স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বছরের শেষের দিকে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ মহাসড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের জায়গা দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। সেই অভিযানে বেড়া স্ট্যাক ইয়ার্ড, কাশিনাথপুর, নগড়বাড়ি ও বাঁধের হাটের প্রায় ছয় শতাধিক আধাপাকা-কাঁচা দোকান ঘর ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয়।
পাবনা-২ আসনের সাবেক এমপি আওয়ামী লীগ নেতা খন্দকার আজিজুর রহমান আরজুর সময় নগরবাড়ি ঘাট এলাকার নলখোলা-মথুরাপুরে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা দখলে নিয়ে সেখানে বালু-মাটি ভরাট করে দু’পাশে ১৬১টি রুমের বিশাল মার্কেট নির্মাণ করেন তিনি। প্রতিটি রুমের পজিশন বাবদ এক থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিমাসে দোকানগুলো থেকে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। পজিশন হস্তান্তর ও ভাড়ার টাকা কোন খাতে জমা বা ব্যয় হচ্ছে তা স্থানীয় প্রশাসন কিছুই জানেন না।
সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুর রহমান আরজু সরকারি জায়গার ওপর মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, তৎকালীন প্রশাসনের কাছ থেকে মৌখিক অনুমোদন নিয়ে মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে। পজিশন হস্তান্তর ও ভাড়ার টাকা মার্কেট নির্মাণ ও উন্নয়ন কাজে ব্যয় করা হয়েছে।
বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর-কাজিরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের বাঁধেরহাট বাজার এলাকায় সওজের জায়গা দখল করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে অলিখিতভাবে পজিশন হস্তান্তর করা হয়েছে। অনেকেই অবৈধভাবে দখল করা জায়গায় আরসিসি পিলারের ভিত্তি স্থাপন করে বহুতল ভবন ও মার্কেটের নির্মাণ কাজ করছে।
অভিযোগ উঠেছে, বাঁধেরহাটে যেসব বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে, তার সঙ্গে সওজের কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিসের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আহসানুল কবির এবং কার্যসহকারী আব্দুল বাসেদের পরোক্ষ সহযোগিতা রয়েছে।
সম্প্রতি পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ মহাসড়কে দুই পাশ থেকে অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য দখলদারদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্ত উল্লেখিত দখলদারদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি।
সওজের পাবনা অফিসের একটি সূত্র জানায়, কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিস থেকে অবৈধ দখলদারদের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, শুধুমাত্র তাদেরই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা আমিনপুর ও কাশিনাথপুর মোড় এলাকায় সওজের উদ্ধারকৃত জায়গা পুনর্দখল করে পাকাবাড়ি ও দোকান ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে। বেড়া স্ট্যাক ইয়ার্ডের প্রায় ১৫ বিঘা জায়গার প্রায় পুরোটাই আবারো অবৈধ দখলে চলে গেছে। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমিনপুর, নগরবাড়ী ও বাঁধেরহাটের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের আওতায় আসেনি।
রুপপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম উজ্জল বাংলানিউজকে জানান, বাঁধেরহাট এলাকায় অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযানে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগকে জনবল দিয়ে সহযোগিতা করেছি। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এখন দেখতে পাচ্ছি আমাদের সরকার দলীয় নামধারী কিছু নেতা ক্ষমতার অপব্যবহার করে উচ্ছেদকৃত জায়গা আবার দখল করে পাকা ভবন নির্মাণ করে চলেছে। এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি। আশা করছি তিনি যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসিফ আনাম সিদ্দিকী বলেছেন, সাবেক এমপি খন্দকার আজিজুর রহমান আরজু সাহেব নগরবাড়ির নলখোলা-মথুরাপুরে অবৈধভাবে সরকারি জায়গার উপর মার্কেট নির্মাণের বিষয়ে পাবনা জেলা আইনশৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সভায় এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পাবনা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে বলা হয়েছে। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য পাবনা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জোহা জানান, এ বিষয়ে জানার পর আমিনপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। কাশিনাথপুর সেকশনাল অফিস থেকে পাঠানো তালিকায় যাদের নাম আছে শুধু তাদেরই নোটিশ পাঠানো হয়েছে। করোনাকালীন সঙ্কটকে পুঁজি করে বিভিন্ন এলাকায় উদ্ধারকৃত জায়গা কিছু কিছু মানুষ আবারও অবৈধভাবে দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। আমরাও খুব দ্রুত অবৈধ দখল উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০২০
এনটি