ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

সাতক্ষীরায় গম আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা, গ্রেফতার ৩

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১০১ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
সাতক্ষীরায় গম আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা, গ্রেফতার ৩ গ্রেফতার তিন আসামি।

সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে পাচার করা কাবিখা প্রকল্পের ৮১৭ বস্তা গম কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুরের মেসার্স মনি মুক্তা রাইস মিলের গুদাম থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এ ঘটনায় ছয়জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মেসার্স মনিমুক্তা রাইস মিলের মালিক আব্দুল গফ্ফারের ছেলে মনিরুল ইসলাম মনি, মিলের ম্যানেজার দেবহাটার আশকারপুর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম মুকুল ও শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র মণ্ডল।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, শ্যামনগর থেকে সরকারি গম পাচার করে কালিগঞ্জের একটি রাইস মিলে রাখা হয়েছে, এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলামের নেতৃত্বে কালিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হুসাইনসহ সঙ্গীয় ফোর্স বুধবার (২৭ মে) বিকেলে উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের সুলতানপুর কলোনির মনিমুক্ত রাইস মিলের গোডাউনে অভিযান চালায়। এসময় সেখান থেকে সরকারি বস্তা ভর্তি ৮১৭ বস্তা গম জব্দ করে পুলিশ। এর বাজার মূল্য প্রায় ১৪ লাখ ৮৮ হাজার টাকা। বিপুল পরিমাণ এই গম উদ্ধারের পর বৃহস্পতিবার সকালে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার পরিদর্শক নীল কমল পাল কালিগঞ্জ থানায় আসেন।

তিনি সার্বিক বিষয়ে তদারকির পর গ্রেফতার তিনজনসহ ছয়জনের নামোল্লেখ করে এবং কয়েকজনকে অজ্ঞাতপরিচয় দেখিয়ে দঃ বিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৮/৪৭১/ ৪৭৭(ক)/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় একটি মামলা রুজু করেন। মামলা নং-১১ তারিখ ২৮.০৫.২০।

মামলাটি তিনি নিজেই তদন্তভার গ্রহণ পূর্বক পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে জানা গেছে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, গম উদ্ধারের পরপরই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে মিল মালিকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনি, মিলের ম্যানেজার মুকুলকে বুধবার রাতেই আটক করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য এবং ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকায় বৃহস্পতিবার সকালে শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য পবিত্র কুমার মণ্ডলকে তার নিজ বাড়ি পরানপুর থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এদিকে, সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাস্থল ও কালিগঞ্জ থানা পরিদর্শন করে ঘটনার পেছনে কারা আছেন তা খতিয়ে দেখার তাগিদ দেন।

জানা গেছে, শ্যামনগর উপজেলার কৈখালি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ও রাস্তা সংস্কারের জন্য বরাদ্দ হওয়া বিপুল পরিমান এই গমের কাজ না করেই তা সংস্কার দেখিয়ে গম উত্তোলন করে বিক্রি করা হয় কালো বাজারে। এরপর ওই গম শ্যামনগর থেকে কালিগঞ্জের মনি মুক্ত রাইস মিলের গোডাউন ঘরে মজুদ রাখে।  

অভিযোগ রয়েছে, জনপ্রতিনিধির ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ আলীর কাছ থেকে কালিগঞ্জের আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল গফফার ৫০টন গম ক্রয় করেন।

তিনি জানান, আমি শ্যামনগরের মোহাম্মাদ আলীর কাছ থেকে ৪৯ টন ২শ কেজি বিভিন্ন ডিও লেটারের গম ক্রয় করেছি।

শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম জানান, আটককৃত গম ইউনিয়ন পরিষদের সাধারণ বরাদ্দ নয়, এটি বিশেষ বরাদ্দ। উপজেলা চেয়ারম্যান বা এমপি সাহেবের বরাদ্দ হতে পারে। তবে আটক ইউপি সদস্য তাকে বলেছেন, পরানপুর লেবুখালির আতিয়ার শেখ এর বাড়ি থেকে সাত্তারের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কারের জন্য ওই বরাদ্দ আসে।

এদিকে, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় খুলনার পরিদর্শক নীল কমল পাল জানান, সরকারি গম কাজ না করেই আত্মসাত করার ঘটনার সামনে পেছনে যারাই আছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০৫৬ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২০
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।