শুক্রবার (১৭ জুলাই) বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন জনস্বাস্থ্য ও মহামারি বিশেষজ্ঞ রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।
তিনি বলেন, করোনা ভাইরাস আক্রান্ত এলাকায় যত বেশি টেস্ট করা হবে, ততই রোগী শনাক্ত হবেন।
হঠাৎ করেই করোনা টেস্ট কমিয়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, নানা কারণে করোনা ভইরাস টেস্ট কমে গেছে। প্রথমে করোনার টেস্টিং কিটের অভাব ছিল। এখন আবার জনগণ করোনা পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত হচ্ছে না। আবার অনেকের মধ্যে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ভয়-ভীতিও কমে গেছে। অনেকেই আবার ভাবছেন যেহেতু কোনো চিকিৎসা নাই, তাই করোনা টেস্ট করিয়েই লাভ কী? অন্যদিকে আবার যারা করোনা পজিটিভ হচ্ছেন, তাদের যে ফলোআপ করা দরকার, সেই ফলোআপ করাও সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণেই বর্তমানে করোনা টেস্ট কমে গেছে।
জনস্বাস্থ্য ও মহামারির বিষয়ে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, একটি মৃত্যুও কাম্য নয়। তবে তুলনামূলক বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসে মৃত্যুহার এখনও অনেক কম। ফলে সামগ্রিকভাবে অনেকেই ভাবছেন, করোনা আক্রান্ত হলে কী আর হবে! এটাই সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক। মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমানে কম হলেও যেকোনো সময় সেটা বেড়ে যেতে পারে। কোনো একটি ঘনবসতি এবং ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যখন অনেক বেশি লোক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখন কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যাটাও বেড়ে যায়। ফলে আমরা যদি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে অবাধে বাড়তে দিই, কোনো এক সময় হঠাৎ করেই আরও অনিয়ন্ত্রিত মৃত্যু দেখা দিতে পারে।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, একটা দেশের মানুষ এবং সরকার যখন আত্মতৃপ্তিতে ভোগে, তখন কিন্তু বিপদের আশঙ্কা বেড়ে যায়। যেমন হয়েছে, আমেরিকা, ব্রাজিল, মেক্সিকো, ইতালি এবং সুইডেনে। সুতরাং এখনও আমাদের সময় আছে, বোঝার। করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আত্মতৃপ্তিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই। করোনা ভাইরাস কিন্তু ধীরে হলেও তার আপন গতিতেই প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে শহরে কিছুটা সংক্রমণ হার কমলেও গ্রাম এলাকায় করোনার বিস্তার ঘটছে। নারায়ণগঞ্জ-গাজীপুরে বর্তমানে করোনা আক্রান্ত সংখ্যা কমেছে। তবে ঢাকার ভেতরে এক এলাকায় সংক্রমণ কমলেও আরেক এলাকায় বাড়ছে।
তিনি আরও বলেন, মার্চ মাসে যখন করেনা আক্রান্ত রোগী সংখ্যা কম ছিল, তখন কিন্তু মানুষের মধ্যে ভয় ছিল। এখন আক্রান্ত সংখ্যা বহুগুণ বেশি হওয়া সত্ত্বেও মানুষের মধ্য থেকে করোনা ভীতি দূর হয়ে গেছে। দেশের মানুষের মধ্যে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে ভয় কমে গেলেই যে করোনা ভাইরাস কমে গেছে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। ভয় কমে যাওয়ার অর্থ এই নয়, করোনা ভাইরাস মহামারি শেষ হয়ে গেছে। করোনা ভাইরাস তার নিয়মেই এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের হার বাড়ছে। সুতরাং এখনই আত্মতৃপ্তির কোনো অবকাশ নেই। সাবধানতা গ্রহণ করার কোনো বিকল্প নেই। তা না হলে হঠাৎ করেই আমাদের অনেক খারাপ পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশে সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০২০
আরকেআর/টিএ