি সরে গেলেন। জিল্লুর রহমান হলেন সা.সম্পাদক। ৭৪ এ আবার তিনি এলেন সেই পদে। আমৃত্যু তিনি ছিলেন সা.সম্পাদক।  

জিল্লুর রহমান ১৮ বছর পর আবার সা.সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। গনতন্ত্রে এটা হয়। এটা অসম্মান নয়। কারা এখন অসম্মানের ধুলো উড়িয়ে বিভ্রান্ত করতে চাচ্ছে সেটা ধারনা করা যায়। সা.সম্পাদক পদ পরিবর্তন অসম্মানক- এই ধারনা আমাদের মধ্যে এসেছে মূলত: বিএনপির রাজনৈতিক ঐতিহ্যের কারণে।  

বিএনপিতে মহাসচিবেকে খেদিয়ে বিদায় করা হয়, না হয় তিনি মরলে এ পদ খালি হয়। বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া এবং খন্দকার দেলোয়ার তিনজন বিএনপির প্রাক্তন মহাসচিব; তারা দু জন দুনিয়ায় নেই, একজন দলে নেই। বিএনপিতে একবার কেউ এই পদ হারালে সে জীবনে দ্বিতীয়বার সে পদ দূরের কথা, দলেও তার জায়গা হয়না।  

কিন্তু এই গণতান্ত্রিক চর্চা আওয়ামী লীগে হয়!

হয় বলেই ওবায়দুল কাদের আজ সাধারণ সম্পাদক। আবার এটাও নিশ্চিত নয়, সৈয়দ আশরাফ এ পদে আবার কোনোকালে ফেরত আসবেন না। আগেই বলেছি ১৯৭২ এ ছেড়ে দেয়া পদে ১৯৭৪এ তাজউদ্দীন আহমেদ আবার এসেছিলেন। ১৯৭৪ এ হারানো পদে জিল্লুর রহমান পুনরায় এসেছিলেন ১৯৯২ সালে। এটা হয়। সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের পদ পরিবর্তন স্বাভাবিক একটি ঘটনা মাত্র।

আমরা বরং আলোচনা করতে পারি সৈয়দ আশরাফ কেমন ছিলেন। তিনি মিষ্টভাষী এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তিনি প্রজ্ঞাবান তাও সন্দেহাতীত। তবে সা. সম্পাদক কালে কখনো কখনো এমন মনে হয়েছে এ পদ হতে তার ক্ষনিক বিশ্রাম দরকার। বা তিনি কুলিয়ে উঠতে পারছেন না কিংবা চাপ নিতে অপারগ। তার মতো একজন নেতাকে এভাবে মূল্যায়ন করা অবশ্যই ঔদ্ধত্য মনে হতে পারে। কিন্তু তিনি তার দায়িত্ব পালন কালে দু বার পদত্যাগ করে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছেন, এটা অস্বীকার যায় কি? সেটা ২০১১ ও ২০১৩ সালে।  

আওয়ামীলীগ তার পদত্যাগ কার্যকর করেন নি। যে দুবারই তিনি একাজ করেছেন তখুনি সরকার বেকায়দায় ছিল। একাজগুলো দলের জন্য কতোটা সঠিক ছিল বা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কতোটা পরিনত সিদ্ধান্ত ছিল এখন ক্ষমতার বাইরে বসে তিনি নিশ্চয়ই ভাবার অবকাশ পাবেন। এভাবে আত্ম সমালোচনার মধ্য দিয়ে তিনি আরো মহান নেতা উঠবেন।

পাশাপাশি দীর্ঘ সময় দলের বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করা ওবায়দুল কাদের নিজের দু:সময়ে মাটি কামড়ে দলে পড়েছিলেন। ওয়ান ইলাভেনের ভিকটিম তিনি। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজ তার ফলই বোধহয় পেলেন।  

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আমলে দেশব্যাপী সাংগঠনিক সফর হতোনা। ঝিমিয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগের স্থানীয় রাজনীতি। ওবায়দুল কাদের সেটা দূর করতে পারবেন আশা করা যায়। ওবায়দুল কাদের এর দেশ চুষে বেড়ানোর অফুরান এনার্জি আছে এটা তার কর্মীরা বিশ্বাস করে। এটাই একটা দলকে চাঙা করার জন্য যথেষ্ট।  

তাছাড়া এই প্রথমবার নোয়াখালী তথা দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কেউ আওয়ামী লীগের অন্যতম শীর্ষ পদে এলো। এটার ভৌগলিক গুরুত্ব কম তাৎপর্যপূর্ণ নয়।

তাকে ফাটাকেষ্ট বা আর যাই বলা হোক। ফাটাকেষ্ট একটি পজিটিভ দেশপ্রেমিক চরিত্র। হোক সেটা সিনেমায়।

ফাটাকেষ্ট গণমানুষের হিরো। শেখ হাসিনা ফাটাকেষ্টকেই তার রানিং মেট করলেন এবার। হাসিনার প্রতি তার দলের কর্মীদের অগাধ বিশ্বাস। তারা বিশ্বাস করে তিনি ভুল করেন না। এবারও না। দেখা যাক দেশের প্রাচীনতম এ রাজনৈতিক সংগঠনের নতুন জুটি কতটা সফল হন।

তাদের দুজনকে শুভেচ্ছা।

কলামিস্ট ও অনলাইন এক্টিভিস্ট
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।