ঢাকা, শুক্রবার, ৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

জেএসএস’র হাতে পাহাড়ে ৪২ খুন: সিএইচটিআরএফ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
জেএসএস’র হাতে পাহাড়ে ৪২ খুন: সিএইচটিআরএফ

রাঙামাটি: শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরকারী পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক সংগঠন জ্যোতিপ্রিয় বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামে ৪২ জন খুন হয়েছে। মোট ২৪টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তারা এই ৪২ জনকে হত্যা করেছে। 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষণা সংস্থা সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (সিএইচটিআরএফ) এক গবেষণা থেকে এ তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণা থেকে জানা যায়, বিগত দেড় বছরে জেএসএস (মূলের) সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে ১৫ জন করে এবং রাঙামাটিতে ১২ জন নিহত হয়েছেন।

নিহত ৪২ জনের রাজনৈতিক পরিচয় বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এসব হত্যাকাণ্ডের  শাসকদল আওয়ামী লীগের ৯ জন, ৮ জন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি, ১৪ জন জেএসএস (সংস্কারপন্থী গ্রুপ), এমএনপি পাঁচজন, জেএসএস মূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একজন এবং চারজন সাধারণ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি।

সিএইচটিআরএফ’র গবেষণায় আরও দেখা যায়, খাগড়াছড়িতে নিহত ১৫ জনের মধ্যে জেএসএস সংস্কারপন্থী সাতজন এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তি আটজন। বান্দরবানে নিহত ১৫ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের চারজন, জেএসএস সংস্কারপন্থী ছয়জন, এমএনপি দুইজন ও তিনজন সাধারণ উপজাতি। রাঙামাটিতে নিহত ১২ জনের মধ্যে আওয়ামী লীগের পাঁচজন, একজন জেএসএস সংস্কারপন্থী, তিনজন এমএনপি, একজন ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক), জেএসএস (মূল) একজন এবং একজন সাধারণ উপজাতি।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিএইচটি রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক গবেষক মেহেদী হাসান পলাশ বলেন, শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে রক্তপাত বন্ধ হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সন্তু লারমার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। কারণ জেএসএস তার সব অস্ত্র জমা দেয়নি এবং সব সামরিক সদস্য অস্ত্র সমর্পণ করেনি।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তারা এটি সীমিত রেখেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সন্তু লারমা তার সশস্ত্র শাখার মাধ্যমে জোরালো সামরিক তৎপরতা শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, উপরের পরিসংখ্যানগুলো বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাবো, পাহাড়ের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ জাতীয় রাজনীতিতে সক্রিয় হোক এটা সন্তু লারমা চায় না। সে কারণে সরকারের সম্প্রীতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে উন্নয়ন কার্যক্রমে অংশীদার হতে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর লোকজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হয়েছে তারা তার রোষানলে পুড়েছে। বিশেষ করে তারা সশস্ত্র সন্ত্রাস, জাতির মুক্তির নামে চাঁদাবাজি, খুন, অপহরণের মতো সমাজবিরোধী কার্যক্রমে বিতৃষ্ণ হয়ে যেসব ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য জেএসএস ছেড়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে তাদের ওপর জেএসএস নির্যাতন চালিয়েছে। বিশেষ করে যারা দল ত্যাগ করে অন্য সংগঠনে যোগ দিয়েছে বা স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে এসেছে তাদের নির্মম পরিণতির শিকার হতে বাধ্য করেছে জেএসএস।

মেহেদী হাসান পলাশ জানান, জাতির মুক্তির জন্য আন্দোলনের কথা বলে জেএসএস নিজ জাতির লোকদের ওপরই চাঁদাবাজি, হত্যা, অপহরণ ও সন্ত্রাসের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন। কেননা যে ৪২ জন খুন হয়েছে তাদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের বাসিন্দা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৯ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০২০
এনটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
welcome-ad