ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২০
মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন

পিরোজপুর: পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ ও উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ জসীমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্থানীয় ঠিকাদাররা। 

বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) বেলা ১১টায় মঠবাড়িয়া প্রেসক্লাবে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।  

সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ ঠিকাদারদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মেসার্স রাফি অ্যান্ড রিফা কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন খান।

 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পিপিআর বিধি অনুযায়ী আরএফকিউ টেন্ডার পদ্ধতিতে সিডিউল বিক্রি বা দরপত্র বিতরণের ক্ষেত্রে ৭১(৩) ধারায় কোনো মূল্য গ্রহণ ও ৭০(৬) ধারায় শতকরা ৫ ভাগ জামানত গ্রহণ করা যাবে না। কিন্তু সে নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রতি সেট সিডিউলের মূল্য বাবদ সাড়ে ৫ হাজার টাকা নিয়ে ৪ হাজার ৮০০ টাকার রশিদ দেওয়া হয়েছে। আর আনুমানিক ১২০টি সিডিউল বিক্রি করে টেন্ডার কমিটির সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদস্য সচিব উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী প্রায় ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। যা পিপিআরের নিয়ম বহির্ভূত এবং সাধারণ ঠিকদারদের সঙ্গে প্রতারণা ও হয়রানিমূলক। এডিপির ওই টেন্ডার নোটিশে মঠবাড়িয়ার নিবন্ধিত ঠিকাদার ছাড়া অন্য উপজেলার ঠিকাদাররা সিডিউল কিনতে অথবা ড্রপিং করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়, যা বিধি বহির্ভূত। এমন কি আরএফকিউ পদ্ধতিতে ৬০ লাখ টাকার উপরে দরপত্র আহ্বান করা যাবে না। অথচ ৬০ লাখ ৪৮ হাজার ৫৪০ টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়। আর আহ্বান করা ওই টেন্ডারের বহু কাজ অন্য তহবিল থেকে সম্পন্ন করে তার টাকা এর আগে উত্তোলন করা হয়েছে। আর ওই প্রকল্প এডিপির অর্ন্তভুক্ত করে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকৌশলী ওই টাকা আত্মসৎ করার জন্য যাচাই বাছাই না করে উক্ত খাতে অনুমোদন দেন। এ সময় ওই কাজের ফান্ড ফেরত যাওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় এমপি ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগে এনে গত ৩০ জুন উপজেলা চেয়ারম্যানের করা সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদ করেন ঠিকাদাররা। এ সময় বক্তারা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ জসীমের অপসারণও দাবি করেন।

এদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ওই টেন্ডার কমিটির কর্মকর্তা উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী। উপজেলা পরিষদে রেজুলেশন করে আরএফকিউ পদ্ধতিতে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। আর ওই টেন্ডারে সিডিউল বিক্রির টাকা সরকারি খাতে জমা দেওয়া হয়েছে। তা কারো আত্মসাৎ করার সুযোগ নাই। আর কোনো প্রকল্প যদি এর আগে করা হয়ে থাকে, তার টাকা ফাঁকি দিয়ে তোলার কোনো সুযোগ নাই।  

উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী ও যাচাই বাছাই কমিটির সচিব কাজী আবু সাঈদ জসীমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, সিডিউল বিক্রির ওই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে একটি টাকাও আমার খরচ করার সুযোগ নেই। এর আগে ওই প্রকল্পের কাজের জন্য উপজেলা পরিষদ থেকে রেজুলেশন করে আমার কাছে পাঠানো হয়। এর পরে ওই কাজের টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। আর সিডিউল বিক্রিতে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয়নি।  

উল্লেখ্য, এর আগে গত মঙ্গলবার (৩০ জুন) রাতে মঠবাড়িয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন আহম্মেদের নেতৃত্বে উপজেলার ১১ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা স্থানীয় এমপি (পিরোজপুর-৩ আসন) ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীর বিরুদ্ধে ওই টেন্ডারে হস্তক্ষেপসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ঝাড়ু মিছিল, পথসভা ও সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রতিবাদে ও ওই টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগে উপজেলার চেয়ারম্যানের জড়িত থাকার অভিযোগ এনে   বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) সংবাদ সম্মেলন করলেন স্থানীয় সাধারণ ঠিকাদাররা।  
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) ওই উপজেলায় এডিপির আওতায় ১২ প্যাকেজের প্রায় ৬১ লাখ টাকার একটি টেন্ডার হয়। ওই টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ এনে ও ওই টেন্ডার বাতিলের দাবিতে স্থানীয় ঠিকাদাররা পরের দিন শুক্রবার (২৬ জুন) বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেন। এ সময় উপজেলা প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ জসীমের অপসারণ দাবি করেন তারা। ওই টেন্ডার কেন  বাতিল করা হবে না এ মর্মে স্থানীয় ঠিকাদার মো. লোকমান হোসেন খানের পক্ষে গত ২৯ জুন পিরোজপুর জজ কোর্টের অ্যাডভোকেট নারায়ণ চন্দ্র বেপারী ওই টেন্ডারের প্রজেক্ট সিলেকশন কমিটির সভাপতি, সদস্য ও সদস্য সচিবকে লিগ্যাল নোটিশ দেন। গত ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করে টাকা তোলার বিধান থাকলেও এসব সমস্যার কারণে ওই কাজ শুরু করতে দেরি হওয়ায় কাজের টাকা ৩০ জুন ফেরত যায়।

উল্লেখ্য, পিরোজপুর-৩ (মঠবাড়িয়া) আসনে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন উপজেলার বর্তমান
চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিনের ছোট ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মো.
আশ্রাফুর রহমান। কিন্তু আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির জোট থাকায়
ওই আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয় জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. রুস্তুম আলী ফরাজীকে। পরে ওই উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে উপজেলা চেয়ারম্যান হন রিয়াজ উদ্দিন। আর এরপর থেকে সেখানে উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপির মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এ বিরোধের জের ধরে এমপির বিরুদ্ধে ফেসবুকে কটূক্তি, তার গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে।  

এর আগে ওই উপজেলায় আওয়ামী লীগের দু’টি গ্রুপের একটির নেতৃত্ব দেন ওই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন ফেরদাউস ও অন্য গ্রুপের নেতৃত্ব দেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যানের ছোট ভাই আশ্রাফুর রহমান। এ বিরোধের জেরে সেখানে যুবলীগ নেতা লিটন পন্ডিত ও স্বেচ্ছা সেবক লীগ জনি তালুকদার খুন হন। ওই দুই হত্যা মামলায় পৌর মেয়র রফিক উদ্দিন আহম্মেদ ফেরদাউসকে আসামি করা
হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি আওয়ামী লীগের এ গ্রুপিংয়ের অবসান ঘটিয়ে সবাই এমপির বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০২০
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।