ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ মে ২০২৪, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

করোনা: ফেনীতে সংক্রমণ বেড়ে চললেও মানা হচ্ছে না দূরত্ব

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৩ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০
করোনা: ফেনীতে সংক্রমণ বেড়ে চললেও মানা হচ্ছে না দূরত্ব

ফেনী: ফেনীতে দিন দিন বাড়ছে করোনার সংক্রমণ। গত দুই মাসে এ জেলায় করোনা শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে ৫১৪ জনে দাঁড়িয়েছে। শেষ ১৮ দিনেই শনাক্ত হয়েছেন ৩৯১ জন। শনাক্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৯ জন। এদিকে আশঙ্কাজনক হারে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পেলেও এ জেলায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি, শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না।

করোনার সংক্রমণ রোধে শহরের ৩টিসহ জেলার ৭টি এলাকায় ‘লকডাউনে’ কিছুটা নিয়ম মানা হলেও বাদবাকি এলাকাগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি মানার নামগন্ধ নেই। শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চোখে পড়ছে তীব্র যানজট।

রাস্তায় সিএনজি অটোরিক্সা, প্রাইভেট ও গণপরিবহনের উপস্থিতি স্বাভাবিক সময়ের মতোই।  

সোমবার (১৫ জুন) ও মঙ্গলবার (১৬ জুন) শহরের ট্রাংক রোড ও এসএসকে সড়কের চিত্র দেখলে কারো মনেই হবে না দেশে মহামারি চলছে বা সরকার খুব প্রয়োজন না হলে বের না হওয়ার অনুরধ জানিয়েছে।  

সরেজমিনে শহরের বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা যায়, মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষ ভীষণ উদাসীন। প্রশাসন নানা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে গেলেও বিষয়টি ঠিকভাবে আমলে নিচ্ছেন না অনেকেই। বাজার, রাস্তাঘাট, বিপণীবিতানসহ কোনো স্থানেই মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।  

সার্বিক পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা বলছেন, মানুষের এ অবহলোর কারণে করোনা ভাইরাস ফেনীতে বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।  

নোয়াখালী আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের কনসালট্যান্ট রিয়াজ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, সরকারি হিসেবে ফেনীতে করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ৫১৪ হলেও প্রকৃত সংখ্যা হতে পারে কয়েক হাজার। পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করে যাদের করোনা শনাক্ত করা যাচ্ছে তাদেরই আমরা করোনা রোগী বলছি। কিন্তু জেলায় করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও কয়েক হাজার লোক রয়েছে, পিসিআর ল্যাবে যাদের নমুনা পরীক্ষা করা যায়নি। আমরা ধারণা করছি, তাদের মধ্যেও করোনা রোগী রয়েছে। নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে খুব বেশি নমুনা টেস্ট করার সক্ষমতা নেই। মানুষের উচিত এই দুর্যোগকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে থাকা।

ফেনীতে দিন দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ার প্রসঙ্গে এ চিকিৎসক বলেন, ফেনী একটি মধ্যবর্তী শহর। এর সঙ্গে ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন শহর কানেক্টেড। সাধারণ ছুটির পর এ জেলা দিয়ে দেশব্যাপী মানুষের যাতায়াত অনেক বেশি হয়েছে, ফলে সংক্রমণ বেড়েছে।  

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, করোনার উপসর্গ শ্বাসকষ্ট নিয়ে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বর্তমানে ৮৪ জন ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১৯ জনের করোনা পজিটিভ।  

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, গত তিনদিনে নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ফেনীর মোট ৩২৯টি নুমনা পরীক্ষার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০৩টি নমুনা পজিটিভ এসেছে।  

এদিকে জেলায় দিন দিন করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। গত দুইদিনে ফেনীতে করোনা উপসর্গ নিয়ে দুইজন ও করোনা শনাক্ত একজনের মৃত্যু হয়েছে।  

জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া জানান, হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে দিন দিন রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ কর্তৃক ফেনীর ৮টি এলাকাকে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করে লকডাউন করা হয়েছে। এছাড়া সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে বাজার ও দোকানপাট খোলা-বন্ধের ওপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্ত রোগীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ১৮২ জন সদর এলাকার। এরপরপরই ১২০ জন নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে দাগনভুঞা উপজেলা। এর বাইরে সোনাগাজীতে ৮৪ জন, ছাগলনাইয়ায় ৬২ জন, পরশুরামে ২৮ জন ও ফুলগাজীতে ২৯ জন রয়েছেন।

করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ফেনীর পুলিশ সুপার (এসপি) খোন্দকার নুরন্নবী বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ যাতে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করে সে ব্যাপারে সতর্কভাবে কাজ করছে জেলা পুলিশ বিভাগ। তবে বিপজ্জনক এই পরিস্থিতিতে মানুষজনের স্বেচ্ছায় আইন মানা উচিত।  

জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডা. রুবাইয়াত বিন করিম বাংলানিউজকে জানান, জেলায় শনাক্ত ব্যক্তিদের সিংহভাগই আক্রান্তদের সংস্পর্শে গিয়ে সংক্রমিত হয়েছেন। তাই সবার উচিত হবে শারীরিক ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা।

করোনা প্রতিরোধে প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরে জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজজামান বলেন, করোনর প্রাদুর্ভাবে জেলার যেসব এলাকা লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে সেসব এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলবে।

‘এছাড়া অধিক মূল্যে সুরক্ষা সামগ্রী বিক্রি রোধে ও বাধ্যতামূলকভাবে এসব পণ্যের মূল্যতালিকা টাঙাতে মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে। ইতোমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য পৌরসভাগুলোতে একটি করে গোসলখানা নির্মাণের অনুরোধ জানানো হয়েছে। ’

এদিকে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবায় ফেনীর সব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাই-ফ্লো সেন্ট্রাল অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু করার কাজ চলছে। ইতোমধ্যেই দেশের প্রথমবারের মতো ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ৪০ শয্যা ও উপজেলা পর্যায়ে দাগনভূঞায় ১০ শয্যার হাই-ফ্লো অক্সিজেন সেবা চালু করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২০ 
এসএইচডি/এইচজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ