ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

দুর্ভোগের অন্ত নেই পানিবন্দি মানুষগুলোর

277 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৬ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০
দুর্ভোগের অন্ত নেই পানিবন্দি মানুষগুলোর পানিবন্দি

সিরাজগঞ্জ: ‘এই তো হেদিন বাড়ির উঠোনে বানের জল উঠচিল-কয়েকদিন পর শুকাইয়াও গেচিল। বাড়ির জল না শুকাইতে আবার জল আইলো। এবার এত তাড়াতাড়ি জল উইঠছে-জিনিসপত্র সরাইবার পারত্যাছি না। ঘরের মধ্যে চৌকি উঁচু কইর্যা অমনি থাইকত্যাচি। পানি আর কেদো মাটি পাড়াইয়্যা কষ্ট কইর্যা রইচি’। 

বাড়ির দরজায় কলা গাছের ভেলায় দাঁড়িয়ে এভাবেই বন্যায় কষ্টের কথা বলছিলেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের ভাটপিয়ারী গ্রামের অখিল চন্দ্র দাস। পাশে ছিলেন তার স্ত্রী আরতি রানী।

কথা বলার এক পর্যায়ে এগিয়ে এলেন ভাই মনোরঞ্জন দাস ও ভাইয়ের স্ত্রী বাসনা রানী দাস।  

অখিল আরও দাস বলেন, ‘গরীব মানুষ, নাও(নৌকা) কেনার সামর্থ্য নাই। তাই কলার ভুরা (ভেলা) বানাইয়্যা সবাই মিল্যা এদিক-সেদিক যাতায়াত কইরত্যাছি’।  

অখিলের ভাই মনোরঞ্জন দাস বলেন, ‘করোনা শুরু হওয়ার পর থ্যাইক্যা কাম-কাজ তেমন নাই। বান (বন্যা) আইস্যা আরও কাম নাই। খুউব কষ্টেই দিনপাত চইলছে। এ্যাহন পর্যন্ত কুনো সাহায্যও কেউ নিয়্যা আইসে নাই- ধার-দেনা আর কতদিন করা যায়? আক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন করেন বিধবা বাসনা রানী’।

শনিবার (১৮ জুলাই) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বন্যা কবলিত অঞ্চলগুলোতে সরেজমিনে এমন অবস্থাই দেখা যায় বানভাসিদের।  

কথা হয়, ভাটপিয়ারী গ্রামের আজিজল, আব্দুর রশিদ, আলী আকবর, আব্দুস ছালাম, পাঁচ ঠাকুরীর নুরনবী, সোহরাব আলী, বেলায়েত, খাদিজা বেগম, আনোয়ারা খাতুনসহ অনেকের সঙ্গেই।

পানিবন্দিতারা বাংলানিউজকে বলেন, ১০ দিনের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় বানের পানি বাড়িতে উঠেছে। অনেকেই বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন, আবার অনেকেই বাড়িতে উঁচু মাচা তৈরি করে সেখানেই কষ্ট করে রয়েছেন। সাপের ভয়কে উপেক্ষা করে পানির মধ্যেই কলার ভেলা বা ডিঙি নৌকাতেই থাকতে হচ্ছে তাদেরকে। আবার কারও বাড়ি পুরোটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। আশ্রয় কেন্দ্র বা উঁচু কোনো স্থানে তাবু টানিয়ে গবাদিপশুগুলোকে সঙ্গে নিয়েই বাস করছেন তারা।  


প্রায় ২০ দিন ধরেই পানিবন্দি রয়েছেন যমুনা নদীর তীরের এসব মানুষ। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কাছে কোনো প্রকার ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি বলে অভিযোগ বানভাসিদের। অনেকেই বলেন, এখনও একমুঠো চালও তারা পাননি। সংকট রয়েছে বিশুদ্ধ পানিরও। পানি না পেয়ে অর্ধেক ডুবে যাওয়া টিউবওয়েলের পানিই পান করছেন তারা।

পাঁচ ঠাকুরী যমুনা বাজারের ব্যবসায়ী মিলন শিকদার বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্বপাড়ে বাস করা মানুষের কষ্টের অন্ত নেই। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে অনেকের। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ না থাকায় নোংরা পানিই পান করছেন অনেকেই।  

ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল আলম বলেন, চলতি বন্যায় এ ইউনিয়নের দু’হাজার সাত’শ পরিবারের ১৩ হাজার সাত’শ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি সিমলা স্পার ধ্বসে যাওয়া আশপাশের ৬০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ও বন্যা কবলিত এলাকার প্রায় ৭শ পরিবার বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছে। বন্যার্তদের তালিকা তৈরি করে উপজেলায় পাঠানো হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বন্যা কবলিতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হবে।  

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার জানান, উপজেলার সাতটি বন্যা কবলিত ইউনিয়ন ছোনগাছা, রতনকান্দি, খোকশাবাড়ী, কাওয়াকোলা, মেছড়া, সয়দাবাদ ও কালিয়া হরিপুর। এরই মধ্যে এসব ইউনিয়নে ৩৮ মেট্টিক টন চাল ও ৫শ প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২২২৭ ঘণ্টা, ১৮ জুলাই, ২০২০
এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।