ঢাকা, সোমবার, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৭ মে ২০২৪, ১৮ জিলকদ ১৪৪৫

জাতীয়

চারুকলায় পড়েও সফল খামারি রুবেল, অনলাইনেই বেচাকেনা

351 | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০
চারুকলায় পড়েও সফল খামারি রুবেল, অনলাইনেই বেচাকেনা

রাজশাহী: একটা সময় ছিল যখন ভাবা হতো চাষাবাদ বা গবাদি পশু লালন-পালন কেবল গ্রামের মানুষেরই কাজ। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই ধারণা পাল্টেছে। এখন কেবল গ্রামের মানুষই নন, শহুরে মানুষও কৃষি কাজ ও গবাদি পশু পালন করে জীবন-জীবিকা চালাচ্ছেন। তেমনই একজন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা ও খামারি রাজশাহীর আরাফাত রুবেল। উচ্চশিক্ষিত হয়েও চাকরির পেছনে ছোটেননি তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করে শহরে নিজ ব্যবসার পাশাপাশি তিনি গড়ে তুলেছেন উন্নত জাতের ব্রাহামা গরুর খামার। আধুনিক গবাদি পশু পালন পদ্ধতিতে গড়ে তোলা খামারটি এখন অনেকের কাছেই দৃষ্টান্ত।

খামারে সময় দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইনে গরু বিক্রিতে ব্যস্ত সময় কাটছে তার।  

কঠোর পরিশ্রম ও কাজের প্রতি একাগ্রতা দিয়ে খুব অল্প সময়েই সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছেন আরাফাত। করোনাকালে পশুর হাটগুলোতে স্বাস্থ্যবিধির বালাই না থাকায় সচেতন মানুষের জন্য অনলাইনেই গরুর হাট বাসিয়েছেন রুবেল। নেটিজেনদের জন্য অন্তর্জালেই এবার চালাচ্ছেন নিজের কোরবানির পশুর প্রচারণা। আর ই-কমার্সের মাধ্যমে অনলাইনেই চলছে কোরবানির পশু বিকিকিনি।  

...কোনো রকম প্রতারণা ছাড়াই যারা কোরবানির জন্য একটি সুস্থ ও সবল গরু তালাশ করতে বিভিন্ন অনলাইন মার্কেট প্লেস এবং ফেসবুক পেজে ঢুঁ মারছেন তাদের জন্য আদর্শ হতে পারে রাজশাহীর রুবেলের ব্রাহামা জাতের এই খামার।

এবছর কোরবানির ঈদ উপলক্ষে তৈরি করা ব্রাহামা জাতের গরুর প্রতি তার রয়েছে বিশেষ যত্ন। নিজ খামারের গরুকে খাওয়ানোর জন্য নিজেই চাষ করছেন উন্নতজাতের ঘাস ও ভুট্টা। খামারের পাশাপাশি তিন বিঘা জমির ওপর উচ্চ ফলনশীল ঘাস এবং ভুট্টা চাষ করেছেন। নিজের জমির এই ঘাস ও ভুট্টাই খাওয়ানো হয় গরুকে।  

রাজশাহী শহরের বিনোদপুর আবহাওয়া অফিসের পেছনেই রয়েছে ‘সওদাগর অ্যাগ্রো’। সেখানে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়বে পরিচ্ছন্ন গরুর খামার। কোনো দুর্গন্ধ নেই। নেই কোনো আবর্জনার স্তূপ। প্রতিটি গরুই নিজের মতো করে খাদ্য খাচ্ছে।

এই খামারে বাহাদুরপুর থেকে আনা এক গরুর নাম রাখা হয়েছে বাহাদুর। খামারে আছে বিশালাকৃতির একটি গরু, তার নাম ‘রাজাবাবু’। এছাড়া খামারে পরমাদরে রয়েছে ব্রাহামা জাতের গরু বাদশা, রাজপুত, লাল বাহাদুর। রয়েছে ছোট্ট সুলতান।  

...বর্তমানে ব্রাহমা জাতের গরু দেশের মাংসের চাহিদার ঘাটতি অনেকাটাই পূরণ করছে। রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, মেহেরপুর, বাগেরহাট, টাঙ্গাইলে ব্রাহমা গরু পালন করা হলেও রাজশাহীতে এই প্রথম। কয়েক হাজার মানুষ ব্রাহামা গরু পালনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। কম খরচে বেশি লাভবান হতে এখন ব্রাহমা গরুই ভরসা।

রুবেলের ‘সওদাগর অ্যাগ্রো’ খামারে কোরবানি ঈদ সামনে রেখে এবার ছোট-বড় আকারের প্রায় ১৪টি ‘ব্রাহমা’ জাতের গরু পালন করা হয়েছে। একেকটির ওজন সাড়ে ৩শ থেকে ৭শ কেজির মধ্যে। করোনা পরিস্থিতির কারণে খামার থেকে অনলাইনেই গরু বিক্রি করা হচ্ছে। আরাফাত তার ফেসবুক আইডিতে প্রতিটি গরুর ছবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য আপলোড করছেন। পছন্দ হলে ক্রেতারা খামারে গিয়ে গরু দেখে দরদাম করে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন বাড়িতে।

আরাফাত বাংলানিউজকে জানান, এবারের কোরবানির ঈদ সামনে রেখে তিনি উন্নত ব্রাহমা জাতের গরুগুলোকে নিবিড় পরিচর্যায় প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে লালন-পালন করা হয়েছে। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক ক্রেতা হাটে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত। তাই অনলাইনে গরুগুলো দেখাচ্ছেন।  

অনলাইন হাটে বেশ ভালো সাড়া পাচ্ছেন জানিয়ে রুবেল বলেন, এরই মধ্যে ছয়টি গরু বিক্রি হয়েছে। চট্টগ্রামে দু’টি, ঢাকায় একটি, কুমিল্লায় একটি ও রংপুরে দু’টি গরু বিক্রি করেছি। বড় গরুগুলো ৩-৪ লাখ, মাঝারিগুলো ২-৩ লাখ এবং ছোট গরু দেড় থেকে ২ লাখ টাকার মধ্যেই বিক্রি হচ্ছে।

রাজশাহী জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. অন্তিম কুমার সরকার জানান, জবাইয়ের উপর ভিত্তি করে প্রাণসম্পদ অফিস থেকে প্রতিবছর ২ শতাংশ বাড়িয়ে ধরে সম্ভাব্য চাহিদা ঠিক করা হয়। সেই হিসাবে চলতি বছর জেলায় কোরবানির চাহিদা রয়েছে চার লাখ সাড়ে ৪ হাজার পশুর। আর নয় উপজেলায় ছোট বড় মিলে প্রায় ১৭ হাজার ৭০০টি খামার রয়েছে।  

তিনি জানান, গতবার রাজশাহী জেলায় পশু জবাই হয়েছিল প্রায় চার লাখ। এবার এখন পর্যন্ত খামার ও গৃহস্থ ঘরে কোরবানির জন্য সম্ভাব্য মজুদ রয়েছে মাত্র তিন লাখ ৬৯ হাজার ৫৭৪টি পশু। সেই হিসাবে এবারের ঈদে প্রায় ৩৫ হাজার পশুর ঘাটতি রয়েছে। তবে বাইরে থেকে গরু আমদানি না হলে বা ভারতীয় গরু সীমান্ত দিয়ে না নিয়ে এলে ন্যায্যমূল্যেই পশু কেনাবেচা হবে।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন আল ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, হাটের ওপরে চাপ কমলে করোনা সংক্রমণও কম হবে। আরাফাত রুবেলের মতো দক্ষ খামারিরা এগিয়ে এলে তাদের দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবেন। আর সরকারের প্রাণিসম্পদ বিভাগও তাই চাচ্ছে। অনেক খামারি এরইমধ্যে অনলাইনে পশুর হাট বসিয়েছেন। কোরবানির পশু বিক্রিও করতে শুরু করেছেন।  

তবে যারা হাটে গরু তুলবেন তাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাটে গরু তুলতে হবে বলে জানান সহকারী পরিচালক রুহুল আমিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০২০
এসএস/এমআইএইচ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।