ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১২

ঢাকা: সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দখলে থাকা সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

বৃহস্পতিবার বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম এ আদেশ দেন।



মঙ্গলবার আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন না করায় যোগাযোগ সচিবসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের চার কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। এ আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার তারা আদালতে হাজির হলে আদালত এ আদেশ দেন।

আদালত বলেছেন, ২৩ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার যদি এসে বলেন- রায় অনুযায়ী তারা সব জমি বুঝে পেয়েছেন, তাহলে আপনারা আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাবেন।

অন্যথায় আপনাদের নাজিমউদ্দিন রোডে (কেন্দ্রীয় কারাগার) পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে বৃহস্পতিবারও চারজনকে আদালতে হাজির হতে হবে।

আদালতের আদেশ অনুয়ায়ী সকাল ১১টায় যোগাযোগ সচিব এম এ এন সিদ্দিকী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী  মোঃ আমানুর রশিদ লস্কর, অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মফিজুর রহমান ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (প্রশাসন ও সংস্থাপন) মোঃ ফরিদুল আলম হাজির হন।

তারা সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছিলেন। মাঝখানে এক ঘণ্টা বিরতি ছিলো।

আদালতে যোগাযোগ সচিবের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও রিট আবেদনের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আলতাফ হোসেন।

শুনানিতে আনিসুল হক বলেন, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে ওই সম্পত্তির চাবি হস্তান্তর করা হবে।
 
এ সময় আদালত বলেন, ১২ মাস সময় পেয়েছে এরপরও তারা সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়নি। তারা প্রধান বিচারপতির সঙ্গে ঠাট্টা করেছে।
 
তখন আদালতে উপস্থিত অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আমরা ১২ মাস অপেক্ষা করেছি। আর অপেক্ষা নয়।

শুনানিতে যোগাযোগ সচিব বলেন, আমি গত বছরের ১৫ নভেম্বর দায়িত্ব নিয়েছি। দায়িত্ব নিয়ে ২৯ ডিসেম্বর এক চিঠিতে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি ছেড়ে দিতে বলেছি। আমিই উদ্যোগ নিয়েছি। এরআগে এ সম্পত্তি ছেড়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এ সময় আদালত বলেন, তাহলেতো তারা (সওজ) আপনার আদেশও মানেনি। তাদের ধৃষ্টতা কতদূর গেছে দেখেন।
 
সচিব বলেন, তারপর আমি অর্থ ও গৃহায়ণ মন্ত্রণালয়ের কাছে গিয়েছি সওজের পুনর্বাসনের জন্য। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় ১১ কোটি টাকা দেওয়ায় প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

ওইস্থানে সওজের তিনটি বিল্ডিং আছে। সেখানে ২০০ অফিসার ও ১৫০০ কর্মচারী রয়েছেন। আমরা এতদিন এ জায়গা ছাড়তে পারিনি এজন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।

এছাড়াও তিনি বলেন, শুষ্ক মৌসুমে দেশে ২২ হাজার কি. মি. সড়কে কাজ চলছে। আদালতের আদেশে সেটা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা বিবেচনা করবেন।

এ সময় আদালত বলেন, ‘আমাদেরও মারাত্মক জায়গার সংকট রয়েছে। রোববার চিন্তা করে দেখবো- আপনাদের সাময়িকভাবে কিছু দেওয়া যায় কি-না। ’
 
আদালতের এ কথায় আপত্তি তোলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবিএম আলতাফ হোসেন।

প্রসঙ্গতঃ হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১০ মার্চ হাইকোর্ট শিশু একাডেমী ও সড়ক ভবনের অধীনে থাকা সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি ৯০ দিনের মধ্যে ফিরিয়ে দিতে বলেছেন।

এই আদেশের বিরুদ্ধে উভয় প্রতিষ্ঠান আপিল করে। শুনানি শেষে একই বছরের ২৮ জুলাই বর্তমান প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের বেঞ্চ উভয় আবেদনই খারিজ করে দেন।

এরপর গত সোমবার সওজ পুরো জমি বুঝিয়ে না দিয়ে অংশ বিশেষ বুঝিয়ে দিতে সোমবার সুপ্রিম কোর্টকে চিঠি দেয়। সওজের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ ফরিদুল আলম স্বাক্ষরিত ওই চিঠি সোমবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দফতরে পৌঁছানো হয়।

ওইদিন বিকালে সুপ্রিম কোর্টের জমিতে দেয়াল তৈরির কাজ শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার একেএম শামসুল ইসলামসহ কর্মকর্তাদের আপত্তির মুখে এবং যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে দেয়াল ভেঙ্গে ফেলেছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর (সওজ)।

সুপ্রিম কোর্টের রায় বাস্তবায়ন না করে বাঁধা সৃষ্টির অভিযোগে অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান সিদ্দিকী আদালত অবমাননার আবেদনটি করেন।

এ পরিপ্রেক্ষিতে যোগাযোগ সচিবসহ চারজনকে তলব করেন আদালত। একই সঙ্গে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

এ আদেশ অনুযায়ী তারা বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির হলে এ আদেশ দেন হাইকোর্ট।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬ ,২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।