সাধারণত বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে থাকা কুকুরগুলো পরিবেশ থেকে পাওয়া খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান, হোটেল ও বাসাবাড়িতে বেঁচে যাওয়া বা উচ্ছিষ্টই কুকুর-বিড়ালগুলোকে খাদ্য যোগায়।
তবে করোনা ভাইরাসের কারণে এক রকম লকডডাউন পরিস্থিতিতে বিপাকেই পড়েছে এসব প্রাণী। বিভিন্ন হোটেলসহ খাবারের দোকান বন্ধ থাকায় পরিবেশ থেকে খাবার পাচ্ছে না প্রাণীগুলো। অন্যদিকে বাসাবাড়ি থেকেও উচ্ছিষ্ট বা বেঁচে যাওয়া খাবার পাচ্ছে না কুকুরগুলো।
এমন পরিস্থিতিতে এসব প্রাণী যে খাদ্য সংকটে চরম দুঃসময় পার করছে তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হতে হয় না। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এগুলোর প্রায় নিস্তেজ অবস্থা চোখে ধরা পড়ে। এক সময়ের চঞ্চল এ প্রাণীগুলো এখন ক্ষুধার্ত হয়ে সড়কে পড়ে আছে।
এসব প্রাণীর সাহায্যার্থে এখনো কোনো সরকারি সংস্থা এগিয়ে না আসলেও অনেক এলাকাতেই ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকে এগিয়ে আসছেন। অনেকেই আবার সাংগঠনিকভাবেও কাজ করছেন এসব প্রাণীর জন্য। আর এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো।
রাজধানীর উত্তরা এলাকার বাসিন্দা এবং অভিনয় শিল্পী জুঁই জান্নাত বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ পরিস্থিতিতে আমরা মানুষেরাও যেমন বাঁচার চেষ্টা করছি, তেমনি এ প্রাণীগুলোকেও আমাদের বাঁচাতে হবে। কারণ এগুলো এ পরিবেশেরই অংশ এবং বাস্তুসংস্থানের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কিছুদিন যাবত আমি আমার এলাকায় ছিন্নমূল কুকুর-বিড়ালগুলোর মধ্যে খাবার বিতরণের চেষ্টা করছি। খিচুরি, বিস্কুট বা রুটি দিচ্ছি। তার কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও দিয়েছি। মিডিয়ার আকর্ষণ বা ফেসবুক সেলেব্রিটি হওয়ার জন্য না বরং অন্যদেরও উৎসাহিত করার জন্য। আমি নিজে ওদের জন্য যা পারি করছি। অন্যরাও যেন এগিয়ে আসে, এ বার্তা দিতে চাই।
মিরপুর এলাকায় কুকুর-বিড়ালের মধ্যে খাবার বিতরণ করছেন গৃহবধূ ফাহিমা নূর তন্বী ও তার দল। সবাইকে এসব প্রাণীর সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যতটুকু পারেন এদের খাবার দিন। কারণ মানুষ নিজের খাবার নিজে বানিয়ে বা চেয়ে খেতে পারে। কিন্তু অবলা প্রাণীগুলো এসবের কিছুই পারে না; এমনকি চাইতেও পারে না। তাই সবার উচিত এদের সাহায্যে এগিয়ে আসা। ’
অন্যদিকে এসব প্রাণীর খাবার যোগান দিতে ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন কমিউনিটি গ্রুপও এগিয়ে আসছে। এদের মধ্যে ‘এক বেলার খাবার বোবা প্রাণীদের জন্য – ফুড ফর স্ট্রিট অ্যানিমেলস’ এবং ‘ডগ লাভারস অব বাংলাদেশ’ অন্যতম। ফেসবুক কাজে লাগিয়ে সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবার সহযোগিতায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কুকুর-বিড়ালদের মধ্যে খাবার বিতরণ করছে সংগঠনটি। ’
গ্রুপটির মডারেটর সাইদ হাসান এক পোস্টে বলেন, ‘আজকের দিনে সুযোগ হয়েছিল সবচেয়ে বড় পরিসরে কাজ করার। মিরপুর থেকে এক আপু তার ব্যক্তিগত গাড়ি দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছেন। আপু অবশ্যই ধন্যবাদ চাইবেন না, এতগুলো হাসিমুখের কাছে ধন্যবাদ তুচ্ছ। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা অব্ধি কাজ করে, খুব সম্ভবত দুই শতাধিক প্রাণীর মুখে খাবার তুলে দিতে পেরেছি। আরও ৩৫-৪০ জনের খাবার আমাদের গ্রুপের আরেকজনের হাতে দিয়ে আসছি। নিকুঞ্জ-২, আশকোনা, হাজিক্যাম্প, এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশন, খিলক্ষেত রেলগেট, কুড়িল-বিশ্বরোড মোড়, শেওড়া ছিল আমাদের প্রথম পর্বে। মহুয়া আপু নিজেই অনেক খাবার রান্না করেছিলেন, তারপরও বারিধারা ডিওএইচএস থেকে আরেক আপুও আবার নিজ উদ্দ্যোগেই খাবার রান্না করে দেন আমাদের। তারপর বাড্ডা থেকে আরেক ভাই পাঁচশ’ মতো বনরুটি নিয়ে আসেন। সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণ আর ভালবাসায় আজকের দিনে অনেক বেশিই কাজ করতে পেরেছি। ’
সবাইকে এসব প্রাণীর সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে সাইদ বলেন, ‘সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্লিজ একটু এগিয়ে আসুন, এদের পাশে দাঁড়ান। সবাই অন্তত একটি বাচ্চা কুকুরের দায়িত্ব নিলেও এ দেশে কারো না খেয়ে থাকতে হবে না। সবাই নিরাপদে থাকুন, নিজের খেয়াল রাখুন। ’
এদিকে কুকুরের পরিচর্যা সম্পর্কে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘এখন তো সবাই মানুষের নিরাপত্তা নিয়েই বেশি চিন্তিত। তবে এটা ঠিক যে, এ প্রাণীগুলোর দিকেও নজর দেওয়া দরকার। অবশ্য এগুলোর খাবারের জন্য আগেও আমরা কখনো কিছু করিনি। এ ধরনের পরিস্থিতিই তৈরি হয়নি। তাই আমরা প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা বেওয়ারিশ কুকুরের স্বাস্থ্যগত দিকগুলো দেখতাম। যেমন সেগুলোকে স্টেরিলাইজ করা, ভ্যাকসিন দেওয়া ইত্যাদি। তবে বিষয়টি সামনে আনাতে ভালো হয়েছে। আমরা একটু ভাবি কিছু করা যায় কিনা। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে দেখি যে আমরা কতটুকু কী করতে পারি।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, এপ্রিলের ০২, ২০২০
এসএইচএস/এফএম