তবে জনজীবনে আস্থা রাখা এসব সুরক্ষা পণ্যই যদি ভেজাল হয় তাহলে বিষয়টি উদ্বেগের। কারণ এসব সুরক্ষা পণ্য ব্যবহারের ফলে জীবাণু ধ্বংসতো হচ্ছেই না উল্টো ত্বকে নানা ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সড়কের পাশের অলিতে-গলিতে ভেজাল সুরক্ষা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন বিক্রেতা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের হুবহু মোড়ক করে বিক্রি করা হচ্ছে ভিন্ন নামের পণ্য। এমনকি এসব পানীয়ের রংও আসল ব্র্যান্ডের মতোই। স্যাভলনের আদলে স্যালভন, স্যালোভন বা স্যাভোলন বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা ভালোভাবে খেয়াল না করলে সহজে এই নকলের পার্থক্য বুঝার উপায় নেই। এছাড়া হ্যান্ডরাব হেক্সিসল বলে বিভিন্ন সাইজের গ্যালনভর্তি নীল পানীয় বিক্রি হচ্ছে। আদতে হেক্সিলই কি-না প্রমাণের কোনো চিহ্ন নেই।
জনসাধারণও বেশ আগ্রহের সঙ্গে দরদাম করে এসব পণ্য ক্রয় করতে দেখা গেছে। কখনো ক্রেতা এসব পণ্যের বিষয়ে প্রশ্ন তুললেও বেশ ভালোভাবে বুঝিয়ে তার কাছেই গুছিয়ে দিচ্ছেন বিক্রেতা। একদিকে বাজারে এসব পণ্যের ঘাটতি এবং তুলনামূলক কম দামে পাওয়ায় সেসব কিনছেন জনসাধারণ।
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় রাস্তার পাশেই টেবিল বিছিয়ে জীবাণুনাশক হ্যান্ডরাব বলে বিভিন্ন সাইজের বোতলে নীল রঙের পানীয় বিক্রি করছেন সোহেল। তিনি জানান, একটি প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের কারখানা থেকে সরাসরি গ্যালনভর্তি এসব হ্যান্ডরাব এনে বিক্রি করছেন। তবে সেই ব্র্যান্ডের কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি। বোতলের সাইজভেদে ৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করছেন। তবে এ ক্ষেত্রে দামাদামির সুযোগ রয়েছে। সোহেল বলেন, ওষুধের দোকানে কিনতে যান পাইবেন না, পাইলেও দাম রাখবে ডাবল। আমার এখানে একই জিনিস একই কাজ করে, কিন্তু দামে কম। অনেকেই নিয়া ব্যবহার করতেছে, এতোদিনেও কেউ যেহেতু অভিযোগ করে নাই তাইলে নিশ্চই কাজ করে। কাজ না করলে মানুষ টাকা দিয়া কিনবে?
তার কাছ থেকেই জীবাণুনাশক কিনেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী লোকমান নামে একজন। তিনি বলেন, সবসময়ই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ভয় রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনে আমাদের বাইরে বের হতেই হচ্ছে। এর মধ্যে যতটুকু সুরক্ষা দরকার, তা মেনে চলার চেষ্টা করছি। বাইরে বের হলেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা হ্যান্ডরাব ব্যবহার করছি। কিন্তু সবসময় চাইলেই এসব পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাইরে থেকে কিছুটা কম দামে পেয়ে গেলাম বলে নিয়ে নিলাম।
এসব জীবাণুনাশক আসল কি-না অথবা কাজ করবে কি-জানতে চাইলে তিনি বলেন, গন্ধে আসলই মনে হলো। তারপরে বাকিটা পরীক্ষা করারতো উপায় নেই। অনেকেই কিনছেন, তাই আমিও নিলাম।
এদিকে, সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান ভেজাল জীবাণুনাশক পণ্য উদ্ধার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন। একাধিক স্থানে এসব ভেজাল পণ্য তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে জড়িতদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা আদায় করেছেন র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এসব অভিযানে দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে মাত্রাতিরিক্ত চাহিদার কারণে কার্যকর কোনো উপাদান ছাড়াই জীবাণুনাশক তরল হ্যান্ডরাব তৈরি ও বিক্রিতে তৎপর হয়ে উঠেছে সেসব অসাধু চক্র। কোনো ধরনের মান-নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই নীল রং, ফ্লেভার আর জেল মিশিয়ে বাসায়ই তৈরি করা হচ্ছে এসব হ্যান্ডরাব।
গত ২৫ জুন রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর উত্তর রায়েরবাগ এলাকায় হ্যান্ডরাব তৈরির এমন একটি কারখানায় অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় কারখানাটি থেকে লক্ষাধিক বোতল হ্যান্ডরাব জব্দ করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। এছাড়া এক সপ্তাহে এই কারখানা থেকে প্রায় ২ লাখ বোতল হ্যান্ডরাব বাজারে ছাড়া হয়েছে, যার বাজারমূল্য আনুমানিক আড়াই কোটি টাকা।
ওই অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ বসু জানান, এসব নকল হ্যান্ডরাব তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছিল নীল রং, লেবুর ফ্লেভার, স্পিরিট আর জেল। কিন্তু হ্যান্ডরাবের যে মূল উপাদান ক্লোরোহ্যাক্সিডাইন গ্লোকোনেট, তার কোনো ব্যবহারই ছিল না। এ ধরনের হ্যান্ডরাব ব্যবহারে উপকারের বদলে উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, জুলাই ১০, ২০২০
পিএম/এএটি