ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

জাতীয়

কবে আগের মতন কাজ করতে পারমু?

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৬ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০২০
কবে আগের মতন কাজ করতে পারমু?

মাদারীপুর: হারান চন্দ্র শীল। পেশায় নরসুন্দর। মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার উৎরাইল নয়াবাজারে তার দোকান। শিবচরে লকডাউন শুরু হলে অন্যান্যদের মতো বন্ধ রাখতে হয় তার সেলুনও। কিন্তু দৈনন্দিন কাজের ওপর চলা সংসারে সংকট শুরু হয় কয়েকদিন দোকান বন্ধ থাকার পরই।

কাজ করতে না পারলে ভাতের ব্যবস্থা হয় না। বাধ্য হয়ে মাঝে মধ্যে চুপেচাপে দোকান খুললেও কাস্টমারের দেখা কালে-ভদ্রে দুই/একজন ছাড়া মেলে না।

আটকে যায় দোকান ভাড়া। ঠিকমতো বাজার-সদাই করাও বন্ধ হয়ে যায়। অপেক্ষায় থাকেন কবে স্বাভাবিক জীবন যাত্রা শুরু হবে মানুষের!

মঙ্গলবার (২৬ মে) সকালে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘শিবচর লকডাউনের পর বাজারের দোকানপাট সব বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে মধ্যে গোপনে দোকান খুলতাম, কিন্তু কাজ ছিল না। করোনা ভাইরাসের কারণে এলাকার বেশির ভাগ মানুষই 'নাপিত' এর দোকানে আসা বন্ধ করে দেয়। প্রথম দিকে কিছুদিন দোকান বন্ধ রেখেছিলাম। কিন্তু ইনকাম না থাকলে তো প্রতিদিনের খাবার জোটানো কষ্ট হয়ে যায়। পরে গোপনে দোকান খুলতাম। ভেবেছিলাম দোকান খুললে কাস্টমার আসবে। কিন্তু ঘটনা উল্টো। '

তিনি আরো বলেন,'স্থানীয় বাজারে দোকান করি। এলাকার মানুষই আমাদের কাস্টমার। করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারন মানুষ সেলুনে আসা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। যুবকদের একটা অংশ মাথা ন্যাড়া করে ফেলেছে। অনেকে ইচ্ছা করেই চুল কাটছে না। আর বর্তমানে বাড়িতে বসেই বেশির ভাগ মানুষ দাড়ি-গোফ কামাচ্ছে। আগে এমনটা ছিল না। সব মিলিয়ে আয়-রোজগার একেবারে কমে গেছে এখন। সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পরেছে। '

সাধারন মানুষের সাথে আলাপচারিতায় তারা জানান, করোনা ভাইরাস পরস্পরের মাধ্যমে ছড়ায়। যেটা খুবই চিন্তার বিষয়। নাপিতের দোকানে নানান ধরনের মানুষ আসে। চেনা-অচেনা, বিভিন্ন জায়গার। আর একই কাঁচি, খুর, চিরুনি ব্যবহার করা হয় সবার জন্য। যেটা আরো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণেই এলাকার সচেতন লোকজন নাপিতের দোকানে আসা প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। বেশির ভাগ মানুষ বাড়িতেই 'সেভ' করছে ইদানিং। '

এদিকে দোকানপাট বন্ধ রাখার কারনে অনেক 'নাপিত' নিজের বাড়িতে বসেই কাজ করছেন। এলাকার লোকজনদের অনেকে বাড়িতে গিয়ে চুল-দাড়ি কামিয়ে আসছেন। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। কাজ না থাকায় সারাদিনে যতটুকু কাজই আসে আগের চেয়ে কিছুটা বেশি টাকা নিচ্ছেন স্থানীয় নরসুন্দরেরা।

জানতে চাইলে হারান চন্দ্র শীল আরো বলেন,'সারাদিনে তো কাস্টমার পাই না। দুই/একজন আসলে আগেই বলে নিই টাকা একটু বেশি দেয়া লাগবে। দেয়ও তারা। ঈদ তো গেল। আবার কি আগের মতোন স্বাভাবিক হবে সব কিছু? ভাই, কবে থেকে আগের মতোন কাজ কাজ করতে পারমু?'

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে পাঁচ জনের সংসার এই নরসুন্দর হারান চন্দ্র শীলের। এর মতো অন্যদের অবস্থাও প্রায় একই রকম। সাহায্য-সহযোগিতাও তেমন একটা পায়নি তারা। স্থানীয় বাজারে সেলুন ব্যবসায় বেশ ভালো ছিলেন । দৈনিক ৫শত থেকে ১ হাজার টাকার মতো আয়-রোজগার ছিল আগে। বেশ ভালোই চলতো সংসার। করোনা ভাইরাস অন্যান্যদের মতো 'নরসুন্দর পেশায়'ও ছন্দপতন ঘটিয়েছে। মানুষের সচেতনতাবোধের কারণে এখন সেলুনমুখী হচ্ছে না বেশির ভাগ সচেতন মানুষ। তাই স্বাভাবিক দিন ফিরে পাওয়ার আকুতি নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন এই নরসুন্দরেরা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, মে ২৬, ২০২০
এমএমএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ