ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

অফবিট

হাতির মাথায় কতো পুষ্টি!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
হাতির মাথায় কতো পুষ্টি! ছবি: সংগৃহীত

প্রস্তরযুগের প্যালিওলিথিক সময়ের প্রাচীন মানুষেরা বিলুপ্ত প্রজাতির হাতির বিশাল মাথা খেয়ে জীবনধারণ করতো বলে নতুন একটি গবেষণায় জানা গেছে।

প্রস্তরযুগের প্যালিওলিথিক সময়ের প্রাচীন মানুষেরা বিলুপ্ত প্রজাতির হাতির বিশাল মাথা খেয়ে জীবনধারণ করতো বলে নতুন একটি গবেষণায় জানা গেছে।

গবেষকরা জানান, বিভিন্ন প্রজাতির প্রাগৈতিহাসিক ওই  মানুষেরা প্রোটিন ও চর্বিজাতীয় খাদ্যের একটি মূল্যবান উৎস হিসেবে হাতি শিকার করতো।

তবে শিকার শেখার আগে প্রথম দিকে বয়সের কারণে বা অন্য শিকারির হাতে মৃত হাতির দেহাবশেষ খুঁজে তা খেতো তারা।

প্যালিওলিথিক মানুষেরা হাতির জিহবা, গ্রন্থি, খুলি, নিচের চোয়ালের হাড় ছেঁচে এমনকি মস্তিষ্কের ঘিলু খেয়ে ফেলতো। তবে তাদের মস্তক মানুষের ক্যালোরির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস ছিল। এক একটি মাথা থেকে ১৮০ কেজি তেলও পেতো তারা।

আমাদের নিকটতম পর্যায় থেকে মানুষের মাঝে মাংসাশী প্রাণীর বৈশিষ্ট্য যোগ হয়েছে। একইসঙ্গে বিশাল পশুর মৃতদেহ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়।

এ সংক্রান্ত গবেষণা এখন কেন প্রাচীন মানুষের জীবাশ্মের সঙ্গে কেন হাতির খুলিও পাওয়া যাচ্ছে- সে প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিচ্ছে।

ইসরায়েলের তেল আবিব ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অ্যাভাইড অ্যাগাম ও রান বারকেই হাতির মাথা আবিষ্কৃত হয়েছে, এমন প্রত্নতাত্ত্বিক সাইটগুলোর সংখ্যা পর্যালোচনা করেছেন। তারা গবেষণা করেছেন প্রাচীন বিশ্বজুড়ে প্রথম মানুষেরা বসবাস করেছে এমন সব সাইটগুলোতে গিয়ে। যেমন- আফ্রিকার বর্তমান জিবুতির ১৩ লাখ থেকে ১৬ লাখ বছর, ইসরায়েলের ৫ লাখ বছর ও ৮ লাখ বছর এবং আধুনিক রাশিয়া ও ইউরোপের ১৩ হাজার বছর থেকে দেড় লাখ বছর বয়সী মানুষের বসবাসস্থলগুলো থেকে হাতির মাথা পাওয়ার তথ্য জানান তারা।

যেমন: ডেড সি’র হুলা উপত্যকার মধ্য প্লেইস্টোসিন যুগের গেসের বেনট ইয়াকভ সাইট থেকে ১৫৪টি হাতির দাঁত, পিঠের ভেতরের হাড়ের টুকরোসহ একটি প্রায় সম্পূর্ণ মাথার খুলি উদ্ধার করা হয়। এর অনেক অংশ ইচ্ছাকৃতভাবে সরানো এবং সেখানে বসবাসকারী মানুষের হাতে চূর্ণ হয়েছে।

এ দেহাবশেষ অধুনালুপ্ত প্যালায়েলোক্সডন অ্যান্টিকুস্‌  প্রজাতির হাতির, যা টাস্কড্‌ হাতি নামে পরিচিত ছিল। বর্তমান এশীয় হাতির পূর্বপুরুষ টাস্কড্‌ হাতি প্রজাতি আজকের প্রজাতির চেয়েও অনেক বড় ছিল। এ থেকে বোঝা যায় যে, এ হাতির মাথা ছিল প্রাচীন মানুষের বৃহত্তম খাবার, যার বাইরের ও ভেতরের অংশ খেতে পারতো তারা।

প্রাচীন মানুষের হাতির মাথা খাওয়ার আরও প্রমাণ মিলেছে স্পেনের ভ্যালেন্সিয়ার ভ্যালডিগনা উপত্যকার বলোমোর গুহায়। দুর্গম এ গুহার ভেতরে মস্তক ও পায়ের হাড়সহ প্রাচীন হাতির হাড় পাওয়া গেলেও মাথার অংশ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ছবি: সংগৃহীত

একটি হাতির মাথা ৪০০ কেজিরও বেশি হতে পারে। তাই আদি মানবদের জন্য এতো বিশাল ওজনের মাথা তাড়াতাড়ি বয়ে নিয়ে যাওয়া একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ফলে তারা একে অন্যের সহযোগিতা নিতো। যেমন- শিকারের পর এমন বিশাল বস্তু সরাতে অনেক ব্যক্তিকে গুহার মধ্যে নিয়ে যাওয়া হতো। আবাসিক সাইটগুলোতে হাতির মাথার বিভিন্ন অংশ বারবার পরিবহনের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত করে যে, এক একটি সাইটকে মাথা পরিবাহিত করার ক্যাম্প হিসেবে মনোনীত করা হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা বলেন, প্লেইস্টোসিন যুগের বৃহদাকার বিলুপ্ত হাতিগুলোর মাংস ও চর্বি আদর্শ অনুপাত ধারণকারী একটি খাদ্য প্যাকেজে পরিণত হয়েছিল। তবে খুব শিগগিরই মানুষের জন্য হাতির মাথা অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

বিজ্ঞানীরা একটি হাতির মাথার কোন অংশ কতোটুকু পুষ্টি দিতে পারে, তা নিয়েও গবেষণা করেছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৪৪৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৬
এএসআর

 

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।